স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট খেলতে নামলেই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের যেন কী হয়! ধুকতে শুরু করে দেন। সেন্ট লুসিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও যেমন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা কিছুই করতে পারেননি। মাঝপথে লিটন কুমার দাস (৫৩) হাফসেঞ্চুরি করেন। শেষে নবম উইকেটে দুই পেসার শরিফুল ইসলাম (২৬) ও এবাদত হোসেন (২১*) মিলে ৩৬ রানের জুটি গড়ে দলকে ২০০ রানের উপরে নিয়ে যান। না হলে বাংলাদেশ যে প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রান করে অলআউট হয়েছে, এত দুর যেতেই পারত না। এরপর প্রথমদিনের শেষ ১৬ ওভারে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোন উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান করে দিনটি নিজেদের করে নেয়।
শুরুতে ওপেনার তামিম ইকবাল (৪৬) কিছুটা ব্যাটিং নৈপুন্য দেখান। এরপর মাঝখানে নাজমুল হোসেন শান্ত (২৬) ও প্রায় আট বছর পর টেস্টে ফেরা এনামুল হক বিজয় (২৩) স্কোর মজবুতের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। লিটন কুমার দাস (৫৩) হাফসেঞ্চুরি করে ইনিংসটাকে একটু বাড়িয়ে নেন। শেষে পেসার শরিফুল ও এবাদত ব্যাটিং দক্ষতা দেখান। বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের দেখিয়ে দেন, চেষ্টা করলে সম্ভব হয়।
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচও হেরেছিল ৭ উইকেটে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, প্রথম দুই ঘন্টাই আসল। এই দুই ঘন্টা যদি জয় করতে পারেন, তাহলে ম্যাচে ভালো কিছু সম্ভব। সেন্ট লুসিয়া টেস্টের প্রথমদিনে শুধু প্রথম দুই ঘন্টাই নয়, দ্বিতীয় সেশনও কাটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। চার ঘন্টা কাটায়। তবে শেষ সেশনে এসেই, শেষ ১৩ ওভারেই গরমিল বেঁধে যায়। দ্বিতীয় সেশন যখন শেষ হয়, তখন বাংলাদেশ ৫১ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৯ রান করে। পরের ১৩ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
শুরুটা খারাপ হয়নি। উদ্বোধনী জুটি ৪১ রান স্কোরে যোগ করতে পারে। যেখানে এরআগের টেস্টগুলোতে ৪-৫ উইকেট পড়ে যেত। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় (১০) আউটের পর ওপেনার তামিম ইকবালও এরপর খুব বেশিদুর এগিয়ে যেতে পারেননি। দলের ৬৮ রানে হাফসেঞ্চুরি থেকে ৪ রান দুরে থাকতে আউট হয়ে যান। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু দলের ১০৫ রান হতেই প্রায় ৮ বছর পর টেস্টে ফেরা বিজয় (২৩) আউট হন। শান্ত ও বিজয় মিলে ধাক্কা সামলে নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিজয় আউট হয়ে যান। মুহুর্তেই কোন রান যোগ না হতেই শান্তও (২৬) সাজঘরে ফিরেন।
আশা দেখাচ্ছিলেন দুইজনই। কিন্তু হোচট খেতে হলো। বিজয় আউট হওয়া থেকে শুরু করে ৩৩ রানের মধ্যে চারটি গুরুত্বপুর্ন উইকেট পড়ে গেল। বিজয়, শান্তর পর দলের ১২৫ রানে সাকিব (৮), ১৩৮ রানে নুরুল হাসান সোহান (৭) আউট হয়ে যান। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সেরা দুই হাফসেঞ্চুরিয়ান ব্যাটসম্যান সাকিব ও সোহান আউটের পর যেন ধুকতে শুরু করে দেয় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে লিটন ও মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে আবার ভরসা দেখান। তবে তাও বেশি সময় টিকে থাকেনি। দ্বিতীয় সেশনের পর দলের ১৬৫ রানে মিরাজ (৯) আউট হয়ে যান। দলের স্কোরে ২০০ রান হওয়ার আগে ১৯১ রানে লিটন ক্যারিয়ারের ১৪তম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি করে সাজঘরে ফেরেন। যা এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে একমাত্র হাফসেঞ্চুরিও হয়ে থাকে। তখন মনে হয়, তাসের ঘরের মতো এখনই বাকি থাকা ২টি উইকেটও পড়ে যাবে। তখন যে তিন পেসার এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমানের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ ব্যাটিংয়ে থাকেন। তাই খুব আশা ছিল না। কিন্তু এবাদত ও শরিফুল মিলেই হিসেবে অনেক দুর নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে।
যেখানে ধরা হচ্ছিল, ২০০ রানও হবে না। সেখানে এবাদত-শরিফুল নবম উইকেটে ৩৬ রানের জুটি গড়ে দলকে ২০০ রানের উপরে নিয়ে যান। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে উদ্বোধনী জুটির ৪১ রানের পর দ্বিতীয় সেরা জুটি হয় এটি। এই জুটিতেই একটু ভালো স্কোর গড়া যায়।
দলের ২২৭ রানে গিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার সেরা ২৬ রান করে আউট হন শরিফুল। ৫টি চার হাকান। ২৩৪ রান হতেই খালেদও (১) আউট হয়ে গেলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। এবাদত (২১*) অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
বাংলাদেশ হয়তো আরও দুর যেতে পারতো। যদি আম্পায়ারদের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের শিকার না হতো। একটি ভুল সিদ্ধান্ত ব্যাটসম্যানদের মানসিকতায় ভালোভাবেই প্রভাব ফেলে। দিনের শুরুতেই যেমন কেমার রোচের একটি ওভারে দুইবার মাহমুদুল হাসান জয়কে এলবিডব্লিউ বলে ঘোষণা দেন অন ফিল্ড আম্পায়ার রিচার্ড ইনিংওর্থ। ইনিংসের ৩৪ ও ৩৫তম ওভারে বিজয় ও শান্ত’র আউটগুলো নিয়েও যেমন আছে প্রশ্ন। বিজয় ও শান্ত মিলে খুব সুন্দর ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু ৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে অভিষিক্ত অ্যান্ডারসন ফিলিপের এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন বিজয়। রিভিউ নিয়েও, আউট নিয়ে দ্বিধা থাকলেও বাঁচতে পারেননি বিজয়। কারণ, আম্পায়ার্স কল ছিল।
শান্তর বেলাতেও একই ঘটনা ঘটে। পরের ওভারে কাইল মেয়ার্সের বলে এলবিডব্লিউ হন শান্ত। বলটি লেগ স্টাম্পের দেখা পেলো খুবই অল্প। কিন্তু আম্পায়ার কল থাকায় শান্তকেও সাজঘরে ফিরতে হয়। আউট নিয়ে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এই দুই আউট বাংলাদেশ ইনিংসে অনেক বড় ক্ষতি করে দিয়েছে। না হলে আরও অনেক দুর হয়তো যাওয়া যেত।
এখন বোলারদেরই যা করার করতে হবে। এরমধ্যেই প্রথম দিন শেষ হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (৩০*) ও জন ক্যাম্পবেল (৩২*) মিলে সহজেই এগিয়ে চলেছেন। এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৭ রানে পিছিয়ে আছে। যদি ক্যারিবিয় ব্যাটসম্যানদের দ্রুত আটকানো না যায়, তাহলে স্কোর বড় হবে। আর স্কোর বড় হলে বিপদ বাড়তে থাকবে। প্রায় আট বছর পর আবার সেন্ট লুসিয়ায় খেলতে নেমে বিপদ দুর করাই এখন আসল কাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ প্রথমদিন শেষে
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ২৩৪/১০; ৬৪.২ ওভার; তামিম ৪৬, জয় ১০, শান্ত ২৬, বিজয় ২৩, লিটন ৫৩, সাকিব ৮, সোহান ৭, মিরাজ ৯, এবাদত ২১*, শরিফুল ২৬, খালেদ ১; জোসেফ ৩/৫০, সিলস ৩/৫৩।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ৬৭/০; ১৬ ওভার; ব্র্যাথওয়েট ৩০*, ক্যাম্পবেল ৩২*।