ফিরোজ মান্না
ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম হত্যাকান্ড বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সব সদস্যরা হত্যা করে। বিদেশে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। এই বর্বর হত্যাকান্ডের পেছনে সরাসরি জড়িতদের বিচার হয়েছে। কিন্তু যারা নেপথ্যের কারিগর তাদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে বঙ্গবন্ধু হত্যা কান্ড নিয়ে একটি কমিশন গঠন করার। প্রতি বছরই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে। এবারও আইনমন্ত্রী কমিশন গঠনের বিষয়ে বলেছেন, এ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে। কমিশন গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মুখোশ উম্মোচন হবে।
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকান্ডের পর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড বোস্টার ওয়াশিংটনে যে গোপন তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন, সেখান থেকে গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ তার শেষ অংশ তুলে ধরা হলো। রাষ্ট্রদূত বোস্টার তারবার্তায় উল্লেখ করেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাত্র আট দিন মাথায় জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হিসেবে পদোন্নতি পান (২৪শে আগস্ট)। হত্যাকান্ডের সময় ও তার পরের কয়েকদিন চুপচাপই ছিলেন জিয়া। তবে সেদিন হঠাৎ মেজর জেনারেল কে. এম. শফিউল্লাহকে সরিয়ে তার ডেপুটি জিয়াকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয় খুনীদের ক্রীড়ানক খন্দকার মোশতাক। চব্বিশে আগস্ট নতুন চিফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়ার ডেপুটি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ব্রিগেডিয়ার এরশাদকে, যে তখন প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে অবস্থান করছিল। পাশাপাশি তাকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে যুক্ত করা হয়। তবে চিফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের বিষয়ে তখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। উভয়েই শেখ মুজিবের আস্থাভাজন ছিলেন। ২৫শে আগস্ট সকালে এই গোপন তারবার্তাটি ওয়াশিংটন পাঠান রাষ্ট্রদূত ডেভিড বোস্টার।
মোশতাক রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে চার জাতীয় নেতাকে (তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান) তার সরকারে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রন জানিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। ৩ নভেম্বর কারাগারে তাদের খুন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। ৪ নভেম্বর থেকে তিনদিন ধরে চলা আরেকটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফ নিহত ও কর্ণেল তাহের গ্রেফতার হন। এবার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন জিয়া। এর আগে ২৪ আগস্টের রদবদলে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ নামে একটি পদ সৃষ্টি করে বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। খলিল জিয়ার চেয়েও সিনিয়র হওয়ায় তাকে তিন বাহিনীর প্রধানের চেয়েও বড় এই নতুন পদ দেয়া হয়। তার স্থলে বিডিআর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয় চট্টগ্রামের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার কাজী গোলাম দস্তগীরকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ফেরার পর থেকে মেজর জেনারেল খলিল রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। কেননা তাকে বিডিআর-এ পাঠানো হয়, যদিও তিনি ব্রিগেডিয়ার থেকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের একসময়ের মন্ত্রী জেনারেল এম. এ. জি ওসমানী মোশতাকের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধান সংশোধনের বিরোধীতা করে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
রাষ্ট্রদূতের পর্যবেক্ষণ
রাষ্ট্রদূত ডেভিড বোস্টারের মতে, ওসমানী বর্ষীয়ান বা সাবেক মন্ত্রী না হলে মোশতাক হয়তো তাকে প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী পদ দিতো। প্রটোকলবিহীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পদ দেয়ার মাধ্যমে এখন থেকে মোশতাক তাকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করতে পারবে। এখন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে ওসমানী হয়তো আপাতত প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।
বোস্টার বলেন, পনেরই আগস্ট শেখ মুজিবকে উৎখাতের পর খুনীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল তার আস্থাভাজন মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে সরিয়ে দেওয়া। সেনাবাহিনীতে তাকে একজন অপেক্ষাকৃত দূর্বল নেতা হিসেবে দেখা হতো। এই সুযোগে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যার ফলে কয়েকজন মেজর অভ্যুত্থান ঘটানোর মতো সুযোগ পায়। অবশ্য কয়েকজন বিশ্লেষক রাষ্ট্রদূতকে বলেন রদবদলের পর সেনাবাহিনী এখন অভ্যুত্থানকারীদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কোন রক্তপাত ছাড়াই পরিস্থিতি শান্ত করা গেছে বলে জানায় মোশতাক। কিন্তু ভারত যদি স্থল বা আকাশপথে হামলা করে তাহলে বাংলাদেশ পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় আমেরিকা তার সরকারকে স্বীকৃতি দিলে ভারত হস্তক্ষেপ করার আগে আরো ভাববে। বোস্টারের মতে ভারত সরকার ইতিমধ্যে অফিশিয়াল বক্তব্যে মুজিব হত্যা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ও নিজস্ব বিষয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। মোশতাক উত্তর দেয় তার আশা ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে নাক গলাবেনা।
স্বীকৃতি লাভে মরীয়া মোশতাক
মোশতাকের অনুরোধে মাত্র এক ঘন্টার নোটিশে ২০শে আগস্টা বিকাল ৩টায় এক বৈঠকে অংশ নিতে দূতাবাসের রাজনৈতিক পরামর্শকসহ বঙ্গভবনে যান বোস্টার। কিন্তু দূতাবাসের কর্মকর্তাকে বাইরে পাঠিয়ে শুধু আমার সাথে আলোচনা করতে চায় মোশতাক। শুরুতেই খুব আগ্রহ নিয়ে বোস্টার কবে দেশে ফিরে যাচ্ছে তা জানতে চায় মোশতাক। পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে শুনে সে খুশি হয়ে যায় এবং বলে যে সে এটাই আশা করছিল! [অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ আগে বোস্টার মোশতাককে বলেছিল সে আমেরিকা ফিরে যাবে, কারন তাকে সিলেকশন বোর্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে]। এরপর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বারবার তার হাত ধরে অনুনয় করছিল। বোস্টারের এক প্রশ্নের জবাবে মোশতাক জানায় আগেরদিন সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বাকশাল তথা এক-দলীয় ব্যবস্থা আর থাকছে না। তবে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বৈঠকের শেষে রাষ্ট্রদূতকে যেকোন সময় বঙ্গভবনে আসার দাওয়াত দেয় মোশতাক, এবং তার পক্ষ থেকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানাতে বোস্টারকে অনুরোধ করে। তবে সেই মুহুর্তে এভাবে শুভেচ্ছা জানানো কূটনৈতিকভাবে সমীচীন কিনা তাও জানতে চায় হতবিহ্বল মোশতাক।
নিজের পর্যবেক্ষণে বোস্টার জানান, ভারতীয়রা সে মুহুর্তে কি করছে তা তার জানা নেই, তবে বাংলাদেশ সরকার কি ভাবছে সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন ওয়াশিংটনের উচিত মেজরদের অনুরোধকে আমলে নেয়া।
১৯৯১ সালের ১০ই জুলাই বিএনপি ক্ষমতায় আসার চার মাস পর রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম ব্রায়ান্ট মিলমের সাথে বিশেষ সেই বৈঠকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর ধারণা পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট সেনাঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে আমেরিকা কোন না কোনভাবে জড়িত ছিল। তবে তার নিজের ধারণা কি ছিল তা এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন এমন অবস্থায় আশির দশকে আমেরিকা সফর করাটা তার জন্য একটা বড় ঝুঁকি হয়ে দেখা দেয়। এ নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরে অনেকেই তার সমালোচনা করে। তবে এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। শেখ হাসিনা মনে করেন হত্যাকান্ডের পরপর আমেরিকার উচিৎ ছিল অভিযোগগুলো গুরুত্বের সাথে দেখা এবং ভুল প্রমাণিত করা। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণকে আস্থায় আনার সুযোগ এখনো আছে। রাষ্ট্রদূত দাবী করেন আমেরিকা কোন দেশে কোন বিশেষ দলের প্রতি সমর্থন জানায় না, বরং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সব সরকারের সাথেই আন্তরিকভাবে কাজ করে। এমনকি তারা কোন দলের সব কর্মসূচীর সাথেও একমত নয়। এর একদিন পর, ১১ জুলাই ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন তারবার্তায় মিলম লেখেন, দুই ঘন্টার সেই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে শেখ হাসিনার প্রাণখোলা কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে তিনি দূতাবাস ও আমেরিকান সরকারের কাছে নিজের ও দলের ভাবমূর্তি আরো ভালো করতে চান।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। তাদের ঢাকাস্থ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ১৯৭২ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে। তাছাড়া ১৯৭৫ সালের শুরু থেকে কয়েকবার ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপনবার্তায় সম্ভাব্য সেনা অভ্যুত্থান সম্পর্কে আশংকা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত ডেভিস বোস্টার। কিন্তু সেসব তথ্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেননি। পরিকল্পনামাফিক বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পরপর খুনীদের ক্রীড়ানক খন্দকার মোশতাকের সরকারকে আমেরিকা স্বীকৃতি দেয় এবং বাংলাদেশে তাদের সকল কর্মকান্ড চালু রাখার ঘোষণা দেয়; এমনকি নভেম্বরে খুনী ফারুক-রশীদকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে আগ্রহ দেখায় আমেরিকা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে নভেম্বরের মধ্যে জিয়া-ফারুক-রশীদ রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে সামরিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করে, যা ওয়াশিংটনকে বিবেচনা করার জন্য বোস্টার সুপারিশ করে।
১৮ আগস্ট নয়াদিল্লীতে আয়োজিত এক শোকসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার বার্তায় বঙ্গবন্ধুকে মহান নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন ভারতের জনগণ বঙ্গবন্ধুকে তাদের একজন বন্ধু হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। সভায় উপস্থিত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সাংসদ ভূপেশ গুপ্ত বলেন আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও সিআইএ’র সমর্থনপুষ্টরাই মুজিবকে খুন করেছে। একই দলের আরেক নেতা রমেশ চন্দ্র এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি সেখানে অনেক সিআইএ’র এজেন্টকে দেখেছেন যারা উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থাগুলোর হয়ে কাজ করছে। এই তথ্য মুজিবকে দেয়া হলে তিনি বলেন এসব কর্মকান্ডের কথা জানেন। এছাড়া কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজেশ্বর রাও, কংগ্রেস সাংসদ সাত পাল কাপুর ও ভায়লার রবিও দাবী করেন ১৫ই আগস্টের সেনাঅভ্যুত্থানে সিআইএ জড়িত ছিল। ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এই খবর ওয়াশিংটনকে জানায় নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম সাক্সবে। অন্যদিকে কলকাতায় কংগ্রেসের এক সভায় প্রিয়রঞ্জন দাশ মুন্সি বলেন মুজিব হত্যা আবারো প্রমাণ করলো এই উপমহাদেশে আমেরিকা ও চীন কতটা তৎপর। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ভারতের মিডিয়াতে একের পর এক এধরনের বক্তব্য ছাপা হওয়ার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লীর আমেরিকান দূতাবাস চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সরকারকে আহ্বান জানায়। তবে সরকার এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
মোশতাক বেশিদিন টিকবে না
আট সেপ্টেম্বর কলকাতার কনসুলার অফিসের কর্মকর্তা কর্নের সাথে আলাপ করছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব অশোক গুপ্ত। বললেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি শান্ত হলেও মোশতাক সরকারের পরিণতি কি হবে বলা যাচ্ছেনা। সেনাবাহিনির একটা অংশ শেখ মুজিবের হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তাদের বিচার দাবী করছে। তাই যদি ঘটে, সেক্ষেত্রে মোশতাকেরও বিচার হবে। অশোক বলেন তার ধারণা সরকার পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়বে। ফলে একাত্তর সালের মতো পশ্চিমবঙ্গকে আবারো একবার উদ্বাস্তু সমস্যা সামাল দিতে হবে। এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর আমেরিকান দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সাথে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিলু সেনের সাক্ষাৎ হয়, যিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনের ভাই এবং দূতাবাসের একজন নির্ভরযোগ্য সূত্র। নিলু সেন বলেন মুজিবের বিকল্প খুঁজে পেতে খুনী সেনা কর্মকর্তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। মোশতাকের আগে তারা চার থেকে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি পদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। এক পর্যায়ে নিলু সেন বলেন, ‘বাজী ধরে বলতে পারি, মোশতাক সরকার বেশিদিন টিকবেনা।’
বোস্টার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পান ১৯৭৪ সালে। এরপর ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত গুয়াতেমালায় রাষ্ট্রদূতের পদে বহাল ছিলেন। ২০০৫ সালের ৭ জুলাই হার্ট এটাকে মারা যান তিনি। নভেম্বরের জেল হত্যা, সেনাবাহিনীতে আবার অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান আর মোশতাকের পতনের পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করলে মুজিব হত্যায় জিয়া, পাকিস্তান ও আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে আবারো গুঞ্জন শুরু হয়। সে সময় ভারতীয় কংগ্রেসের বাংলা পত্রিকা যুগান্তরের ১৮ নভেম্বর সংখ্যার প্রথম পাতায় বোস্টারকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়; শিরোনাম ছিল ‘চিলির মূল হোতা এখন ঢাকায়’। পাঠকদের কাছে তাকে অন্যরূপে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানায় নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত।