Search
Close this search box.

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ
মিথুন আশরাফ : 

তাইজুলের বোলিংয়ের পর লিটনের ব্যাটিং দ্যুতি

 

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে তামিমবাহিনী। তাতে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৯ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালের পর আবার ওয়ানডে একাদশে সুযোগ পেয়েই ওয়ানডেতে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকার করে নেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। লিটন কুমার দাস ব্যাট হাতে ৫০ রানের ইনিংস উপহার দেন।

টস খুবই গুরুত্বপুর্ন। বাংলাদেশ তিনটি ওয়ানডেতেই টস জিতে। আগে ফিল্ডিং নিতে পেরেছে। এরআগে প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৭৬ বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটে জিতে সিরিজ জয় করে নেয় তামিমবাহিনী। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা চার সিরিজে হারায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৯ রানের বেশি করতে দেয়নি এবং দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ১০৮ রানেই অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও ১৭৮ রানেই বেঁধে রাখা যায়। তাইজুলের (৫/২৮) বোলিং দ্যুতিতে ৪৮.৪ ওভার খেলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান ২টি করে উইকেট নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ৭৩ রান করেন। চতুর্থ উইকেটে পুরান ও কিচি কার্টি (৩৩) মিলে যদি ৬৭ রানের জুটি না গড়তেন, তাহলে আরও আগেই অলআউট হয়ে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোমারিও শেফার্ড (১৯) ও রোভম্যান পাওয়েল (১৮) দুই অংকের ঘরে পৌছাতে পারেন। বাংলাদেশ জবাব দিতে গিয়ে ৪৮.৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান করে জিতে যায়। ব্যাট হাতে লিটন কুমার দাস (৫০) হাফসেঞ্চুরি করেন। ৬৫ বলে ৫ রান ও ১ ছক্কায় এ রান করেন লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দে মাতে বাংলাদেশ।

বিপদ এসেছিল। দলের ২০ রানে নাজমুল হাসান শান্ত (১) আউটের পরে ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস ভালই এগিয়ে যান। ৭০ রানে তামিম আউটের পরও লিটন উইকেটে থিতু হয়ে যান। দলের ৯৬ রানে লিটনকে আউট করে দেন স্পিনার মোতি কানহাই। এরপর এলোমেলো হয় ব্যাটিং। মোতি (৪/২৩) দলের ১১৬ রানের  মধ্যে আরও দুটি উইকেট (আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত) শিকার করে নেন। দলের ১৪৭ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২৬) আউটের পর তো আতঙ্ক বিরাজ করে। ৬ উইকেট হারিয়ে খাদে পড়ার অবস্থা হয়। জেতা ম্যাচটা না আবার হেরে যায় বাংলাদেশ। সেই ভয়ও থাকে। নুরুল হাসান সোহান (৩২*) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (১৬*) মিলে সেই ভয় স্বাচ্ছন্দ্যেই দুর করেন। অবিচ্ছিন্ন ৩২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জেতান।

দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশ আবার এক পেসার নিয়ে খেলতে নামে। শুধু পেসার মুস্তাফিজুর রহমান পেস বিভাগ সামলান। এরআগে ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই সবশেষ এক পেসার নিয়ে ওয়ানডে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে শফিউল ইসলাম খেলেছিলেন। এবার খেললেন মুস্তাফিজ। শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে একাদশে খেলেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম।

বাজিমাত করেন তাইজুল। বিদেশের মাটিতে টেস্টেই একাদশে থাকা কঠিন হয়ে যায় তাইজুলের। সেখানে টি২০ ও ওয়ানডেতে দলে থাকা কঠিন। টি২০ দলে ছিলেন না। ওয়ানডে দলেও শুরুতে ছিলেন না। সাকিব আল হাসান না খেলায় ওয়ানডে দলে জায়গা হয়। উইকেট স্পিনারদের সহায়ক দেখে তাইজুলকে একাদশেও নেওয়া হয়। ২০২০ সালের পর আবার একাদশে খেলে আকাশচুম্বি সাফল্যই পান তাইজুল। ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ২৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন। ম্যাচে প্রথম বলেই উইকেট নেওয়া দিয়ে শুরু হয়, ম্যাচটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বেশি রান করা নিকোলাস পুরানকে আউট করার মধ্য দিয়ে ১০টি ওভার শেষ হয়। এরআগে অভিষেক ওয়ানডেতেই ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ‍উইকেট শিকার করেন তাইজুল। যা ছিল সেরা সাফল্য। এবার দুই বছর পর ওয়ানডে একাদশে সুযোগ পেয়ে আগের সাফল্যকেও ছাপিয়ে যান। তাতে সাফল্য পায় বাংলাদেশও।

দুই দলের মধ্যকার ১১টি সিরিজ লড়াইয়ে ৬টি সিরিজে জিতে বাংলাদেশ। সেই সাথে দেশ-বিদেশের মাটি মিলিয়ে টানা ৫ সিরিজ জিতে। গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে প্রতিপক্ষকে টানা তিন সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদও পায়।

এরআগে গতবছর বাংলাদেশের মাটিতে এবং ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এবার টেস্ট ও টি২০ সিরিজে বাংলাদেশ হারে। তবে পছন্দের ফরমেট ওয়ানডে শুরু হতেই বদলে যায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার মধুর স্মৃতিও মিলে যায়। দুইয়ের অধিক ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ১৫ বার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ১৬তমবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার শান্তি পায় বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : তৃতীয় ওয়ানডে

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস ১৭৮/১০; ৪৮.৪ ওভার; পুরান ৭৩, কার্টি ৩৩, শেফার্ড ১৯, পাওয়েল ১৮; তাইজুল ৫/২৮, মুস্তাফিজ ২/২৪, নাসুম ২/৩৯, মোসাদ্দেক ১/২৩।

বাংলাদেশ ইনিংস ১৭৯/৬; ৪৮.৩ ওভার; লিটন ৫০, তামিম ৩৪, সোহান ৩২*, রিয়াদ ২৬, মিরাজ ১৬*, মোসাদ্দেক ১৪; মোতি ৪/২৩।

ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : তাইজুল ইসলাম (বাংলাদেশ)।

সিরিজ : বাংলাদেশ ৩-০ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সিরিজ সেরা : তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ