স্টাফ রিপোর্টার – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আমার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেছি যে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো করুণা চায় না, ন্যায্য পাওনা চায়। কাতারে পাঁচদিনের সফর শেষে সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে জানান, এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন কোনো চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে। কেন চাপ দিল সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। জনগণের স্বার্থে কাজ করি। জনগণ যা বলবে তাই করব। বিদেশি চাপ আমাকে কিছুই করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে স্বল্পোন্নত দেশসমূহ সংক্রান্ত ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে আমি ৪ থেকে ৮ মার্চ ২০২৩ দোহা সফর করি।
তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ফ্রম পটেনশিয়াল টু প্রসপারিটি। এর আগে ২০০১ সালে আমি ব্রাসেলসে তৃতীয় এলডিসি সম্মেলন এবং ২০১১ সালে ইস্তাম্বুলে চতুর্থ এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। জাতিসংঘ এলডিসি সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এটাই সম্ভবত বাংলাদেশের শেষ অংশগ্রহণ। কারণ, ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, এই সম্মেলনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আমি বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরি। একইসঙ্গে আমি ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আমাদের বিভিন্ন দাবি ও প্রত্যাশার কথা উত্থাপন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ মার্চ আমি কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এলডিসি-৫ সম্মেলনের ওপেনিং প্লেনারি মিটিংয়ে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিই। এই অনুষ্ঠানে আমি ছাড়াও কাতারের আমির, জাতিসংঘের মহাসচিব, ৭৭তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং এলডিসি গ্রুপের বর্তমান চেয়ার মালাউই-এর রাষ্ট্রপতি বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, আমি আমার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেছি যে স্বল্পোন্নত দেশগুলো করুণা বা দাক্ষিণ্য চায় না, বরং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের ন্যায্য পাওনা চায়। আমি কোভিড অতিমারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য গৃহীত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের বিশেষ প্রয়োজনের কথা তুলে ধরি। এ ছাড়া, বাংলাদেশসহ উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর উন্নয়ন অর্জনকে গতিশীল রাখতে বর্ধিত সময়ের জন্য এলডিসিদের জন্য প্রযোজ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি কোভিড অভিমারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য গৃহীত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানাই। প্রধানমন্ত্রী ৫ মার্চ কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এলডিসি-৫ সম্মেলনের ওপেনিং প্লিনারি মিটিংয়ে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি ছাড়াও কাতারের আমির, জাতিসংঘের মহাসচিব, ৭৭তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং এলডিসি গ্রুপের বর্তমান চেয়ার মালাউই-এর রাষ্ট্রপতি বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন হলো পুরস্কার স্বরূপ, এটি কোনো শাস্তি নয়।
৬ই মার্চ সকালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিজনেস সামিটে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠানে কাভারের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানাই। দুদেশের সরকারের মধ্যে একটি যৌথ ব্যবসা ও বিনিয়োগ কমিটি এবং দু’দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের সমন্বয়ে একটি যৌথ বিজনেস ফোরাম গঠনেরও প্রস্তাব করি। এছাড়া, আমি নবায়ণযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক গ্যাস অনুসন্ধান, জ্বালানি সঞ্চালন ব্যবস্থা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পর্যটন, স্টার্ট আপসহ বিভিন্ন খাতে কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।
সরকারপ্রধান জানান, একইদিন দুপুরে তিনি বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল কর্তৃক আয়োজিত সাইড ইভেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ইন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন এলডিসিস ফর স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেশন সোসাইলিটিস—এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই ইভেন্টে মিশর, সিঙ্গাপুর, এস্তোনিয়ার মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা, ওএসিডি, আইটিইউ, ডব্লিউআইপিও এবং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ও এর বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সময় তাঁরা আমাদের সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে অর্জিত সফলতার প্রশংসা করেন এবং আমাদের রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয়, সেটা সরকার প্রমাণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করে। বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় থাকার জন্য
অব্যাহত রয়েছে উন্নয়নের ধারা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়, সেটা প্রমাণ করেছি। এ জন্য ধৈর্য প্রয়োজন।
বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় সবাই বাংলাদেশ মানে বন্যা, খরা, দুর্যোগ এসব মনে করতো। এখন আর সেসব মনে করে না। এখন বাংলাদেশকে বিশ্ব রোল মডেল মনে করে। আর এটি সম্ভব হয়েছে কেবলই একটানা ক্ষমতায় একটি গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রয়েছে বলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কখনও হতাশ হয়ে চলি না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলি সবসময়। হারানোর কিছু নেই। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন হয়, সেটা আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের জন্য দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। জনগণ আমাদের মূল শক্তি।
কেউ কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কিন্তু তারা সেটা করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় তা দরকার। সরকার নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণ প্রয়োগ করবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের কাছে যে যে কথা দিয়েছি, সেসব কথা রাখতে সক্ষম হয়েছি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, সফরে করোনা অতিমারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগেুলোর জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছি।
মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের কাছে যে যে কথা দিয়েছি, সেসব কথা রাখতে সক্ষম হয়েছি – বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও বললেন, রমজান হচ্ছে কৃচ্ছসাধনের। আসন্ন রোজায় সেটা করতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সারাবিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি চলছে। আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে। যত অনাবাদি জমি আছে চাষাবাদ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন হয়, সেটা আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের জন্য দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। জনগণ আমাদের মূল শক্তি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় তা দরকার। সরকার নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণ প্রয়োগ করবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা— আওয়ামী লীগ সরকার-ই আবার ক্ষমতায় আসুক। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেটা স্থানীয় সরকার ও উপনির্বাচনে প্রমাণ করেছে সরকার।
আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন, তিনি পোড় খাওয়া লোক। দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে উনার। তার নেতৃত্বে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন আর ভোট কারচুপির সুযোগ নেই। ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করারও কোনো সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করেছি। এনআইডি যুক্ত করা হয়েছে। আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট করতে চেয়েছিলাম, অনেকে আপত্তি করেছেন। নির্বাচন কমিশন যতটা সম্ভব ইভিএম ব্যবহার করবে। ভোটাররা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট দেবেন।
তিনি বলেন, জনগণ স্বাধীনভাবে যাকে খুশি ভোট দেবে। আমরাই দেশে ভাত ও ভোটের আন্দোলন করেছি। জনগণকে দেওয়া কথা আমরা রেখেছি। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ না এলে আমরা আরও এগিয়ে যেতাম। তবে আমি হতাশ নই, আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলি। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
রোজার মাস সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা আছে জানিয়ে সবাইকে বেশি কিনে মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, ‘জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুদ করি। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুদ করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে। আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুদ করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন। আর নিজেদের ঘরে উৎপাদন করেন। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন, আমাদের তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সাথে কিছু আছে, মজুদকারী, তারা মজুদ করে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের কিছু কিছু বিরোধী দল তো আছেই, সব জয়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কথায় কথায় কোনো একটা কথা ছড়ালো, মিথ্যা একটা ধুঁয়া তুললো।
সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, এগুলো তো হবেই, এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি।
রমজান মাসে চালের কোনো অভাব হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমাদের মজুদ আছে। এক কোটি পরিবারকে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ডাল, তেল, চিনি এগুলো তারা কিনতে পারছে। এখন ছোলাও তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আর তার থেকে আরেকটু কম আয়ের যারা, প্রথমে ৫০ লক্ষ ধরেছিলাম, প্রয়োজনে এক কোটি লোক যদি পাওয়া যায়, তাদেরকেও আমরা ওই কার্ডের মাধ্যমে এই পণ্যগুলো, মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে কিনতে পারবে। আর যারা একেবারেই কর্মক্ষম না, মানে কাজ করতে পারনে না, আমরা তো ভিজিডি ভিজিএফের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল দিয়ে দিচ্ছি। এভাবে কোনো স্তরের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি। সবাই সহযোগিতা করলে বাংলাদেশে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে আশ্বস্ত করেন সরকারপ্রধান।
নোবেলজয়ীর জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাতি করে এনে বিজ্ঞাপন কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, আমাদের শ্রম আদালত আছে, আয়কর বিভাগ আছে, তারা তাদের কাজ করছে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমি কী করতে পারি।
পদ্মা সেতু করে ফেলেছি- এ বিষয়ে আমি আর কী বলব।- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ৪০ বিশ্বনেতার নামে একটি বিজ্ঞাপন আকারে খোলা চিঠি প্রকাশের ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এর সমালোচনা করেছেন। তারা এটিকে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নতুন কৌশল বলে গণ্য করছেন। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করা হয় খোলা চিঠিতে। গত ৭ মার্চ প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপনের ওপর ভিত্তি করে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশ হয়েছে। তবে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহৃত বিজ্ঞাপনটিতে ড. ইউনূস কী ধরনের অন্যায় আচরণের শিকার হয়েছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকার অভিযোগ উঠেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই দেশে একটা আইন করে নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে। সেখানে সবার মতামত নেওয়া হয়েছে। তারা তাদের মতো করে নির্বাচন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট করতে চেয়েছিল। কিন্তু এটা আধুনিক প্রযুক্তি হলেও অনেকেই আপত্তি জানিয়েছেন। তাই তারা তাদের মতো করে এখন ভোট আয়োজন করবেন। এখন তো স্বচ্ছ ব্যালট বক্স আছে। এখন তো ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা আছে। তাই কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।
উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা বা জিসিসি ভুক্ত দেশসমূহ, ইরাক, জর্ডান, লেবানন ও তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত আঞ্চলিক দৃপ্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্মেলনে আমি জাতির পিতার অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নতুনতর দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিই। এসব দেশের সঙ্গে রপ্তানি প্রসার, বিনিয়োগ আকর্ষণ, জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রবাসীদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষা, প্রযুক্তি সহযোগিতাসহ অর্থনৈতিক কূটনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা প্রদান করি। একই সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কনস্যুলার সেবার পরিসর বৃদ্ধি করার পরামর্শ নিই।
৭ই মার্চ সকালে এলডিসি সম্মেলনের Enhancing the Participation of Least Developed Countries (LDCs) in International Trade & Regional Integration শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে বুকড়ির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন বলে জানান।
জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ই মার্চ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে কাতার বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে দেশটির আমির আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা জানান, ৬ মার্চ কাতার ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন আমিরের মাতা শেখা মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। শেখা মোজা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এডুকেশন অ্যাবোভ অল ফাউন্ডেশন এর আওতায় বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরে ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ১২.৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের পক্ষে এই সমঝোতা স্মারকটি সাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামগ্রিকভাবে, জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি। এ সম্মেলনে আমরা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পথে এলডিসি থেকে উত্তরণ ও এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তুতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেছি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকেও আমরা দোহা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন এ আমাদের জন্য প্রযোজ্য বিষয়গুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে অঙ্গীকার করেছি। আমরা আশা করব, এই প্রোগ্রাম অব অ্যাকশনে জাতিসংঘের আওতায় সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি স্থাপনের ব্যাপারে যে উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে এগিয়ে যাবে।