মিথুন আশরাফ – সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতবে কে? নতুন চ্যাম্পিয়ন হবে কে? তা আজই নিশ্চিত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ হবে আজ। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বিকেল সোয়া ৫ টায় ম্যাচটি শুরু হবে। নেপালকে আজ হারালেই শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ। সাবিনারা শিরোপা উচিয়ে ধরবেন। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়বেন।
সাবিনারা যদি চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা উচিয়ে ধরতে পারেন, তাহলে সাফ ফুটবলের শিরোপা আবার বাংলাদেশে আসবে। এরআগে ২০০৩ সালে পুরুষ জাতীয় ফুটবল দল সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই একবারই সাফ ফুটবলের শিরোপা বাংলাদেশ জিততে পেরেছিল। এবার যদি চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়, তাহলে আবার নারী জাতীয় ফুটবলারদের মাধ্যমে সাফ ফুটবলের শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতবে বাংলাদেশ।
শুক্রবার ভুটানকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে ৮-০ গোলে ভুটানকে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। একইদিন স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে নেপাল। সেমিফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় নেপাল।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এরআগে এ চ্যাম্পিয়নশিপে একবারই ফাইনালে খেলেছিল। ২০১৬ সালে ভারতের কাছে ফাইনালে হেরে রানার্সআপ হয়। এবারও ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়। যে স্বপ্ন নিয়ে নেপালে চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ, সেই স্বপ্ন সফল হয়। এখন নেপালকে হারাতে পারলে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নও সফল হবে।
নেপাল এরআগে চারবার ফাইনালে খেলে। কিন্তু একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। প্রতিবারই ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। ফাইনালে নেপাল বেশি খেলায় এবং এবার স্বাগতিক হওয়ায় শক্তিশালী দলেও পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ হারাতে পারলে নেপালও প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুলবে।
এরআগে যতবার সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। ততবারই শিরোপা জিতেছে ভারত। এবার দলটি হোচট খেয়েছে। যে দুটি দল ফাইনালে খেলছে, দুই দলের কাছেই হেরেছে ভারত। আর তাই সেরা দুই দলই ফাইনালে খেলছে। এবার ষষ্ঠবারের মতো হচ্ছে এ চ্যাম্পিয়নশিপ। এরআগে ২০১০ সালে প্রথমবার, ২০১২ সালে দ্বিতীয়বার, ২০১৪ সালে তৃতীয়বার, ২০১৬ সালে চতুর্থবার ও ২০১৯ সালে পঞ্চমবার চ্যাম্পিয়নশিপ হয়। প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এবার ফাইনালই খেলতে পারল না ভারত। বাংলাদেশ ও নেপাল ফাইনালে অংশ নেবে।
বাংলাদেশ যদি কোনভাবে ফাইনালে জিতে শিরোপা ঘরে তুলতে পারে, তাহলে ইতিহাস ঘটে যাবে। দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে প্রথমবার যে শিরোপা জিতবে। তবে প্রতিপক্ষ নেপাল। যারা কিনা শক্তিশালী দলই। সবশেষ ২০১৯ সালেও নেপালের কাছে এই চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে ০-৩ গোলে হারে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ২০১৬ সালে মুখোমুখিই হতে হয়নি। ২০১৪ সালে সেমিফাইনালে ০-১ গোলে নেপালের কাছে হেরে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়। ২০১২ সালেও লড়াই হয়নি। ২০১০ সালে প্রথমবার আয়োজিত আসরে দুই দল লড়াই করে। এবারও সেমিফাইনালে ০-৩ গোলে নেপালের কাছে হেরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়। এবার আর আগে নয়, সরাসরি ফাইনালে দুই দল লড়াই করছে। এবার যতবার এরআগে দেখা হয়েছে, প্রতিবার যে বাংলাদেশ হেরেছে তার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকছে। সেই সুযোগ এখন কাজে লাগানো গেলেই হলো।
গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। এমনকি ভারতকেও হারিয়ে দেয়। যে ভারত এরআগে হওয়া পাঁচ চ্যাম্পিয়নশিপের সবকটিতে শিরোপা জিতেছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এরআগে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে করে ৩ ম্যাচে জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের সেরা দল হয়েই সেমিফাইনাল খেলতে নামে বাংলাদেশ। ভুটানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে অপরাজিত থেকে ফাইনালেও উঠল বাংলাদেশ।
নেপালও গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচেও হারেনি। ভুটানকে ৪-০ গোলে এবং শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলে। অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে খেলে। সেমিফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। তাতে করে এবার যে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে নতুন চ্যাম্পিয়ন দল মিলছে তা নিশ্চিত হয়ে যায়। সেই চ্যাম্পিয়ন দলটি কে? সেই প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে। নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ শিরোপা জিতুক, সেই আশাই করা হচ্ছে।