মিথুন আশরাফ : অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টে ইনিংস হার এড়ানো গেছে। সেন্ট লুসিয়ায় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পরও নুরুল হাসান সোহানের (৬০*) অসাধারণ ব্যাটিংয়ে তাও পারা গেছে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হার হয়েছে। তাতে করে সিরিজের দুই টেস্টে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশের সাথে শততম টেস্ট হারও হলো বাংলাদেশের।
তৃতীয় দিন শেষে ৪২ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে হাতে ছিল ৪ উইকেট। বৃষ্টিতে প্রথম দুই সেশন শেষ হয়। শেষ সেশনে যখন বৃষ্টি থামে এবং খেলা শুরু হয়, তখন ৯ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের ইনিংস খতম হয়ে যায়। ভাগ্য ভালো যে ৪০ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর ইনিংসটাকে ৬০ রানে নিতে পেরেছেন সোহান। না হলে তো ইনিংস হারও হয়ে যেতে পারত।
তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৬ ওভারে ১৩২ রানে থাকে বাংলাদেশ। সোহান ১৬ রানে উইকেটে থাকেন। আর ৫৪ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৬ রান করতেই অলআউট হয়। মেহেদি হাসান মিরাজ (৪), এবাদত হোসেন (০), শরিফুল ইসলাম (০) ও খালেদ আহমেদ (০) কিছুই করতে পারেননি। সোহান নিজে স্ট্রাইকে থেকে যতটা এগিয়ে নিতে পেরেছেন। ইনিংস হার এড়িয়েছেন। তাতে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে জিততে ১৩ রানের লক্ষ্য দাড় হয়। দুই ওপেনার ব্র্যাথওয়েট (৪*) ও ক্যাম্পবেল (৯*) মিলে ২.৫ ওভারে এই রান তুলে জিতে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সোহানই সবচেয়ে বেশি অপরাজিত ৬০ রান করতে পারে। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে ৪২ রান আসে। বাকি সব ব্যাটসম্যানই ২০ রানের নিচে থাকে। প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রান করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে কাইল মেয়ার্সের ১৪৬ রানে ৪০৮ রান করে ১৭৪ রানে এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে শুরু থেকে শেষেও ৩ উইকেট করে শিকার করা কেমার রোচ, আলজারি জোসেফ ও জেইডেন সিলস আতঙ্ক তৈরী করে গেছেন। তাতেও কাজও হয়েছে।
এই সিরিজে হোয়াইওয়াশ হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টানা তিন টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। ২০১৪, ২০১৮ ও এবার টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। আর দুই দেশ মিলিয়ে টানা দুই টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। গতবছর দেশের মাটিতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ টেস্ট খেলে ১৪ টেস্টে হারে বাংলাদেশ। এরমধ্যে চারটি টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। দুই দলের মধ্যে প্রথম লড়াই হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে। সেই টেস্টে ইনিংস ও ৩১০ রানে হারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জয়টি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উইকেটের দিক দিয়ে এবার ১০ উইকেটে জিতল।
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১৩৪টি টেস্ট খেলে। এরমধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়ায় হারায় ১০০টি টেস্টেই হার হয়। জিতে ১৬টি টেস্টে। ড্র করে ১৮টি টেস্টে। এরআগে হারা ৯৯ টেস্টের মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩টি করে, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২টি করে, ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯টি করে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭টি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫টি ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১টি টেস্ট হারে। সেন্ট লুসিয়ায় হারায় নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের শততম টেস্ট হারের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি টেস্টে হারও হয়ে গেল বাংলাদেশের। মুমিনুল হক টেস্ট নেতৃত্ব ছেড়েছেন। সাকিব আল হাসান নেতৃত্ব পেয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য বদল হলো না। টানা ৭ টেস্টে জয়হীন থাকল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হেরে হোয়াইটওয়াশও হলো, আবার শততম টেস্ট হারও হয়ে গেল বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ২৩৪/১০; লিটন ৫৩, তামিম ৪৬, এবাদত ২১*, শরিফুল ২৬; জোসেফ ৩/৫০, সিলস ৩/৫৩ ও দ্বিতীয় ইনিংস তৃতীয় শেষে ১৩২/৬; শান্ত ৪২, লিটন ১৯, সাকিব ১৬; রোচ ৩/৩২, জোসেফ ২/৩১ ও চতুর্থদিন সোহান ৬০*; সিলস ৩/২১, রোচ ৩/৫৪, জোসেফ ৩/৫৭।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ৪০৮/১০; মেয়ার্স ১৪৬, ব্র্যাথওয়েট ৫১; খালেদ ৫/১০৬, মিরাজ ৩/৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংস (লক্ষ্য ১৩ রান) ১৩/০; ব্র্যাথওয়েট ৪*, ক্যাম্পবেল ৯*।
ফল : বাংলাদেশ ১০ উইকেটে পরাজিত।
ম্যাচ সেরা : কাইল মেয়ার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
সিরিজ : বাংলাদেশ ০-২ ব্যবধানে পরাজিত।
সিরিজ সেরা : কাইল মেয়ার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।