Search
Close this search box.

নিষেধাজ্ঞার পেছনে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে – আইজিপি

নিষেধাজ্ঞার পেছনে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে - আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার – বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার পেছনে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। এজন্য ৪টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। জ্যাকসন হাইটসের কাছে গুলশান টেরেস মিলনায়তনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আইজিপি এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, আমি মার্কিন প্রশাসন অথবা আমেরিকানদের দোষারোপ করতে চাই না। কারণ, এটা করেছে তারাই, যারা সত্তর সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়নি, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৪টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত নিষেধাজ্ঞার জন্য।’

নিউ ইয়র্কে এক নাগরিক সংবর্ধনায় বক্তৃতায় বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ওই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, তারা অভিযোগ করেছেন যে, ২০০৯ সাল থেকে নাকি র‌্যাব কর্তৃক ৬০০ লোক গুম হয়েছেন। অথচ আমি র‌্যাবে ঢুকেছিলাম ২০১৫ সালে। তাহলে আমাকে কেন ওই তালিকায় নেওয়া হয়েছে?

আইজিপি বলেন, ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাংশনের জন্যে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাব, এর সাবেক প্রধান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সে সময় বলা হচ্ছিল, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়েই জাতিসংঘের পুলিশ প্রধান সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন তিনি। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ প্রধানদের এই সম্মেলন হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল তাতে অংশ নেয়। আইজিপি বেনজীর আহমেদ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব মু আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ উপমহাপরিদর্শক নাসিয়ান ওয়াজেদ ও সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিলেন এ প্রতিনিধি দলে।

সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত ওই নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন আইজিপি। ‘যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটি’র ব্যানারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল মুনিরুল ইসলামও ছিলেন মঞ্চে।

গতবছর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় যুক্তরষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে র‌্যাবের মাধ্যমে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ’ রয়েছে, যা আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ‘খাটো করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলেছে’।

সেখানে বলা হয়, বেসরকারি সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, র‌্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে ছয় শতাধিক গুম এবং ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ছয়শ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। বাংলাদেশ সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নিউ ইয়র্কে যাওয়ার আগেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই’ যুক্তরাষ্ট্র ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

পাঁচ বছর র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে ২০২০ সালে বাংলাদেশ পুলিশের নেতৃত্বে আসা বেনজীর আহমেদ নিষেধাজ্ঞার পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে সরাসরি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে নিউ ইয়র্কের সংবর্ধনায় তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। আইজিপি বলেন, বড় সত্য হচ্ছে ২০০৯ সালে আমি এই নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে চাকরিতে ছিলাম। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যে ৬০০ লোক গুমের অভিযোগ করা হয়েছে তাদের কোনো তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।

‘দেশের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের বিরুদ্ধে এবং অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা রুখে দিতে হবে’ এমন আহ্বান জানিয়ে সংবর্ধনা সমাবেশে আইজিপি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছি। এখন চলছে মুক্তির লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এই লড়াইয়ে জিততেই হবে।

আইজিপি বলেন, ২২ জন তথ্য সন্ত্রাসী রয়েছে। এদেরকে জবাব দিতে হবে। আপনি যে মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন, সেই বিশ্বাসে যদি চ্যাম্পিয়ন হোন, তাহলে আপনাকেই সেটি পালন করতে হবে। ‘এক সময় মনে করা হয়েছিল যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি আমরা’ এই প্রশ্ন রেখে পুলিশ প্রধান বলেন, আশা করা হয়েছিল সমাজের তথ্যচিত্রটি সবিস্তারে উঠে আসবে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যত ভুয়া, আজগুবি তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।

তথ্য সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে, তারা মানবতা বিরোধী যতসব অপপ্রচার চালাচ্ছে-মন্তব্য করে আইজিপির আরও বলেন, নোংরা জিনিস ফেসবুকে দেখামাত্র ফ্লাশ করা দরকার। এর বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে উপস্থাপন করতে হবে-তাহলেই মিথ্যার পরাজয় ঘটবে।

ড. বেনজীর বলেন, বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত করার চলমান লড়াইয়ে আমি সকলের সাথে রয়েছি। দেশটিকে সবার আগে রেখে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার পথকে সুগম রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার উদাত্ত আহ্বানও জানান আইজিপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ