Search
Close this search box.

মৃত্যু থেকে যেন বাঁচলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা

মৃত্যু থেকে যেন বাঁচলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা
 
মিথুন আশরাফ ॥ 

 

সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা; ৫ ঘন্টার সমুদ্রযাত্রা। আসলে ভয়ংকর সমুদ্রযাত্রা। যেন মৃত্যু ফাঁদ। আর এই ফাঁদ থেকে বেঁচেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে আগামীকাল টি২০ সিরিজে খেলতে নামার আগেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনের আঁচ যেন পেয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা। তবে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যে যাত্রা হয়েছে তাতে টি২০ সিরিজে ক্রিকেটারদের ভালো খেলাই তো কঠিন!

অসুস্থ হয়ে এভাবেই শুয়ে, বসে থাকেন নাসুম, মুস্তাফিজরা
অসুস্থ হয়ে এভাবেই শুয়ে থাকতে হয়েছে

ক্রিকেট খেলতে গিয়ে কত দেশই তো ঘুরে বেড়িয়েছেন ক্রিকেটাররা। এক দেশ থেকে আরেক দেশ গেছেন। যাত্রায় তেমন বিশেষ অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এবার এমন যাত্রাই হলো, যা ভয়ংকর। সারাজীবন ক্রিকেটারদের মনে থাকবে। কি বড় বড় উথাল পাথাল ঢেউ। কখনোই যে এত বড় সমুদ্রযাত্রা করা হয়নি। সম্প্রতি সাইক্লোন হয়েছে। তাতে সমুদ্রযাত্রা নিয়ে আগেই সতর্কতা ছিল। কিন্তু সফরসূচীই এমন ছিল। তাই কিছু করার ছিল না।

ঢেউয়ে কখনো ফেরি উপরে উঠছে। কখনো নিচে নামছে। ‘মোশন সিকনেসে’ আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকাটা স্বাভাবিক। তাই হয়েছে। পেসার শরিফুল ইসলাম তো বমি করতে করতে যেন শেষ! নুরুল হাসান সোহান তো না পেরে খালি গাঁ হয়ে পড়েন। স্পিনার নাসুম আহমেদ, পেসার মুস্তাফিজুর রহমান তো বসেই থাকেন। শুয়েও থাকেন। কী যে কঠিন অবস্থা হয়!

নুরুল হাসান সোহানকে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন মিরাজ

সিরিজ খেলতে গিয়ে যেন বিপদে পড়ে যান ক্রিকেটাররা। শুরু থেকে দেড় ঘন্টার যাত্রার পর মার্টিনেকে ফেরি যাত্রা বিরতি করে। তখন তো টি২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদসহ ক্রিকেটাররা বলেই দেন ফেরি দিয়ে ডমিনিকা যাওয়া সম্ভব নয়। সামনে আরও ভয়ংকর অবস্থা হতে পারে। বিসিবি সভাপতির সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাননি। ম্যানেজার নাফিস ইকবালও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু করার নেই, তা সবাই বুঝে যান। একে তো এতগুলো ক্রিকেটারের বিমানের টিকেট করতে হবে। আবার ফ্রেঞ্চ কলোনি মার্টিনেকের ভিসাও তাৎক্ষণিক পাওয়া মুশকিল।

ক্রিকেটারদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল

যখন বোঝা গেল, আর কোন গতি নেই, তখন মার্টিনেক থেকে ডমিনিকায় যাত্রা করতেই হলো ক্রিকেটারদের। তবে রিয়াদ, মিরাজ, শরিফুল, মুস্তাফিজ, নাসুমরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, এবাদত হোসেনদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি। যাত্রার পুরোটা সময়ই খুব উপভোগ করেছেন তারা। শুরুতে সব ক্রিকেটারই উপভোগ করেছেন। কিন্তু যেই সমুদ্রের একটু গভীরে গেছে ফেরি আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। ডলফিন চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময়তো ক্রিকেটারদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

বমি করছেন পেসার শরিফুল ইসলাম

এমন যাত্রা কেন বেছে নেওয়া হলো? যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলতে গিয়ে কোন দলই এমন ভয়ংকর যাত্রা করে না। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও করে না। যখন সফরসূচী ঠিক করা হয়, তখন স্বাগতিক দল সূচী দেয়। কিন্তু সফরকারী দলকেই অনুমতি দিতে হয়। সেই হিসেবে বিসিবিই এমন যাত্রার অনুমতি দিয়েছে। কোন যাচাই বাছাই না করেই ক্রিকেটারদের এমন মরণ ঝুকিতে ফেলা কোনভাবেই ঠিক হয়নি বিসিবির।

সাকিব পুরো যাত্রা উপভোগ করেছেন

এ নিয়ে হচ্ছে তুমুল সমালোচনাও। হওয়ারই কথা। ক্রিকেটাররা ভালো ক্রিকেট খেলায় মনোযোগ দেবেন, নাকি এমন ভয়ংকর যাত্রা করে আগে নিজেকে সামলাবেন? মৃত্যু ফাঁদ থেকে বাঁচার পর কী ক্রিকেটটাও ভালো খেলা যায়? সবসময়ই তো সেই দুঃস্মৃতি মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। তাতে ক্রিকেটটাই তো মাথা থেকে কয়েকদিনের জন্য হারিয়ে যায়। ভালো খেলা চাইলে তো ভালো যাত্রাও হতে হয়!

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ