স্টাফ রিপোর্টার – জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্ব চরমে পৌছেছে। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের স্ত্রী এবং দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ একপথে হাটছেন। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের ভাই, রওশন এরশাদের দেবর গত কাউন্সিলে দলটির নির্বাচিত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) হাটছেন আরেকপথে। একজন কাউন্সিল ডাকছেন। আরেকজন বলছেন কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার নেই। অন্তর্কোন্দল চলছে।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাপার সংসদ সদস্য রওশান এরশাদ কাউন্সিলের ডাক দিয়েছেন। রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। জি এম কাদের বলছেন, বেগম রওশন এমপি আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয়। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় কাউন্সিলের ডাক দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। দুজনের দুইরকম অবস্থানে কোন্দল স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে। দ্বন্দ্ব যে চরমে, তা বোঝাই যাচ্ছে।
রওশন এরশাদ বর্তমানে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন। রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিক একটি চিঠি গণমাধ্যমকে পাঠান। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আগামী ২৬ নভেম্বর জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিল আহ্বান করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
কাউন্সিল আহ্বানের চিঠিতে বলা হয়, আমি বেগম রওশন এরশাদ (এমপি) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির দশম কাউন্সিল আহ্বান করছি। এ কাউন্সিল ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর (শনিবার) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
রওশনের চিঠিতে বলা হয়, আমি দীর্ঘদিন ধরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এ সময় আমি লক্ষ করি, জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নিয়মাবলি এবং পার্টির মূল আদর্শ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বর্তমানে পার্টি গঠনতান্ত্রিক গৃহীত আদর্শ, নিয়ম ও নীতিমালা থেকে সরে গিয়ে ভ্রান্তপথে অগ্রসর হচ্ছে।
২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা সংরক্ষণ ও দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখেছে বলে দাবি করেন রওশন এরশাদ।
এ উপলক্ষে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠন করে নিজেকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেছেন। ওই কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়েছে মসীহকে। রওশন এরশাদ ঘোষিত কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত কমিটিতে আছেন – পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম।
তাহলে কী বর্তমান কাউন্সিল বিলুপ্ত? এমন প্রশ্ন উঠে। গোলাম মসীহ বলেন, বর্তমান কমিটি কাউন্সিল না হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে। আর কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি প্রস্তুতি নেবে।
জি এম কাদেরের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, দলের গঠনতন্ত্রের ধারা ১২ এবং উপধারা ১/২ অনুযায়ী কাউন্সিলের তারিখ, স্থান ও সময় প্রেসিডিয়াম কর্তৃক নির্ধারিত হবে। তা ছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যিনি প্রেসিডিয়াম এরও সভাপতি কর্তৃক কাউন্সিল অনুষ্ঠানের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এর বাইরে কারও কাউন্সিল আহ্বানের এখতিয়ার নেই। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি এবং অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ঘোষণার বিষয়ে অবগত নন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশায় জি এম কাদেরের দলের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ নিয়েও ছিল মতবিরোধ। এ নিয়ে সকাল বিকাল পরস্পরবিরোধী সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। পরে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে জি এম কাদের পুনরায় দলীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর দলে চাপা ক্ষোভ থাকলেও খুব একটা দৃশ্যমান হয়নি। তবে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক জি এম কাদেরকে শুরু থেকেই অবৈধ চেয়ারম্যান বলে আসছিলেন। এ নিয়ে এরশাদ পুত্র এরিককে দিয়ে তিনি (বিদিশা) দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলনও করিয়েছেন। বিদিশা জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন নামে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। সেখানে তিনি সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন। এর মধ্য দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্ন পূরণ করবেন বলেও গণমাধ্যমে দৃঢ় প্রত্যয় বক্ত করেছেন। তবে বিদিশার এমন প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টিতে আজ অবধি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এবার রওশন এরশাদ কাউন্সিলের ডাক দিলে দ্বন্দ্ব যে চরমে তা ভাল করেই সামনে এসে পড়ল।