Search
Close this search box.

কতটি দল অংশ নিল সেটা বড় কথা নয়, নির্বাচন হওয়া দরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ – সিইসি

কতটি দল অংশ নিল সেটা বড় কথা নয়, নির্বাচন হওয়া দরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ - সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার – প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মন্তব্য করেছেন, নির্বাচনে সরকারকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইন রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে। নির্বাচন হওয়া দরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ। সেখানে কতটি দল অংশ নিল সেটা বড় কথা নয়। কত মানুষ ভোট দিতে পারল সেটাই বড় কথা। আমার বিশ্বাস, এ কমিশন নেতৃত্ব দিতে পারবে। নির্বাচন ভবনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।

সিইসি বলেন, ভোটাররা নির্ভয়ে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন কি না, সে চেষ্টাটাই আমরা মূলত করব। এক্ষেত্রে কিন্তু নির্বাচনকালীন যে রাজনৈতিক সরকার এবং যে আমলাতান্ত্রিক সরকার থাকবে; আমলাতান্ত্রিক সরকার বলতে বোঝাচ্ছি মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সরকার বলতে উপমন্ত্রী থেকে ওপর পর্যন্ত, দুটো মিলেই কিন্তু পরিপূর্ণ সরকার। আমরা রাজনৈতিক সরকার ও আমলাতান্ত্রিক সরকারকে নিয়ন্ত্রণ আইনে আমাদের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেটি প্রয়োগের চেষ্টা করব।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দলটির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, আমরা আশ্বাস দিয়েছি, সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব আমরা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব। আবার এটাও বলেছি, নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আয়োজনের একটা বড় দায়িত্ব আছে, একই সঙ্গে আপনারা যারা দলীয় নেতৃবৃন্দ আছেন, কর্মী আছেন; তাদেরও দায়িত্ব আছে সার্বিকভাবে নির্বাচনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। খুব প্রতিকূল পরিবেশ যদি বিরাজ করে তাহলে আমাদের জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সরকারের সদিচ্ছা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে কিন্তু অনেকটা। এদিকে বৈঠকের ব্যাপারে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কমিশনকে বলেছি বাসাইল পৌরসভায় নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও আমরা জাতীয় নির্বাচনেও যাবো। কমিশনের আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি।

আসন্ন পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। এ উপলক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকেলে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি কর্মকর্তারা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় নির্বাচন ভবনের ৫২০ নম্বর কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পাঁচ নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব ও কর্মকর্তরা উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। সর্বশেষ রংপুর সিটি নির্বাচনের আদলে সাজানো হচ্ছে পাঁচ সিটি ভোটের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ছক। তবে পাঁচ সিটির গুরুত্ব বিবেচনায় কোন সিটিতে একটু বেশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান সই করা একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বর্ডার গার্ড, র্যাব, আনসার, ডিজিএফআই ও এনএসআই মহাপরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুসারে, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়েছে, বাছাই ১৮ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের শেষ সময় ২১ মে। আপিল কর্তৃপক্ষের আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ২৪ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে ও ভোট ১২ জুন। এ দুই সিটি নির্বাচনে ২৬ মে থেকে প্রচার চালানো যাবে।

আর রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে ও বাছাই ২৫ মে। আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল দায়েরের শেষ সময় ২৮ মে। আর আপিল কর্তৃপক্ষের আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ৩১ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন, প্রতীক বরাদ্দ ২ জুন ও ভোট ২১ জুন। এ দুই সিটি ভোটে প্রচার চালানো যাবে ২ জুন থেকে। ভোট উপলক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। এসব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে এবং ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরাও থাকবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ হবে। এসব সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে ভোট হচ্ছে। বিএনপি বিহীন এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তিন সিটিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধে ক্ষতবিক্ষত ক্ষমতাসীন দলটি অনেকটাই বিদ্রোহের দাবানলে পুড়ছে। অন্যদিকে, বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়- এই স্লোগান দিয়ে সিটির ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। কিন্তু কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাউন্সিলর পদে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা। মাঠ পর্যায়ের ওপর কেন্দ্রের এই শিথিলতা বিএনপিকে অনেকটাই অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া, মেয়র পদে প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে ভোট করছে জামায়াতে ইসলামীরও বেশ কয়েকজন মাঠের নেতা। এর বাইরে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে অংশ নিচ্ছে এই নির্বাচনে। ইতোমধ্যে দুই দলই তাদের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে।

তবে কে অংশ নিয়েছে আর কে নেয়নি তা ছাপিয়ে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচন কমিশন, মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রাজনৈতিক দল, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের মতে, সিটি নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের আচরণ, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, ভোটারদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতিসহ নানা ঘটনার ওপর নজর থাকবে সবার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ