Search
Close this search box.
বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্লুপ্রিন্ট

রক্ষিবাহিনী ছিল সিআইয়ের মাথাব্যথা

নৃশংসতম একুশে আগস্ট

ফিরোজ মান্না

রক্ষিবাহিনী ছিল সিআইএ এবং খন্দকার মোশতাক চক্রের একটি বড় মাথাব্যথা। কেননা রক্ষীবাহিনী ছিল বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত বাহিনী। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্লুপ্রিন্ট তৈরিতে চক্রান্তকারীরা রক্ষীবাহিনীর ওপর বিশেষভাবে নজর রেখে গেছে। নানাভাবে রক্ষীবাহিনীকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীকে রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে খ্যাপিয়ে তোলা কৌশলও হাতে নেয়া হয়। রক্ষীবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য নানামুখী চক্রান্ত করে। রক্ষীবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি কোর্সের প্রশিক্ষণে নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় সিআইএ। যে রক্ষীবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ১৫ আগস্টের আগে বাহিনীর প্রধানকে আমেরিকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এটা এখন পরিষ্কার। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। আর তৎক্ষণাৎ গুজব রটানো হয় রক্ষীবাহিনীর জন্য ট্যাঙ্ক জোগাড় করতে ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান বিদেশ যাচ্ছেন। ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ১২ আগস্ট রওনা হন। এ সময় রক্ষীবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ছিলেন আবুল হাসান খান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ক্ষমতা তার ছিল না। ফলে রক্ষীবাহিনীর অবস্থা তখন অনেকটা কান্ডারিহীন নৌকার মতো। এ অবস্থায় ওই বাহিনী যে ঘাতকদের ট্যাঙ্কবাহিনীর সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারবে না, এ বিষয় চক্রান্তকারীরা ছিল নিশ্চিত। না থাকুক সেই ট্যাঙ্কে কোনো গোলা। সেটা তো অত্যন্ত গোপনীয় ব্যাপার। রক্ষীদের সেটা জানার কথা নয়। তাই চক্রান্তকারীরা ধরেই নিয়েছিল, রক্ষীবাহিনীর শিবিরে ট্যাঙ্কের উপস্থিতিতে রক্ষীদের হাতের রাইফেল খসে পড়বে। ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে লন্ডনে জানলেন বঙ্গবন্ধু নিহত। তখন তার কিছুই করার ছিল না। সিআইএ যে রক্ষীবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ১৫ আগস্টের আগে বাহিনীর প্রধানকে আমেরিকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এটা এখন অত্যন্ত পরিষ্কার। অন্যদিকে ঢাকা প্রতিরোধ গড়ার মতো কোনো শক্তি রক্ষীবাহিনীর ছিল না। কারণ, তখনও রক্ষী সদস্যদের ঢাকায় রাখার কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। মিরপুরে জমি অধিগ্রহণ করে রক্ষীবাহিনীর স্থায়ী প্রধান কার্যালয় স্থাপন ও রক্ষী সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করার কাজ চলছিল।

রক্ষীবাহিনীর যা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল, নিজেদের কাছে রাখার কোনো সুবিধা না থাকায় সেসব অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছিল পিলখানায় বিডিআর অস্ত্রাগারে। রক্ষীবাহিনীর উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আনোয়ার-উল আলম এবং উপ-পরিচালক (অপারেশন) সারোয়ার হোসেন মোল্লা ভোরবেলা প্রধান কার্যালয়ে ফিরেই সিনিয়র ডেপুটি লিডার হাফিজ উদ্দীনকে রক্ষীবাহিনীর কয়েকজন সদস্যসহ একটা ট্রাক দিয়ে পিলখানায় পাঠান গোলাবারুদ নিয়ে আসতে। এর আগে আনোয়ার-উল আলম ও সারোয়ার হোসেন মোল্লার অনুরোধে রক্ষীবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবুল হাসান খান বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে ফোন করে জানান, পিলখানায় মজুদ রাখা রক্ষীবাহিনীর অস্ত্র-গোলাবারুদ দেওয়ার জন্য হাফিজ উদ্দিনকে পাঠানো হচ্ছে। অস্ত্র-গোলবারুদ হাফিজ উদ্দিনের কাছে দেয়ার জন্য খলিলুর রহমানকে তিনি অনুরোধ করেন। কিন্তু খলিলুর রহমান অস্ত্র দেওয়া তো দূরের কথা, তার নির্দেশে হাফিজ উদ্দিনকে পিলখানায় ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। গেট থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে রক্ষীবাহিনীর জন্য পরিস্থিতি ধোয়াটে হয়ে আসে। সত্যি কথা বলতে রক্ষীবাহিনীর সাংগঠনিক শক্তি তেমন ছিল না।

ফলে রক্ষীবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা কোনো দিক থেকেই আশার আলো দেখতে পাননি। এরই মধ্যে ফারুক রক্ষীবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে যায় এবং পরিচালকের কক্ষে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবুল হাসান খানকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলতে বলে। আবুল হাসান খান তাকে বলেন, সরকারি
আদেশ না এলে তিনি ছবি নামাতে পারবেন না। এ নিয়ে ফারুক আর কিছু না বলে চলে যায়। তবে যাওয়ার আগে বলে যায়, তাদের ট্যাঙ্কের নলগুলো রক্ষীবাহিনীর সদর দফতরের দিকে তাক করা আছে। কোনো মুভমেন্ট নেয়া হলে সদর দফতর গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। এভাবেই পরিস্থিতি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রক্ষীবাহিনীর উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আনোয়ার-উল আলম তার ‘রক্ষীবাহিনীর সত্য- মিথ্যা’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, ‘বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য শোকে মুহ্যমান জাতীয় নেতারা (রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত) জাতির এই কঠিন সময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ