মিথুন আশরাফ – কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে একের পর এক বড় দলগুলো ছোট্ট দলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে। শেষ ষোলতে তো মরক্কোর কাছে ধরাশায়ী হয়ে বিদায়ই নেয় স্পেন। স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায় স্পেনের। টাইব্রেকারে ০-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় স্পেন। তাতে করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ল মরক্কো। আর গনসালো রামোসের হ্যাট্রিকে ১৬ বছর পর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে পর্তুগাল। সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ২০১৬ সালের পর আবার শেষ আটে ওঠে পর্তুগাল।
কাতার বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস লিখল মরক্কো। টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছে গেল আফ্রিকান দেশটি। গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামকে হারানোর পর অঘটন আখ্যা দিয়েছিল ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। এবার স্পেনকে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়ে সমালোচকদের জবাব দিল ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের দল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে খেলার ফল ছিল ০-০। তারপর অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটেও খেলার ফলাফল আসেনি। টাইব্রেকারে ৩-০ ব্যবধানে বাজিমাত করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কো। ইউরোর সেমি ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল স্পেনকে। বিশ্বকাপেও সেই কাঁটা উপরাতে পারল না লুই এনরিকের দল।
টাইব্রেকারে মরক্কোর হিরো বনে যান মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বোনু। স্পেনের প্রথম শট পোস্টে লাগলেও তারপর টানা ২টি শট সেভ করেন তিনি। অপরদিকে চারটির মধ্যে তিনটি শটে গোল করে মরক্কোর ফুটবলে নতুন ইতিহাস লিখল ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের দল।
এবার বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাট্রিক করেন রামোস। ম্যাচের ১৭, ৫১ ও ৬৭ মিনিটে গোল করে হ্যাট্টিক করেন রামোস। ম্যাচের শুরুর একাদশে না থাকলেও ৭৩ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রোনাল্ডো। কিন্তু কোন গোল করতে পারেননি। তবে ঠিকই দল বড় ব্যবধানে জিতে যায়। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে দলের অধিনায়ক এবং দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ ও গোলের মালিক রোনালদোকে প্রথম একাদশে রাখেননি পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ইউরোতে রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে বেঞ্চে বসেছিলেন রোনাল্ডো।
রামোস ১৭ মিনিটে প্রথম গোল (১-০) দেয়ার পর ৩৩ মিনিটে পেপের দুর্দান্ত হেডে দ্বিতীয় গোল পায় পর্তুগিজরা (২-০)। এরপর ম্যাচের ৫১ মিনিটে গিয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ডিফেন্ডার দিয়োগো ডালটের ক্রস থেকে আলতো ছোঁয়ায় সুইস গোলরক্ষক সোমারের দুই পায়ের নিচ দিয়ে বলকে জালে পাঠান রামোস (৩-০)। ৫৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে মধ্য মাঠ থেকে বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতরে থাকা গুয়েরেইরোকে বল দেন রামোস। ফাঁকায় থাকা গুয়েরেইরো তাড়াহুড়া না করে সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বলকে জালে পাঠান (৪-০)। এক হালি গোল হজমের পর ৫৮ মিনিটে প্রথম গোল পায় সুইজারল্যান্ড। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে বাঁ-দিকের গোলবার দিয়ে গোল আদায় করে নেন সুইস ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। ৬৭ মিনিটে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন রোনাল্ডোর পরিবর্তে দলে জায়গা পাওয়া ২১ বছর বয়সী রামোস। ফেলিক্সের কাছ থেকে বক্সের ভেতরে বল পেয়ে শট নিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন রামোস। পর্তুগালের সব গোলেই বেঞ্চ ছেড়ে উঠে এসে উদযাপন করেছেন রোনাল্ডো। ৫-১ গোলে এগিয়ে পর্তুগালের জয় যখন নিশ্চিত তখন ৭৩ মিনিটে রোনাল্ডোকে মাঠে নামান পর্তুগাল কোচ। ফেলিক্সের পরিবর্তে মাঠে নামেন রোনাল্ডো। ৮৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে সুইজারল্যান্ডের বক্সের ভেতর ঢুকে গোল করেন রোনাল্ডো। কিন্তু সেটি অফসাইডে বাতিল হয়।
ইনজুরি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ডালটের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুন শটে সুইজারল্যান্ডের জালে ষষ্ঠবারের মত বল পাঠান বদলি হিসেবে নামা রাফায়েল লিয়াও। লিয়াওর গোলের পরই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজে। ৬-১ গোলের বিশাল জয় দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো পর্তুগাল। শেষ আটে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ মরক্কো। শেষ ষোলোর ম্যাচে পেনাল্টিতে ৩-০ গোলে স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করা মরক্কো ১০ ডিসেম্বর পর্তুগালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে লড়াই করবে।