স্টাফ রিপোর্টার – শৈত্যপ্রবাহ নেই। তবে সূর্যের দেখা নেই। আছে ঘন কুয়াশাও। তাতে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
পৌষের মাঝামাঝি এসে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রার ব্যবধান কমছে। বাড়ছে শীতের প্রকোপ। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এসেছে। এতে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আগামী কয়েকদিনে এমন পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আভাস নেই। আবহাওয়া অফিস বলছে, শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের অনুভূতি বাড়ার কারণ হচ্ছে সূর্য দেখা না যাওয়া।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টানা দ্বিতীয় দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। বুধবার সকাল নয়টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস থেকে জানা যায়, তিন দিন ধরেই উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে অবস্থান করছে। সে হিসাবে শ্রীমঙ্গলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামী কয়েক দিন এ ধরনের আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো: ওমর ফারুক জানিয়েছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আভাস নেই। এরপর গিয়ে ঘন কুয়াশা কাটতে পারে। তাতে করে কুয়াশা কাটবে। সূর্যের দেখা মিলবে। তিনি বলেন, দেশের মধ্যভাগ, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঘন কুয়াশা পড়ছে। এ কারণে কোথাও কোথাও প্রায় সারা দিনই সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে দিনের তাপমাত্রা ব্যাপক হারে নেমে যাচ্ছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমেছে। এতে শীতের অনুভূতি রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে দিনেও বেড়েছে।
ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য নেমে এসেছে ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তিনি আরো জানান, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেলে শীতের অনুভূতি বেড়ে যায়। ঈশ্বরদীতে এক দিনের ব্যবধানে দিনের তাপমাত্রা কমেছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে এক দিনের ব্যবধানে দিনের তাপমাত্রা কমেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকাতেও কমেছে ৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে ৫ দশমিক ২ ডিগ্রিতে, আর ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহীতে তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে রাজশাহী মহানগরী ও জেলার প্রত্যন্ত এলাকা। কুয়াশায় মৃদু বৃষ্টি ঝরেছে। রাত যত গভীর হয় কুয়াশা ততই বাড়তে থাকে। ভোর ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পঞ্চগড় শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় আছন্ন হয়ে পড়েছে। কোথাও সূর্যের দেখা মিলছে না। ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। সোমবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত একটানা কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। পড়ছে ঘন কুয়াশা বৃষ্টি।
নীলফামারীতে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়েছে। ঘন কুয়াশার সাথে কনকনে ঠাণ্ডা কাবু করেছে জেলার খেটে খাওয়া মানুষজনকে। নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি জানুয়ারিতে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। জানুয়ারিতে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া আছে। আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। তবে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা বেশ কম।