স্টাফ রিপোর্টার – রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে রাষ্ট্রপতিও হয়ে গেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন। কেউ আঁচও করতে পারেননি, সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সাহাবুদ্দিনকেই বেছে নিয়েছেন। সাহাবুদ্দিন কি জানতেন তিনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন? এ নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের মধ্যে সেদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন নতুন রাষ্ট্রপ্রধান। জানালেন প্রধানমন্ত্রী তাকেও কিছু আঁচ করতে দেননি। রবিবার সকালে গণভবনে ডেকে নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সামনে প্রধানমন্ত্রী যখন আস্থার কথা জানালেন, নিজের নাম শুনে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেজেট জারির দিন সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন মো. সাহাবুদ্দিন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় বঙ্গভবনে থাকাকালে দায়িত্ব সম্পর্কে নিজের ভাবনা এবং দেশবাসীর কাছে প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
নতুন রাষ্ট্রপতি বলেন, রবিবার রাতে বলা হয় যে গণভবন যেতে হবে। এর আগেও গণভবনে গিয়েছি। তখন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে যেতাম কমিটির সদস্য হিসেবে। সে রকম কিছুই একটা মনে করেছিলাম। যাই হোক, আমি গেলাম। যাওয়ার পরে দেখি যে সিনিয়র লিডাররা, মানে আমাদের পার্টির সেক্রেটারি থেকে শুরু করে তথ্যমন্ত্রীসহ অন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত। তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একটি ফর্ম দেন সেক্রেটারির কাছে এবং ওই ফর্মের প্রথম অংশে প্রস্তাবক এবং পরের অংশে সমর্থক। তো এই ফর্মের একটি অংশ পূরণ করলেন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের এবং আরেকটি আমাদের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আমি একটু দূরে বসে ছিলাম। তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমি মনে করেছি, বঙ্গবন্ধুর পরিবার মনে করেছে যে, যারা তৃণমূল থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে পরতে পরতে রাজনীতি করেছে, তাদের আদর্শে স্থির থেকেছে, ’৭৫-এর মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার পরে, বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের হত্যার পরে যারা আওয়ামী লিগ বা অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোর হাল শক্ত হাতে ধরেছিলেন-এই ধরনের ক্যান্ডিডেট খুঁজছিলাম। আমি দীর্ঘদিন এটা ভেবেছি। এরপর তিনি আমার নাম নিয়ে বললেন, তাকে আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দিতে চাই। সবাই তখন একবাক্যে তা সমর্থন দেন এবং প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাইন করতে বলেন। এর আগে আমি কিছু আঁচ করতে পারিনি এবং আঁচ করার সুযোগও তিনি দেননি। আমিও তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।
সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, টু বি ভেরি ফ্র্যাঙ্ক, আমি এটা ভাবতে পারিনি। আমাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি নিয়োগ দেবেন, সে ধরনের ধারণা তো ছিল না। কোন দাঁড়িপাল্লার মাপে আমি উতরে গেলাম এই পদের জন্য, আমি নিজেও বুঝিনি।
নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভূমিকা কী হবে-জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। আমি আগেই বলেছি সরকারের যেটুকু তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার কথা সরকার দেবে-এটা নেত্রী বলেছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংবিধানে বিধিবদ্ধ নিয়মে একটা খুবই সীমিত সুযোগ সেখানে আছে। অনেক কাজই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করে থাকেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, নির্বাচনের সময় কোনো ক্রাইসিস হলো। ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে এগিয়ে আসতে হয়। তখন রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতাবলে সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কাজেই রাষ্ট্রপতির যে কোনো দায়িত্ব নেই, তা নয়। রাষ্ট্রপতি একটি ঐক্যের প্রতীক এবং সে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালন করেন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন যেন না হয়, প্রশাসন যেন তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করে–সেটা রাষ্ট্রপতি তখন দেখেন। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আমি মনে করি, উই উইল হ্যাভ টু অ্যাবাইট দ্য কনস্টিটিউশন।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা গণতন্ত্র মানেন। আমাদের সংবিধানের ৭ ধারায় বলা আছে, সরকার জনগণের। জনগণ সরকারের মালিক। জনগণই সরকারের মালিক। তাহলে কী করতে হবে? জনগণের রায় নিয়েই তো ক্ষমতায় আসতে হবে। একটি মাত্র জিনিস নিশ্চিত করতে হবে, সেটি হলো সংবিধান অনুসারে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন, অধিক সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতির মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন। এটাই আমাদের দায়িত্ব এবং জনগণের এটা বুঝতে হবে। নির্বাচনে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো সরকার গঠন করতে হবে। যারা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তাদেরও উচিত হবে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বলা যে, আমরা এর আগেও ক্ষমতায় ছিলাম এবং আমরা জনগণের জন্য কী কী করেছি। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারা জিতবে। আমি আহ্বান জানাব সবাইকে আপনারা যে দলই সাপোর্ট করে থাকেন না কেন, আপনারা সবাই কিন্তু এই দেশের জনগণ। সবারই সমান অধিকার আছে।