স্পোর্টস ডেস্ক: নাজমুল হাসান পাপনের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে এক যুগ পর ফাঁকা হয়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির চেয়ারটি। তবে সেটি বেশিক্ষণ ফাঁকা থাকেনি, পদত্যাগের কিছুক্ষণ পরই নতুন সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বুধবার (২১ আগস্ট) জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বিসিবির অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন। এদিন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ৮ বোর্ড পরিচালকের উপস্থিতিতে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুরোনো ৮ পরিচালকের সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাচিত দুই প্রতিনিধি ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম যোগ দিলে পূর্ণ হয় কোরাম।
সভার শুরুতেই বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করার পর নতুন সভাপতি নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে। এ সময় উপস্থিত ১০ পরিচালকের ভোটে ফারুক আহমেদ দেশের ১৫তম বোর্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, লক্ষ্য অনেক বড়। বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধানতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেশের সম্মান বৃদ্ধি করা, দেশের মুখ উজ্জ্বল করা। দলকে ভালো জায়গায় দেখতে চাই। কীভাবে ভালো জায়গায় দেখব? এটা অনেক বড় ব্যাপার।
বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট এই দুটি বিষয় মাথায় রাখলে ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি, আপনারা জানেন, দেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। অনেক দিন ধরে অনেক কাজ হয়েছে আবার হয়নি। আমাদের প্রথম ও প্রধানতম দায়িত্ব হচ্ছে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশকে এগিয়ে নেয়া। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট এটা মাথায় রাখলে কাজ অনেক সহজ হবে।
ফারুক আহমেদ ১৯৬৬ সালের ২৪ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি জনপ্রশাসন বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স পাস করেন। ১৯৮৮ সালের ২৯ অক্টোবর এশিয়া কাপ টুর্নামন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে তার অভিষেক ঘটে। একই দিন অভিষেক হয় ওয়াহিদুল গণি ও আকরাম খানেরও। মূলত ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটার ছিলেন ফারুক আহমেদ। ছিলেন ডানহাতি অফব্রেক বোলারও। ১৯৯০ সালে চন্ডিগড়ে তিনি ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন ভারতের বিরুদ্ধে। এ খেলায় তৃতীয় উইকেট জুটিতে আতহার আলী খানের সঙ্গে ১০৮ রান করেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে সফল ছিলেন ফারুক আহমেদ। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩-৯৪ সালে জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয় তাকে। তিনি ১৯৯৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। জাতীয় দলের ক্যারিয়ারের সবশেষ ম্যাচ খেলেন তিনি ১৯৯৯ সালের ২৭ মে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১০৫ রান করেন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিনি ২১ ম্যাচ থেকে সংগ্রহ করেন ৪৩৭ রান।
নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক আহমেদ খেলোয়াড় জীবন শেষে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবালদের মতো কিছু তরুণের মধ্যে অসীম সম্ভাবনা দেখে তাদের জায়গা করে দেন জাতীয় দলে। যখন তিনি দায়িত্ব ছাড়েন তখন তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা হয়ে উঠছেন দলের ভরসা।
এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৩ সালে তিনি প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান। কিন্তু বিসিবির দ্বি-স্তরের নির্বাচক কমিটি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন তিনি। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনের ইতিহাসও বটে।
তার অধীনে ২০১৫ বিশ্বকাপে সাফল্যের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্দান্ত সিরিজ জয় হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বোর্ডে দেখা যায় বিশৃঙ্খলা, কাজের মধ্যে হস্তক্ষেপ শুরু হয়। সিস্টেমেও গলদ দেখা দেয়, শুরু হয় বোর্ড কর্তাদের হস্তক্ষেপ। ২০১৬ সালে দায়িত্ব ছাড়ার পর এসব অনিয়মের কথা বিভিন্ন সময় জানিয়েছিলেন স্পষ্টভাষী ফারুক আহমেদ।