স্টাফ রিপোর্টার : ‘সাধারণ মানুষ যেকোন সমস্যায় তোমাদের কাছে ছুটে আসবে। তাদের সেবা দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’-কথাগুলো বলেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ‘৪০ বছর পর কনস্টেবল নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ‘বেস্ট অফ দি বেস্ট’ প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে। তোমাদের কাছ থেকে দেশের জনগণ সর্বোচ্চ সেবা আশা করে। তোমাদের সেবার মানসিকতা নিয়ে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে।’
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেকোন সমস্যায় তোমাদের কাছে ছুটে আসবে। তাদের সেবা দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। কখনও বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কাছে নতি স্বীকার না করে দায়িত্ব পালনের জন্য তোমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতীয় স্বার্থ, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও সামাজিক স্বার্থকে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৬৪তম ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ প্রধান আরও বলেন, পুলিশের প্রধান কাজ দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন, মাদকের অপব্যবহার ও বিস্তার রোধ করা। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও সাফল্য ঈর্ষণীয়।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এক গৌরবের নাম। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধকারী বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। করোনা অতিমারিকালে পুলিশের আত্মত্যাগ ও অনবদ্য ভূমিকা আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
আইজিপি আরও বলেন, সমাজ পরিবর্তনশীল। সে কারণে অপরাধও পরিবর্তনশীল। নতুন অপরাধ ও কৌশল মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করেছে পুলিশ। ফরেনসিক ল্যাব, ডিএনএ পরীক্ষা, সাইবার ক্রাইম, ফিনান্সিয়াল ক্রাইম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী ও শিশু ডেস্ক, বিট পুলিশিং, জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ সহ আরও অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে হয়রানির শিকার নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় চালু করা হয়েছে ‘সাইবার সাপোর্ট পর উইমেন’ নামে বিশেষ সেবা।
আইজিপি বলেন, আমরা কোনো পুলিশ সদস্যের অন্যায় বরদাশত করবো না। যদি কোনো পুলিশ সদস্য অন্যায় করে তার দায়ভার পুলিশ বাহিনী নেবে না। আমরা খারাপ কাজ করে ‘খবরের শিরোনাম’হতে চাই না। ভালো কাজ দিয়ে খবরের শিরোনাম হতে চাই। জনগণের কাছের মানুষ হতে চাই, পাশের মানুষ হতে চাই।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত টিআরসি ব্যাচের প্রশিক্ষণ কুচকাওয়াজে আরও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) বেগম জীশান মীর্জা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এ কে এম এমরান হোসেন ভূঞাসহ উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাসহ রাজশাহী বিভাগের উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
এর আগে আইজিপি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সারদা পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৬৪তম টিআরসি ব্যাচের ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান বক্তব্য দেন। ভাষণ শেষে একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিক তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী টিআরসিদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করেন ড. বেনজীর আহমেদ। ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণরত টিআরসিদের মধ্য আইন বিষয়ে শ্রেষ্ঠ টিআরসি নির্বাচিত হন বিশাল এবং মাঠ বিষয়ে শ্রেষ্ঠ টিআরসি হয়েছেন মো. সিয়াম সিদ্দিকী সাগর। এবারের প্যারেডে মোট ৪৫৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন।