স্টাফ রিপোর্টার – চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মঙ্গলবার খাদ্য ভবনে মতবিনিময় সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া কেউ খাদ্য পণ্যের ব্যবসা করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
মিল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শুধু মুনাফা আর অর্থই কি সব? আপনারাও মানুষ, আপনাদেরও মরতে হবে একদিন। তাই আসুন মানুষের কল্যাণে কাজ করি।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সারা বছরই চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে। এজন্য রমজান মাসে শপথ নিতে হবে, বাকি ১১ মাস নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখার। দেশের উৎপাদন দিয়েই স্বাভাবিক আছে চালের বাজার বলে জানান তিনি।
রোজার মাসে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মনিটরিং জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। একই সঙ্গে কোথায় কোথায় অবৈধ মজুদ আছে, সেটিও মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সভায় মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের কিছু নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের (ডিসি ফুড) সঙ্গে মিটিং করবেন। ডিসিরা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নিয়ে মিটিং করবেন। পরিষ্কার মনিটরিং রাখবেন। কোথায় অবৈধ মজুদ আছে সেটি দেখতে হবে। লাইসেন্স ছাড়াও মানুষ মজুদ করে; কিন্তু তাদের লাইসেন্সের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে মজুদ করতে হবে। সক্ষমতার বাইরে হলে সেটা অবৈধ মজুদ।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমদানি করলেই যে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে তা আমি বিশ্বাস করি না। তার থেকে অনেক বেশি আমাদের দেশে মজুদ থেকে যায়। আমাদের যদি সৎ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে ১০ লাখ টন আমদানির জন্য ফরেন কারেন্সি নষ্ট করার কোনো দরকার ছিল না। তবে রাস্তা ওপেন থাকলে চালের দাম কম থাকে। আমরা ১০ লাখ টন আমদানি করলাম, আমি মনে করি আরও ২০-২৩ লাখ মেট্রিক টন মজুদ আছে। আমরা কৃত্রিম সংকট করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলি। এটা কোনোভাবে বরদাস্ত করা যাবে না।
জানা গেছে, অনিয়ন্ত্রিত আমদানির ফলে বাজারে ধস নেমেছে। ধস যদি নামতো কেজিতে ৫-৭ টাকা কমে যেত। সেটা কিন্তু দৃশ্যমান না। বাড়ার সময় লাফিয়ে ৫ টাকা বাড়েনি, কমার সময় কিন্তু ১ টাকা করে কমে; আবার কমে না। এটাই বাস্তবতা।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারিখাতে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিকটন। আমরা ৫ লাখ মেট্রিকটন চাল ও ৩ লাখ মেট্রিক টন ধানের টার্গেট করেছিলাম। সেই ৩ লাখের জায়গায় মাত্র ৪ হাজার প্রকিউরমেন্ট হয়েছে। চালও ৫ লাখ মেট্রিকটন প্রকিউরমেন্ট করতে পারিনি। এই ঘাটতি পূরণে আমদানি করেই পূরণ করতে হয়েছে। না হলে কিন্তু হাহাকার হতো, হাহাকার সৃষ্টি করা হতো।
ওপেন থাকলেও আমদানি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা অনুমতি দিলে করতে পারবে, না দিলে করতে পারবে না। ডলারের বৃদ্ধির কারণে ৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন এবং আগের ৬ লাখ মেট্রিকটনসহ মোট ১০ লাখ মেট্রিকটন রয়েছে। এ পরিমাণ চাল দিয়েও হিউম্যান ক্রাইসিস অনেক বেশি। অনেকে বলছে দুর্ভিক্ষ হবে। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীদের বলতে চাই প্রচুর চাল আছে, মজুদ করার দরকার নেই।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকারসহ ব্যবসায়ী নেতা ও খাদ্য কর্মকর্তারা।