স্টাফ রিপোর্টার- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষের ভোট ও মত প্রকাশের অধিকার হরণকারী ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নিশিরাতের ভোটের সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই, জানমালের নিরাপত্তা নেই। যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে, সেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিচ্ছে সরকার। সাধারণ মানুষের ওপরও গুলি চালাতে কুণ্ঠাবোধ করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকার বুঝে গেছে, তাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
সোমবার বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
পঞ্চগড়ে গুলি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তিনি এ বিবৃতি দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পঞ্চগড়ে বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নিরীহ মানুষের ওপর পুলিশ যেভাবে গুলি চালিয়েছে তা সরকারের নিষ্ঠুরতার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। পুলিশের নির্বিচার গুলি ও হামলায় শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
একদিকে গুম-খুন-লুটপাট ও নিপীড়ন চলছে, অন্যদিকে চলছে গোয়েবলসীয় কায়দায় অকথ্য মিথ্যাচার। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারের লোকজন উন্মাদ হয়ে গেছে। মন্ত্রীত্ব বাঁচাতে সরকারের মন্ত্রীরাও মিথ্যাচারের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাদের রুচিহীন এমন বক্তব্য জনগণ কোনোভাবেই বিশ্বাস-তো করেই না, বরং তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে।
তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে, সে আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখে অবৈধ সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকার বুঝে গেছে, তাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তাই নানান নাটক ঘটিয়ে জনগণের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেয়ার কুটকৌশল চালাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে পঞ্চগড়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ একের পর এক বিভেদ সৃষ্টি করে পুলিশী হামলা-মামলা-গ্রেফতার এবং জিয়া পরিবার ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এদিকে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির দুই নেতার (সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা ও হারুনুর রশিদ) ফেসবুক আইডি থেকে ‘উস্কানি’ দেওয়ার যে অভিযোগ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তুলেছেন- ‘তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এমনকি ওই দুই নেতার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট-ই নেই বলে জানান তিনি।
সোমবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ির তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এ কথা বলেন।
রবিবার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ফুলতলা শালশিরি এলাকায় সম্প্রদায়টির ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার আগে শিবির পরিচালিত বাঁশের কেল্লা এবং আরেকটি ফেসবুক পেজ থেকে সংঘর্ষের উস্কানি দেওয়া হয়। সঙ্গে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ এবং রুমিন ফারহানার আইডি থেকেও উস্কানি ছড়ানো হয়।
তথ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ নিয়ে আমাদের দুজন নেতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, সেটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। রুমিন ও হারুনের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। ফেইক আইডি খুলে এসব অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের তো এটি নতুন কোনো কিছু নয়, ঘটনা ঘটাবে তারা আর দোষ দিবে আমাদের ওপর; এটাই তারা করে থাকে।’
পঞ্চগড়ের ঘটনায় ‘সরকার সরাসরি জড়িত’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে যত রকমের অপপ্রচার চালানো যায় সেটা করে যাচ্ছে। পঞ্চগড়ের এই ঘটনার সঙ্গে এই সরকার সরাসরি জড়িত। এর দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। কিন্তু উলটা সেখানে আমাদের যেসব নেতা আছেন, তাদের নামে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সরকার পরিকল্পিতভাবে জনগণের দৃষ্টি প্রভাবিত করতে পঞ্চগড়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে দাবি করে ফখরুল আরও বলেন, ‘যখন দেশের সকল জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে নেমেছে, ঠিক তখনই সরকারের লোকেরা জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব কাজ করে যাচ্ছে।’