Search
Close this search box.

শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরে বীরোচিত সংবর্ধনায় ভাসছেন বীর কন্যারা

শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরে বীরোচিত সংবর্ধনায় ভাসছেন বীর কন্যারা

স্পোর্টস রিপোর্টার – সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতে বীরোচিত সংবর্ধনায় ভাসছেন বীর কন্যারা। দুপুরে দেশে ফিরতেই ছাদ খোলা বাসে সংবর্ধনা পেয়েছেন। দেশের মানুষ কাছ থেকে বীরদের দেখেছেন। স্যালুটও জানিয়েছেন।

হিমালয়ের দেশ থেকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট জিতে দেশে ফিরেই লাল-সবুজের মেয়েরা সংবর্ধনা পেয়েছেন। অবিস্মরণীয় এ বিজয় নিয়ে দেশে পাঁ রাখতেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিমানবন্দরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অভ্যর্থনা জানান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিনসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত থাকেন।

এরপর সেখানে তাদের ফেরার জন্য অপেক্ষায় থাকে ছাদখোলা বাস। যাতে চড়ে বাফুফে ভবনে যাবেন সানজিদা-কৃষ্ণারা। বিমানবন্দর থেকে সাবিনাদের বাস এয়ারপোর্ট, কাকলী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, বিজয় সরণি ফ্লাইওভার, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে মৌচাক-কাকরাইল-ফকিরাপুল-মতিঝিল হয়ে পৌঁছাবে বাফুফে ভবনে। এরপর সেখানে মতিঝিলে বাফুফে ভবনে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেবেন।

 

শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরে বীরোচিত সংবর্ধনায় ভাসছেন বীর কন্যারা
শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরে বীরোচিত সংবর্ধনায় ভাসছেন বীর কন্যারা

 

এক বার্তায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বীর কন্যাদের বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এজন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অদম্য লড়াকু খেলোয়াড়েরা, যারা আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে আলিঙ্গন করেছে, ছিনিয়ে এনেছে বহুল প্রত্যাশিত বিজয়, সেই সকল স্বপ্নসারথীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ছাদখোলা বাস। তিনি আরও বলেন, দেশের সকল ক্রীড়ামোদী ভাই-বোনদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি এয়ারপোর্ট থেকে বাফুফে ভবনের যাত্রাপথে বাংলার বাঘিনীদেরকে সশরীরে অভিনন্দন জানানোর জন্য। অভিনন্দন যে দেশের মানুষ জানাবে, তা স্বাভাবিকই।

খাবারের কষ্টে ফুটবল খেলা শুরু করা অদম্য মেয়েরা এখন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মানচিত্রকে আরও গর্বিত করেছে। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে শুরু। কলসিন্দুর বিদ্যালয়ের ছোট্ট মেয়েদের সাফল্য দিয়ে শুরু। আজ নারী ফুটবলাররা সাফ চ্যাম্পিয়ন। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল। অথচ কেউ বাবাকে হারিয়ে, কেউবা মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, আবার কেউ বোনের অলংকার বিক্রি করে কিংবা কেউ আবার পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যান। আর সাথে নারী ফুটবলার হওয়াতে এলাকাবাসীর তিরস্কার তো ছিলই। ফেডারেশন থেকেও যে খুব বেশি সুবিধা পেয়েছেন তাও নয়। অবহেলিতই থেকেছেন। আর বেতন বৈষম্যতো লেগেই ছিল। এমন অবস্থা থেকে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে জীবনযুদ্ধ জিতেছেন সাবিনা, মারিয়া, কৃষ্ণা, সানজিদারা।

বাংলাদেশের ফুটবল তথা ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকছে সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর দিনটি। এই দিনেই যে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছেন নারী ফুটবলাররা। সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের ২২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নিয়েছে লাল-সবুজের দল। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব এখন অদম্য সাবিনা, মারিয়া, কৃষ্ণা, সানজিদাদের।

ফেসবুকে একরাশ কষ্ট বুকে নিয়ে এক পোস্টে সানজিদা আক্তার লিখেছিলেন, ‘ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরও নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে।’ শিরোপা জয়ের আশা পূরণ হয়েছে। এখন ছাদখোলা সংবর্ধনাও মিলছে নারী ফুটবলারদের।

এখন সময় এসেছে সব বদলে ফেলার। নারী ফুটবলারদের নিয়ে বিশেষভাবে ভাবার। সাফল্য যে তারাই দিচ্ছেন। শুধু ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকতে হয়। নারী ফুটবলারদের জন্য এবার ফুটবল নিয়ে ভাবতে হবে। যে কিশোরীরা শিরোপা জিতল, তাদের কারও বাবা কৃষক, ছোট ব্যবসায়ী বা সামান্য মাইনের চাকুরে। কর্তাব্যক্তিরা এবার হয়তো আরেকটু উদার ও মনোযোগী হবেন। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে আরও এগিয়ে যাবে নারীরা। এগিয়ে যাবে লাল সবুজের আমাদের প্রিয় সুন্দর দেশটিও।

বাংলাদেশের মেয়েদের দাপুটে এমন সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে আসলে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা ফুটবল টুর্নামেন্টের। মেয়েদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের যাত্রা ২০১১ সালে। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক নারী ফুটবলার উঠে আসছে। দেশের ফুটবলে মেয়েদের এমন সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে ময়মনসিংহের ধোবাউরা উপজেলার কলসিন্দুর বিদ্যালয়ের। এই এক স্কুল থেকেই প্রায় ১২-১৩ জন খেলোয়াড় খেলছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে। এ ছাড়া প্রতিবছরই নতুন করে আরও অনেকে যুক্ত হচ্ছেন। যেন নারী ফুটবলার তৈরির আস্ত কারখানা।

সাফ চ্যাম্পিয়ন এই দলে আছেন কলসিন্দুর গ্রামের ৮ ফুটবলার। মারিয়া মান্দা, সানজিদা আক্তার, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র ও জুনিয়র, সাজেদা খাতুন, মার্জিয়া আক্তার। সিরাত জাহান স্বপ্নার বাড়ি রংপুর। আঁখির বাড়ি সিরাজগঞ্জ। বাংলাদেশ অধিনায়ক এবং গোল্ডেন বুটজয়ী সাবিনা খাতুন এবং মাসুরা সাতক্ষীরার মেয়ে। কৃষ্ণা টাঙ্গাইলের, মনিকা আর রূপনা রাঙামাটির। আনাই আর আনচিং যমজ বোন খাগড়াছড়ির। নীলুফার ইয়াসমিন কুষ্টিয়ার।

নারী ফুটবলাররা দেশের মানুষের জন্য উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে। ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করে নিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন মানেই ভারতের শিরোপা জেতা যেন নির্ধারিতই ছিল। বাংলাদেশ সেই পথ নতুন করে লিখেছে। ছয়বারের চ্যাম্পিয়নশিপে এরআগে টানা পাঁচবার ভারত শিরোপা জিতলেও এবার বাংলাদেশ জিতল। ভারতকে পেছনে ফেলে দিল। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানকে উড়িয়ে, ভারতকে হারিয়ে, নেপালকে ফাইনালে সহজেই ডুবিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারেনি নারী ফুটবলাররা। এরপরও কী দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট খেলল বাংলাদেশ। ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারানোর আগে গ্রুপপর্বে মালদ্বীপকে ৩-০, পাকিস্তানকে ৬-০, ভারতকে ৩-০ এবং সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। কোন দলই বাংলাদেশের কাছে পাত্তা পায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার নতুন চ্যাম্পিয়নরা টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ গোল দিয়েছে ২৩টি। বিপরীতে খেয়েছে মোটে একটি। সেটি ফাইনালে। নারী ফুটবলাররা দেখিয়ে দিয়েছেন তারা কি করতে পারেন। দেশকে গর্বিত করেছেন তারা। আর তাই বীরোচিত সংবর্ধনায় ভাসছেন বীর কন্যারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ