মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের ছন্নছাড়া বোলিংয়ে বাংলাদেশ হেরেছিল। সিরিজে পিছিয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ। এবার বোলাররাই দক্ষতা দেখান। ম্যাচ জেতান। বিশেষ করে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের (৫/২০) অসাধারণ বোলিংয়ে ৭ উইকেটে জিতে বাংলাদেশ। সাথে ওপেনার লিটন কুমার দাসের (৫৬) ব্যাটিং নৈপুন্যে সহজ জয় পায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-১ সমতাও আসে। ২ আগস্ট তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারাতে পারলেই সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ।
প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও টস হারে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং করে জিম্বাবুয়ে। তবে এবার আর খুব সুবিধা করতে পারেনি স্বাগতিকরা। হারারে স্পোর্টস ক্লাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৫ রান করে জিম্বাবুয়ে। সৈকতের বোলিং দ্যুতিতে ৩১ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায়। সেখান থেকে সিকান্দার রাজা ৬২ রানের ইনিংস খেলে জিম্বাবুয়েকে এতদুর নিয়ে যান। জবাবে লিটনের ৫৬, আফিফ হোসেন ধ্রুবর অপরাজিত ৩০, নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭.৩ ওভারে ১৩৬ রান করে জিতে বাংলাদেশ। প্রথম টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। এবার ৩৩ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৬ রান করেন লিটন। ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে সিরিজে ১-১ সমতা আনে বাংলাদেশ। এখন সিরিজ জয়ের অপেক্ষা।
বাংলাদেশ শুরু থেকে ধীর গতিতে চলার নীতি নেয়। প্রথম টি-টোয়েন্টি হারায় সতর্ক থাকেন ব্যাটসম্যানরা। সাবধানে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে ওপেনার লিটন কুমার দাস ঠিকই বাউন্ডারি হাকাতে থাকেন। স্কোরে রানও জমা করতে থাকেন। মুনিম শাহরিয়ার উইকেট আকড়ে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলের ৩৭ রান হতেই মুনিমকে (৭) বোল্ড করে দেন এনগারাভা।
লিটনের সাথে এবার জুটি বেধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন এনামুল হক বিজয়। দুইজন মিলে দলকে ৭৮ রানেও নিয়ে যান। এমন সময়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিটন। ৩০ বলে ৫০ রান করার পর আরও ৬ রান স্কোরে যোগ করে উইলিয়ামসের বলে এলবিডব্লিউ হন লিটন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে। ৩ রান হতেই বিজয়ও (১৬) আউট হয়ে যান। চাপ তেমন তৈরী হয়নি। লিটন ও বিজয় যে দ্বিতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়ে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন। শেষে আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রানের জুটি গড়ে ১৫ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জেতান। সেই সাথে সিরিজও সমতায় আসে।
প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত স্পিন দ্যুতি দেখান। প্রথম বলেই রেগিস চাকাভাকে ও ওভারের শেষ বলে ওয়েসলি মাধেভেরেকে (৪) আউট করে দেন সৈকত। মাধেভেরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬৭ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে বাংলাদেশকে ডোবান। জিম্বাবুয়ে যে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২০৫ রানের বড় স্কোর গড়ে, বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে, তার শুরুটা মাধেভেরের ঝড়ো ইনিংসেই হয়। তাতে করে ১৭ রানে জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। এবার তাকে খুব বেশিদুর যেতে দেননি মোসাদ্দেক। ২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুয়ে।
সৈকত এক ওভার করতে আসেন, আর একটি করে উইকেট নিতে থাকেন। নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে আরেকটি উইকেট নিয়ে ফেলেন সৈকত। এবার অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে (১) আউট করে দেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবার ২ উইকেটের বেশি শিকার করেন সৈকত। এরআগে ২০১৮ সালে দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়েছিলেন সৈকত। সৈকত নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে শন উইলিয়ামসকেও (৮) কট এন্ড বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান। ২০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুয়ে। সৈকতও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেট শিকার করে নেন। এরআগে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি, কোন ফরমেটেই ৪ উইকেট নিতে পারেননি সৈকত। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। এবার বোলিংয়ে সব কিছুকেই পেছনে ফেলেন তিনি।
ম্যাচটিতে নিজের চতুর্থ ও শেষ ওভার করতে এসেও আরেকটি উইকেট নেন সৈকত। এবার মিল্টন শোম্বাকে (৩) আউট করে দেন। ৫ উইকেট শিকার করে নেন সৈকত। সেই সাথে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সৈকত। টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট শিকার করা ইলিয়াস সানি, মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসানের কাতারে নাম লেখান। সৈকতের অসাধারণ বোলিংয়ে ৩১ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুয়ে।
দ্রুতই ৫ উইকেট পড়লেও প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অপরাজিত ৬৫ রান ও ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক হওয়া সিকান্দার রাজা ঠিকই উইকেটে থিতু হতে থাকেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ৪৪ বলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পঞ্চম হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। দলের ৫ রানে ২ উইকেট পড়ার পর ব্যাট হাতে নামেন। সেখান থেকে রায়ান বার্লকে সাথে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৮০ রানের জুটি গড়ে দলকে অনেকদুর এগিয়ে দেন। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে বার্লকে (৩২) বোল্ড করে দেন মেহেদি হাসান। ততক্ষনে জিম্বাবুয়ে ১১১ রানে পৌছে যায়। এরপর ইনিংসের ১০ বল বাকি থাকতে রাজা আউট হন।
দলকে ১১৬ রানে নিয়ে গিয়ে ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হন রাজা। রাজাকে আউট করে দেন মুস্তাফিজ। ৫৩ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করে আউট হন রাজা। দলের ৩১ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর মনে হয়েছিল ১০০ রানও করতে পারবেনা জিম্বাবুয়ে। কিন্তু রাজার হাফসেঞ্চুরিতে দল শতরান অতিক্রম করে। লুক জংউই (১১*) শেষে ছক্কা হাকিয়ে শেষ বলে দুই রান নিয়ে দলকে ১৩৫ রানে নিয়ে যান।
১১তম ওভারে গিয়ে ৫০ রান করে জিম্বাবুয়ে। ১৫তম ওভারে গিয়ে ৮৭ রান স্কোরে যোগ হয়। ১৭তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাকিয়ে দলকে শতরানে নিয়ে যান রাজা। শেষ ৫ ওভারে ৪৮ রান করে জিম্বাবুয়ে। শেষ ৯ ওভারে ৮৫ রান করে জিম্বাবুয়ে মজবুত স্কোরই গড়ে। তবে এবার আর জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
একাদশে দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। জিততেই হবে, না হলে সিরিজ হার হয়ে যাবে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৭ রানে হারায় তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে না জিতলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হার হবে। জিতলে সিরিজ ১-১ সমতায় আসবে। এমন ম্যাচে পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার নাসুম আহমেদকে একাদশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পেসার হাসান মাহমুদ ও স্পিনার মেহেদি হাসানকে একাদশে নেওয়া হয়। তাতে করে জয়ও পায় বাংলাদেশ। সৈকত একাই ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতান। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৫৬ রানের ইনিংস। বাংলাদেশও জিতে সিরিজে সমতা আনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি
জিম্বাবুয়ে ইনিংস ১৩৫/৮; ২০ ওভার; রাজা ৬২, বার্ল ৩২, জংউই ১১*; সৈকত ৫/২০, হাসান ১/২৬, মুস্তাফিজ ১/৩০।
বাংলাদেশ ইনিংস ১৩৬/৩; ১৭.৩ ওভার; লিটন ৫৬, মুনিম ৭, বিজয় ১৬, আফিফ ৩০*, শান্ত ১৯*; রাজ ১/১৮।
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (বাংলাদেশ)।