Search
Close this search box.
ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

বঙ্গবাজার পুড়ে ছাই

বঙ্গবাজার পুড়ে ছাই

মিথুন আশরাফ – ঈদের বাজার মাত্র জমতে শুরু করে। ব্যবসায়ীদের ভালোভাবে ব্যবসা করা মাত্র শুরু হয়। আনন্দে যেখানে ব্যবসা করার কথা, ঈদ করার কথা, সেখানে বঙ্গবাজার ব্যবসায়ীরা কষ্টে পুড়ছেন। সব শেষ হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশে কাপড়ের অন্যতম প্রধান মার্কেট রাজধানীর বঙ্গবাজার যে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। বঙ্গবাজারের সঙ্গে মহানগর, আদর্শ ও গুলিস্তান মার্কেট আগুনে পুড়ে গেছে। অ্যানেক্স মার্কেটেও আগুন লেগেছে। বঙ্গবাজারের টিনশেড দোতলা মার্কেট পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়া হতাহতের কোনো খবরও জানা যায়নি। পরে তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো হবে।

সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ৬টা ১২ মিনিটে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুনের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় যোগ দেয় সেনাবাহিনীর দুই শতাধিক কর্মী, নৌ, বিজিবি, পুলিশ, ওয়াসা। উদ্ধারকাজে যোগ দেয় র‌্যাবের ২৩ টি টহল ইউনিট। বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার যোগ দেয় উদ্ধার সহায়তায়। হেলিকপ্টার দিয়ে হাতিরঝিল থেকে পানি আনা হয়। পানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আশেপাশের জলাশয় থেকেও হেলিকপ্টার দিয়ে পানি নেয়া হয়। এছাড়া পাইপ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের পুকুর থেকে পানি নেয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ভয়াবহ আগুন বেলা ১২:৩৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রনে আসার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় পানির জন্য ফায়ার সার্ভিস কে বেগ পেতে হয়। দীর্ঘ আট ঘন্টার সমন্বিত প্রচেষ্টায় অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পাশের মহানগর মার্কেট ও এনেক্স মার্কেট। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের চার তলা ব্যারাক ভবন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বেলা সাড়ে বারোটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে পুরোপুরি আগুন নির্বাপন করতে আরো ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে জানতে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুরোপুরি তদন্তের পরই আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলা যাবে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের আট জন কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, ২০১৯ সালের ২রা এপ্রিল বঙ্গবাজারের এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে। তখন ভবনে একটি ব্যানারও টাঙিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর পর ১০ বার নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ব্যবসা চলছিল বলে জানান তিনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হওয়ার জন্য উৎসুক জনতার ভীড়, পানির সংকট এবং বাতাসকে দায়ী করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মি. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, এক জায়গায় আগুন লাগাই। আরেক জায়গায় আগুন লেগে যায়।

মহাপরিচালক জানান, আগুন লাগার পর প্রথমে একটি মোবাইল নম্বর থেকে এবং পরে ৯৯৯ থেকে খবর পান তারা। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেখানে প্রায় চার হাজারের মতো দোকান আছে। পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধান ও পরিচিত মার্কেটগুলোর একটি বঙ্গবাজার। গত মাসের সাতই মার্চ ঢাকার সিদ্দিক বাজারে একটি বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছিল। এর আগেও ঢাকার বঙ্গবাজারে একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ