স্টাফ রিপোর্টার : স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল। ইউএন উইমেনের সদর দপ্তরে সংস্থার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক অনিতা ভাটিয়া ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় স্পিকার বুধবার একথা বলেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, ‘ইউএন উইমেনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এর কার্যক্রমের সঙ্গে নানানভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণে নিবেদিত ইউএন উইমেনের কার্যক্রমের প্রতি তাই তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।’
অনিতা ভাটিয়া ইউএন উইমেন সদর দপ্তরে স্পিকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘নারীর সার্বিক উন্নয়নে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিশেষ আগ্রহ ও মনোযোগ সম্পর্কে ইউএন উইমেন সম্যক অবগত আছে।’
স্পিকার বলেন, ‘পার্লামেন্ট রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। রাষ্ট্র পরিচালনা এবং উন্নয়ন ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন সংসদের প্রধান কাজ। কিন্তু, সমকালীন বিশ্বে আইন প্রণয়নের বাইরেও পার্লামেন্টের ভূমিকা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণ, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতাসহ সকল প্রকার সহিংসতা নির্মূল, দারিদ্র্য বিমোচনসহ গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণে পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’ এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইউএন উইমেনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ সার্বিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের গৃহীত নানান পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে ইউএন উইমেন বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণে কাজ করতে আগ্রহী। সেই লক্ষ্যে সংসদ সদস্যগণের সমন্বয়ে নারী উন্নয়ন বিষয়ক সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ গঠন করতে ইউএন উইমেন কারিগরী সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
স্পিকার বাংলাদেশে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন ইস্যুতে সংসদ সদস্যগণের সম্পৃক্ততা জোরালো করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পার্লামেন্টারিয়ানস অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট-বিএপিপিডি গঠনের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘বিএপিপিডি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ নারী, শিশু ও যুবসমাজের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে শুধুমাত্র আইন প্রণয়ণেই সীমাবদ্ধ না থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে বিএপিপিডির আওতায় ‘বাল্যবিয়ে ও জেন্ডারভিক্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ’; ‘মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নিরাপদ প্রসব নিশ্চিতকরণ ও পরিবার পরিকল্পনা’; এবং ‘জনসংখ্যার বহুমাত্রিকতা ও যুব উন্নয়ন—এ তিনটি ইস্যুতে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। সূত্র : বাসস।
স্পিকার বলেন, ‘পারিবারিক কাজে নারীর এই অবদান সমগ্র বিশ্বেই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর এই অবদানকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। করোনা অতিমারিতেও নারীরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারীকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্বের সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে।’
বৈঠকে ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে চিফ অব রিসার্চ অ্যান্ড ডাটা পাপা সেক, প্রোগ্রাম এনালিস্ট-ইউরোপ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া আনুচকা দায়বাল, রিজিওনাল অ্যাডভাইজার ফর গভর্নেন্স, পিচ অ্যান্ড সিকিউরিটি সাবিন ফ্রেইজার, ডিরেক্টর-স্ট্রেটেজিক পার্টনারশিপ ডেনিয়েল সেইমর উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।
বৈঠকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব এমএ কামাল বিল্লাহ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ডেপুটি পিআর মনোয়ার হোসেন ও কাউন্সিলর শাহানারা মনিকা উপস্থিত ছিলেন।