Search
Close this search box.

সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি-তৃতীয়দিন : আগুন জ্বলেই চলেছে : আরও দুইজন নিহত

সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি-তৃতীয়দিন : আগুন জ্বলেই চলেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সোনাইছড়িতে কাশেম জুট মিল গেট এলাকায় অবস্থিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লেগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৩ জনের  মৃত্যু হয়। আগুন এখনও নেভানো যায়নি। তিনদিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এখনও আগুন জ্বলছে। কয়েকটি কনটেইনারে আগুন জ্বলছে। সীতাকুন্ড বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে আরও দুটি মরদেহের ভস্মীভূত অংশবিশেষ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিটের দিকে এই দুটি লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় এ নিয়ে গত তিন দিনে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। সোমবার পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হয়েছিলেন।

বৃহত্তর কুমিল্লা ফায়ার স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‌‌‘আমরা ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কিছু কনটেইনারের ভেতরে এখনো আগুন জ্বলছে।’

তিনি  আরও বলেন, ‘টানা ৪৮ ঘণ্টা আমরা কাজ করে চলেছি। এখন যে কনটেইনারগুলো জ্বলছে সেগুলোতে গার্মেন্টসপণ্য রয়েছে বলে নিভছে না। এ কারণে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আশা করছি, আজকের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণ আসবে। আগুন নিভে গেলে সেখানে সরাসরি প্রবেশ করে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। সেখানে যদি কোনো মরদেহ থেকে থাকে তা উদ্ধার করা হবে।’

ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি বড় ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। চারটি কেমিক্যালযুক্ত কনটেইনার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে। তবে সেই কনটেইনারগুলোতে পরবর্তী সময়ে বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। মূল আগুন নিয়ন্ত্রণের পরে কেমিক্যালযুক্ত এই কনটেইনার নিয়ে কাজ করবে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞ ইউনিট।

ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, এখনো ২৮টি কনটেইনারের মধ্যে তাঁরা অনবরত পানি ছিটিয়ে চলেছেন। ২৮টি কনটেইনারের ভেতরে থেমে থেমে আগুন জ্বলছে। উত্তপ্ত হয়ে আছে কনটেইনারগুলো। এর মধ্যে রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনারও আছে। তবে সেগুলো এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। জ্বলতে থাকা যেসব কনটেইনারে রপ্তানি পোশাক পণ্য আছে বলে তাঁরা মনে করছেন, সেগুলোর দরজা খুলে ভেতরে থাকা পণ্যের আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনার শনাক্ত করতে না পারার কারণে তাঁদের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে।

সীতাকুণ্ডে দগ্ধ আরও তিনজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে। ওই তিনজনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তিন ব্যক্তি হলেন এনামুল (২৫), বদরুজ্জামান রুবেল (১৮) ও মো. সুমন (৩৪)। বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ এই তিনজনসহ মোট ১৯ জনকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সোমবার আগুন ও বিস্ফোরণে নিহতদের শনাক্তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডিএনএ টেস্ট শুরু হয়। তাতে করে ২২ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়। তাদের হস্তান্তরও করা হয়। প্রায় ২০০ জনের ওপরে মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

আরও পড়ুন : সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ : ২২ জনের মরদেহ হস্তান্তর

নিহতদের স্বজনেরা পুলিশের সহায়তায় ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দেন। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পর পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাবার খোঁজে ডিএনএ নমুনা দিতে মায়ের কোলে চড়ে হাসপাতালে এসেছে সাত মাসের ফাইযা রহমান। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিএম কনটেইনার ডিপোতে আইসিটি দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সোবহানের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরই মেয়ে ফাইযা।

সোমবার সেনাবাহিনী জানায়, চারটি কনটেইনারে নাকি রাসায়নিক রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তা নিশ্চিত হয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনী গতকাল রোববার থেকে দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, আরও চারটি কনটেইনারে রাসায়নিক রয়েছে। যেসব কনটেইনারে ধোঁয়া ও আগুন দেখা যাচ্ছে, তা বন্ধের চেষ্টা চলছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাকি কাজ করা হবে।’

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে ৪১ জনের। তাই নিহত মানুষের সংখ্যা ৪১।’ ভয়াবহ এ দূর্ঘটনায় পরিচয় শনাক্ত হওয়া নিহতরা হলেন- বাঁশখালী উপজেলার ফরিদুল আলমের ছেলে মুমিনুল হক (২৪), মাহমুদুর রহমানের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৪), দক্ষিণ বালিয়াপাড়ার সিহাব উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান (২৩), চালিয়াপাড়ার আব্দুল আজিজের ছেলে রবিউল আলম (১৯), হাসান আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ (২৩), আব্দুল রশিদের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫), নিজাম উদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫), নিজাম উদ্দিনের ছেলে সুমন (২৪), আবুল কাশেমের ছেলে ইব্রাহিম (২৭), মো. আসিফের ছেলে নয়ন (২২), দক্ষিণ হালিশহর এলাকার আব্দুল ছবুরের ছেলে হারুনুর রশিদ (৩৫), সামসুল হকের ছেলে মনিরুজ্জামান (৩২), সাত্তারের ছেলে ফারুক জমাদার (৫৫), আমিন উল্লাহ’র ছেলে শাহাদাত উল্লাহ (৩০), শাহ আলমের ছেলে শাহাদাত হোসেন (২৯), সোহরাব মিয়ার ছেলে তৌহিদুল হাসান (৪১), জাফর আহমদের ছেলে রিদুয়ান (২৪), আব্দুল সত্তার তরফদারের ছেলে শাকিল তরফদার (২২) চিত্তরঞ্জন চাকমার ছেলে নিপন চাকমা (৪৫), কামরুল মিয়ার ছেলে রানা মিয়া (২২), সোলাইমান মিয়ার ছেলে আফজাল (২০) ও আবু ইউসুফের ছেলে সালাউদ্দিন কাদের (৫০)।

বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ফায়ার সার্ভিসের শনাক্তকৃতরা হলেন- কুমিরা ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. রানা মিয়া, নার্সিং এটেনডেন্ট মনিরুজ্জামান, ফায়ার ফাইটার আলাউদ্দিন, ফায়ার ফাইটার শাকিল তরফদার, লিডার মিঠু দেওয়ান, সীতাকুন্ড ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী , ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম, লিডার নিপন চাকমা।

আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারানো দুই ফায়ার ফাইটারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। শেষকৃত্যের আগে তাদের দুইজনকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় ফায়ার সাভির্সের তরফ থেকে। নিহত মিঠু দেওয়ান ও নিপন চাকমা দু’জনই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সন্তান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ