মিথুন আশরাফ – কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনু সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ফুটবলার থেকে একটি গোলও হজম করেননি। অথচ শেষ চারে এসে ফ্রান্সের কাছে ২ টি গোল খেয়ে বসেন। থিও হারনান্দেজ, কোলো মুয়ানির গোল করেন। তাতে করে সেমিফাইনালেই দম ফুরায় ইতিহাস গড়া মরক্কোর। আর ফ্রান্স ২-০ গোলে জিতে উঠে যায় ফাইনালে। টানা দুইবার ফাইনালে উঠে ফ্রান্স। আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এখন ১৮ ডিসেম্বর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে লড়াই করবে ফ্রান্স।
খেলার ৫ মিনিটেই হারনান্দেজ গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন (১-০)। রুদ্ধশ্বাস প্রথমার্ধ কাটে। মাত্র পাঁচ মিনিটেই এগিয়ে যায় ফ্রান্স। তবে হাল ছাড়েনি মরক্কো। অনবদ্য কিছু সুযোগ দু-দলেরই মিলে। দু-দলের দুটি শট পোস্টে লাগে।
ম্যাচের ৭৯ মিনিটে কোলো মুয়ানির গোলে ব্যবধান বাড়িয়ে নিল ফ্রান্স। পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নেমেই গোল করলেন তিনি। এই গোলের ফলে ২-০ এগিয়ে গেল ফ্রান্স। ২-০ গোলেই জিতে ফ্রান্স।
মরক্কো একমাত্র দল ছিল, যাদের জালে সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত প্রতিপক্ষ বল পাঠাতে পারেনি। গোল একটি হজম করে। তবে সেই গোলটি প্রতিপক্ষ দলের কারো পাঁ থেকে আসেনি। আত্মঘাতি গোল হয়েছে। এবার সেমিফাইনালে আফ্রিকার ঝান্ডা ধরে রাখা মরক্কো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল হজম করেছে। জিতলেই ফাইনালে ওঠার সুযোগের ম্যাচে হেরে গেছে।
বাংলাদেশ সময় গভীর রাত ১ টায় আল বাইত স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্স ও মরক্কো শেষ চারে লড়াই করে। এর চেয়ে বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারলোনা মরক্কো। ফ্রান্স এগিয়ে গেল।
শেষ ষোলতে গোল না খেয়ে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় মরক্কো। গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনু বিপদজনক। গোল তো হজম করেনি না, আবার টাইব্রেকারে গোল আটকে দিয়ে প্রতিপক্ষের স্বপ্ন শেষ করে দেন। স্পেনের ৩টি শট আটকে দেন বোনু। আর পর্তুগালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তো মরক্কো যে ১-০ গোলে জিতে, তা তো বোনুর দক্ষতাতেই। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, বোনুকে হার মানাতে না পারলে ফ্রান্সের বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। কিন্তু বোনু এবার ফ্রান্সের কাছে এসে হার মেনেছে।
প্রথমবার সেমিফাইনালে খেলে মরক্কো। আর ফ্রান্সতো গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল। এবারও যেভাবে গতি দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে থাকে ফ্রান্স, তাতে মরক্কোর স্বপ্ন চুড়মার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শেষ ষোলতে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেয়ার পর কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় ফ্রান্স। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠে। আবার দলের সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের গতি নিয়ে তো শুধু চর্চাই থাকে। বিশ্বকাপে একের পর এক গোল করে যাচ্ছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে গোল পাননি। এছাড়া জেতা সব ম্যাচেই গোল করেছেন। গত বিশ্বকাপে ফ্রান্স যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তখনও এমবাপ্পে ৪ গোল করেছেন। এবার সেমিফাইনালের আগে ১ গোল বেশি করা হয়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম শিরোপাধারী দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলতে নামে ফ্রান্স। প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়া মরক্কোকে হারালেই ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুই আসরে ফাইনালে খেলত ফ্রান্স। খেলবে ফাইনালেই।
বিশ্বকাপে প্রথমবার মুখোমুখি হয় ফ্রান্স ও মরক্কো। অফিসিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচে এখন পর্যন্ত দুই দল পাঁচবার পরস্পরের বিপক্ষে খেলে। একবারও জিততে পারেনি মরক্কো। প্রথম দেখা ১৯৮৮ সালে, যেখানে ২-১ গোলে জিতেছিল ফরাসিরা। দুই দলের সবশেষ সাক্ষাৎ ২০০৭ সালে। প্যারিসে প্রীতি ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। ফ্রান্সের যে গতি, ফুটবলাররা যেভাবে মাঠ মাতান, তাতে মরক্কোর পর্ব সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি এর বিপরিত ঘটত, তাহলে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠার সঙ্গে ফাইনালে উঠে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজেদের নাম লিখে ফেলতে পারত মরক্কো। তা করতে পারলো না। ফ্রান্স আবারও বাজিমাত করল।