সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন বসছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের আয়োজনে। সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপ্রধানের জাকার্তায় যাওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটি তার দ্বিতীয় বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে।
ঢাকা ও জাকার্তার কূটনৈতিক সূত্রগুলো রাষ্ট্রপতির জাকার্তায় পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে। ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি এবার ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর জাকার্তায় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু কাছাকাছি সময়ে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কারণে জাকার্তায় যাচ্ছেন না সরকারপ্রধান। সেজন্য আসিয়ানের প্রতি ঢাকার সমর্থন ও সম্পর্ক বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জাকার্তার একটি সূত্র জানায়, পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে জাকার্তায় যাবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে জাকার্তার উদ্দেশে রওনা করবেন। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ানের বিশেষ অতিথি হিসেবে স্টেটমেন্ট দেবেন। সম্মেলনের ফাঁকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ছাড়াও কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠক নিয়ে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাকার্তার বাংলাদেশ মিশন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
রাষ্ট্রপ্রধানের জাকার্তা সফর নিয়ে ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, রাষ্ট্রপতি ইন্দোনেশিয়া সফরে যাবেন। একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে জাকার্তায় পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, তিনি যেতে পারবেন না, সেজন্য রাষ্ট্রপতি যাবেন। আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে কমিটমেন্ট এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা, তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি যাচ্ছেন। আর জাকার্তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ওআইসির সদস্য দেশ। তারা আসিয়ানের চেয়ার, বড় অর্থনীতির দেশ।
এ কূটনীতিক জানান, রাষ্ট্রপতি আসিয়ান চেয়ারের স্পেশাল গেস্ট হিসেবে সম্মেলনে স্টেটমেন্ট দেবেন। এর বাইরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কিছু দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে। সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে।
পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে বাংলাদেশের যোগদান প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসিয়ান আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে আমাদের উপস্থিতি উপকৃত করবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আসিয়ান জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে, রাষ্ট্রপতির সেখানে গেলে আমরা এ সমস্যার কথা তুলে ধরার সুযোগ পাব। আর আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার বিষয়টিও তোলার সুযোগ থাকবে। তাছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান কোনো সম্মেলনে গেলে সাইডলাইনে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা হয়, বৈঠকের সুযোগ থাকে, যেটা সম্পর্ক উন্নয়নে বেশ কাজে দেয়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ইন্দোনেশিয়ায় পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যোগ দেওয়ার জন্য গত জুলাই মাসে জাকার্তা থেকে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিকপত্র পাঠানো হয়। পরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বঙ্গবন্ধু কন্যাকে চলতি মাসে (আগস্ট) আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাঠান।
জানা গেছে, জার্কাতায় পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গীদের তালিকায় থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। জাকার্তায় সম্মেলনের ফাঁকে ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থা ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওরা) ও আসিয়ানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ আইওরার চেয়ার হওয়ায় ড. মোমেন আসিয়ানের সঙ্গে সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, জাকার্তায় পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, যুক্তরাষ্ট্রেরে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এছাড়া সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছাড়াও বিশ্বনেতা ও বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে প্রথম পূর্ব এশিয়া সম্মেলন বসে। সেবার ১৬টি দেশ ওই সম্মেলনে যোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে প্রথমবার যোগদান করে। সবশেষ গত বছর কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে ১৭তম পূর্ব এশিয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।