বাসস – রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করে তার সর্বোচ্চ সুফল ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বঙ্গভবনের ক্যাবিনেট হলে ‘বঙ্গভবন তোশাখানা জাদুঘরের ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি (ভিআর) কার্যক্রম উদ্বোধন’ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি হামিদ এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যতম আনুষঙ্গ হিসেবে ভিআরকে বিবেচনা করা হয়। ভবিষ্যৎ জীবনে ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ তার শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে চিন্তা ও মনোজগতের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে অসীম পর্যায়ে কাজে লাগাতে পারবে।’
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিসপ্লের মধ্যে বিদ্যমান পরিবেশের প্রতিরূপ তৈরি করে এবং মানুষের মনোজগতে এক ধরনের কৃত্রিম বাস্তবতার অনুভূতি দেয়।
আবদুল হামিদ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চত করতে হলে তরুণ প্রজন্মকে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
আমাদের তরুণ প্রজন্ম খুবই মেধা সম্পন্ন এবং উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা পেলে তারা যে কোনো পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম, তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, প্রযুক্তি এখন আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে সমাজ জীবনকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ ঘরে বসেও সারা পৃথিবী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা, এক প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রান্তে লেখাপড়া করতে পারার মত অত্যন্ত সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিটিকে এখনই আমাদের দেশে সঠিকভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে তথ্যপ্রযুক্তি হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন হাতিয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন ভিআরসহ অন্যান্য প্রযুক্তির সঠিক বিকাশের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষা, মৌলিক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিসহ নানা সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশে প্রযুক্তির সঠিক বিকাশ সুনিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও এর সঠিক ব্যবহারের উপরেই নির্ভর করবে আমরা দেশকে কতটা এগিয়ে নিতে পারবো।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, প্রযুক্তিকে যথাযথ কাজে লাগানোর পাশাপাশি এর অপব্যবহার রোধ করার উপরই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নের সুফল নির্ভর করে এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা পর্য়ায়ে প্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণা ব্যপ্তি বাড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অংশীজনদের সাথে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার ও তাগিদ দেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ সময়। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, বঙ্গভবনের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন।
শতাব্দীকালের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন বঙ্গভবন। তোষাখানা জাদুঘর বঙ্গভবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গভবনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণ এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বঙ্গভবন তোষাখানা জাদুঘরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীগণ তোষাখানা জাদুঘর পরিদর্শনকালে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে সক্ষম হবেন।
সার্বিক সংস্কার শেষে গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ সালে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তোষাখানা জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।
পরবর্তীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এর উদ্যোগে এবং ম্যাজিক সফটওয়্যার লি. এর প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় জাদুঘরটিকে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি টেকনোলজি এর মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ভার্চুয়াল ট্যুরের মাধ্যমে দেশী বিদেশী দর্শনার্থীগণ চারদিক ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখার বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।