মিথুন আশরাফ – কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে মরক্কো একমাত্র দল, যাদের জালে এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষ বল পাঠাতে পারেনি। এবার সেমিফাইনালে আফ্রিকার ঝান্ডা ধরে রাখা মরক্কো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে লড়াই করবে। জিতলেই ফাইনালে ওঠার সুযোগ। এমন ম্যাচে এবার বিশ্বকাপে যা কোন দল করতে পারেনি, তা কী ফ্রান্স করতে পারবে? মরক্কোর জালে বল পাঠাতে পারবে? খেলায় হার-জিতের চেয়ে এখন এ প্রশ্নই সবার মনে।
আজ বাংলাদেশ সময় গভীর রাত ১ টায় আল বাইত স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্স ও মরক্কো শেষ চারে লড়াই করবে। যে দল জিতবে, তারা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করবে। যে দল হারবে, তাদের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন শেষ হবে। তারা ১৭ ডিসেম্বর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে। প্রথম সেমিফাইনালে হারা দলের বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলবে।
এবার মরক্কো অসাধারণ খেলছে। এখনও একটি গোলও প্রতিপক্ষ ফুটবলার মরক্কোকে দিতে পারেনি। কানাডার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ২-১ গোলে জিতে মরক্কো। তাতে বোঝা যাচ্ছে, গোল একটি হজম করেছে। তবে সেই গোলটি প্রতিপক্ষ দলের কারো পাঁ থেকে আসেনি। আত্মঘাতি গোল হয়েছে। আত্মঘাতী গোলটি করেন মরক্কোর ডিফেন্ডার নায়েফ আগের্দ। শেষ ষোলতে গোল না খেয়ে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় মরক্কো। গোলরক্ষক গোলকিপার ইয়াসিন বোনু বিপদজনক। গোল তো হজম করেনি না, আবার টাইব্রেকারে গোল আটকে দিয়ে প্রতিপক্ষের স্বপ্ন শেষ করে দেন। স্পেনের ৩টি শট আটকে দেন বোনু। আর পর্তুগালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তো মরক্কো যে ১-০ গোলে জিতে, তা তো বোনুর দক্ষতাতেই। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, বোনুকে হার মানাতে না পারলে ফ্রান্সের বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।
অবশ্য ফ্রান্সের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারে কিনা মরক্কো, সময়ই বলে দেবে। প্রথমবার সেমিফাইনালে খেলছে মরক্কো। আর ফ্রান্সতো গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল। এবারও যেভাবে গতি দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছে, তাতে মরক্কোর স্বপ্ন চুড়মার হয়ে যেতে পারে। শেষ ষোলতে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেয়ার পর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় ফ্রান্স। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠে। আবার দলের সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের গতি নিয়ে তো শুধু চর্চাই হচ্ছে। বিশ^কাপে একের পর এক গোল করে চলেছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে গোল পাননি। এছাড়া জেতা সব ম্যাচেই গোল করেছেন। গত বিশ্বকাপে ফ্রান্স যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তখনও এমবাপ্পে ৪ গোল করেছেন। এবার ১ গোল বেশি করা হয়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম শিরোপাধারী দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলতে নামছে ফ্রান্স। প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়া মরক্কোকে হারালে ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুই আসরে ফাইনালে খেলবে ফ্রান্স।
বিশ্বকাপে প্রথমবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও মরক্কো। অফিসিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচে এখন পর্যন্ত দুই দল পাঁচবার পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে। একবারও জিততে পারেনি মরক্কো। প্রথম দেখা ১৯৮৮ সালে, যেখানে ২-১ গোলে জিতেছিল ফরাসিরা। দুই দলের সবশেষ সাক্ষাৎ ২০০৭ সালে। প্যারিসে প্রীতি ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়।
ফ্রান্সের যে গতি, ফুটবলাররা যেভাবে মাঠ মাতাচ্ছেন, তাতে মরক্কোর পর্ব সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে যেতে পারে। আর যদি এর বিপরিত ঘটে, তাহলে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠার সঙ্গে ফাইনালে উঠে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজেদের নাম লিখে ফেলতে পারে মরক্কো। দেখা যাক, শেষপর্যন্ত সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে ওঠে কোন দুটি দল।