পথে প্রান্তরে ডেস্ক: শুরু হলো নতুন আরবি বছর। আরবি বছরের প্রথম মাসটি হচ্ছে মহররম। সারা বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাসটি হচ্ছে রমজান। কিন্তু তবুও কেন মহররমকে আরবি বছরের প্রথম মাস গননা করা হয়? আর এই মহররম মাসের ফজিলতই বা কতটুকু?
মহররম হচ্ছে ইসলামের ৪টি পবিত্র মাসের ১টি। রাসুল (স) বলেন, “রোজা রাখার জন্য রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে আল্লহ’র মাস মহররম” [সহীহ মুসলিম] এই হাদিস থেকে দেখা যায় রাসুল (স) এই মাসটিকে ‘আল্লাহর মাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বছরের আর কোন মাসকে এমনবভাবে আল্লাহর মাস হিসেবে বলা হয়নি। তাই বলা যায় যে রাসুল (স)-ও মহররম মাসকে বছরের সবচেয়ে বেশি সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
অনেক সাহাবার মতে, ৪টি সম্মানিত মাসের মধ্যে মহররম সবার উপরে থাকবে। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা উচিৎ, তা হচ্ছে, বছরের সবচেয়ে সম্মানিত মাস রমজান। কারণ এ মাসেই কোরআন নাজিল হয়। কিন্তু রমজান মাস ৪টি পবিত্রতম মাসের অন্তর্ভুক্ত নয়। মাস ৪টি হচ্ছে জিলকদ, জিলহজ, মুহররম ও রজব। এ মাসগুলোকে পবিত্র বা সম্মানিত বলা হয় কারণ এ সময় সব ধরণের যুদ্ধ ও রক্তপাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
রাসুল (স) এর পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার ৮-১০ বছর পর প্রথম হিজরি ক্যালেন্ডার চালু করেন উমর ইবনে খাত্তাব (র)। তখন কোন মাসটি দিয়ে বছরের শুরু গণনা করা হবে তা নিয়ে হয় তুমুল আলোচনা। স্বাভাবিকভাবেই অনেক সাহাবা রমজান মাস দিয়ে বছর গণনা শুরু করার কথা বলেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভোট আসে মহররম মাসের পক্ষে। তখন উমর (র) ও এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে বললেন, যেহেতু মহররম হজের ঠিক পরের মাস, তাহলে হজের পর একটা নতুন শুরু হিসেবে মহররম মাস থেকেই বছর গণনা করা হোক।
মহররম মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে রোজা রাখা। ইবনে আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত, “আমি রাসুল (স)-কে আশুরার দিন এবং মহররম মাসে রোজা রাখার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন আর দেখিনি।” আশুরা শব্দের অর্থ হচ্ছে ১০ম। আশুরার দিন রোজা রাখাটা মুসলিমদের জন্য অনেক অনেক আগে থেকেই ফরজ ছিলো। হিজরির ২য় সালে আল্লাহ রমজান মাসে রোজা রাখাটা ফরজ করে দিলেন। তখন আশুরার রোজা ফরজ থেকে বাদ দেয়া হয় কিন্তু তবুও এই দিনে রোজা রাখার ব্যপারে জোরালো ভাবে পরামর্শ দেয়া হয়। শুধু তাই না, মহানবী (স) বলেন এই দিনে রোজা রাখলে আগের বছরের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
মহররমের ১০ তারিখ ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে আল্লাহ ফেরাউনের হাত থেকে মুসা (আ) কে রক্ষা করেছিলেন এবং সমুদ্র দুই ভাগ হয়েছিলো, এই দিনেই নূহ (আ) এর নৌকা যুদি পর্বতে এসে থেমেছিল, এই দিনেই ইউনুস (আ)-কে আল্লাহ মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেছিলেন, এই দিনেই ইসা (আ) এর জন্ম হয় এবং তাকে আসমানে তুলে নেয়া হয় এবং এই দিনেই ইবরাহীম (আ) এর জন্ম হয়।
এছাড়াও রাসুল (আ) এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (র) কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। এ ছাড়াও অনেক বর্ণনা মতে মহররমের ১০ তারিখ, শুক্রবারই ইস্রাফীল (আ) শিঙ্গায় ফু দিবেন আর কেয়ামত সংগঠিত হবে। তবে এই বর্ণনা কোরআনের আয়াত বা কোন সহী হাদিস দারা প্রমাণিত নয়। মহান আল্লাহ যেন আমাদের এই মাসে রোজা রাখার তৌফিক দেন এবং আমাদের আগের বছরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।