স্টাফ রিপোর্টার:- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ফাইভ-জি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে করণীয় বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালা আয়োজন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
মঙ্গলবার আয়োজিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন দুটি শিল্প বিপ্লব পুরোপুরি ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লব আংশিক মিস করার পর পৃথিবীতে ২০০৮ সালে ডিজিটাল বিপ্লবের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ। এর তিন বছর পর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শব্দটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছে। আট বছর পর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণা প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল হাইওয়ে বা ডিজিটাল সংযোগের মহাসড়ক তৈরি করছি। একই সাথে ইন্টারনেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনে আমাদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে আইপিভি (ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন)-৬ এ আমাদেরকে এখনই যেতে হবে । সেই সাথে টেলিকম ও ইন্টারনেট সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি প্রযুক্তির লেটেস্ট ভার্সন ফাইভ জি‘র প্রয়োজনীয়তা এবং এর প্রয়োগের ক্ষেত্র সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিটিআরসিসহ ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাসমূহকে নির্দেশ দেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদেরকে ডাটার যুগে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ সম্পদের নাম হচ্ছে ডাটা। আমি চাই আমার ডাটা আমার দেশে থাকবে। মন্ত্রী ডাটা নিজের হাতে রাখার ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন । ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল উল্লেখ করে বলেন, পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তি কেবল কথা বলার প্রযুক্তি নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,শিল্প, বাণিজ্য , কৃষি ও মৎস চাষসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তনের সূচনা করবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার জনক জনাব মোস্তাফা জব্বার কম্পিউটারে বাংলা ভাষা প্রবর্তনে স্টিভ জবসের উদ্ভাবনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে করে বলেন, তিনি কম্পিউটারে ইংরেজী ভাষার বাইরে অন্য ভাষা প্রয়োগের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৮৭ সালে কম্পিউটারে বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশের যাত্রা শুরু করতে পেরিছি। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে অবিসংবাদিত রাজনীতিক শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসুচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ অতীতের তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করে প্রযুক্তিতে শতশত বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বিশ্বে নেতৃত্বের থাকার সক্ষমতা অর্জন করেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে একটি যন্ত্র সভ্যতার বিপ্লব আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জাপানসহ পশ্চিমা বিশ্ব এখন ডিজিটাল মানবিক বিপ্লব তথা ৫ম শিল্প বিপ্লবের বা সোসাইটি ফাইভ পয়েন্ট জিরো‘র কথা ভাবছে। এখন আইটি প্রযুক্তিতেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তিই হবে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল শক্তি। শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে আইটি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে দক্ষ ডিজিটাল মানব সম্পদ হিসেবে তৈরি করতে হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো: খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: মাহবুব-উল-আলম, বিটিসিএল-এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: রফিকুল মতিন এবং বিটিআরসি‘র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ । অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বুয়েট-এর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফাইভ-জি প্রযুক্তি প্রয়োগের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি যাতে মানুষের জীবনধারায় ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে সে লক্ষে সংশ্লিষ্টদের আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।
বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ডাটা এনালাইসিস হবে সবচেয়ে দামি। তিনি চ্যালেন্জ মোকাবেলায় নিজেদের উপযোগী করে তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।