স্টাফ রিপোর্টার – কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, এ মাংসে সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রার অনেক কম পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পিআইডির কনফারেন্স রুমে ব্রয়লার মুরগির মাংসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল ও অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে কি না, এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংসে, হাড়ে এবং কম্পোজিটে মূলত দুটি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং ৩টি হেভি মেটালের (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে; যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারের ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটালের পরিমাণ কম।
তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কি না, এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রচারণায় দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তারা ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, এসব কারণে ব্রয়লার শিল্পের ওপর একটি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ২০২০ সালে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় আমরা লক্ষ করেছি যে রোগটির প্রকোপের প্রথম দিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ ব্রয়লার মাংস খাওয়া অনেক কমে যায়।
দেশে ব্রয়লার খাতকে খুবই সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাহিদা বাড়াতে পারলে দেশে যে পরিমাণ খামার ও অবকাঠামো আছে, তার পুরোপুরি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। সে জন্য মানুষের কাছে মুগরির মাংস জনপ্রিয় করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রীর মতে, এটি করতে পারলে একদিকে আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠন সহজতর হবে, অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির বাজার দ্রুত বিকশিত হবে। কারণ, মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন বাড়ালে কর্মসংস্থান বাড়বে। সেই সঙ্গে মুরগি রফতানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনে, আমিষের চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়ার বিষয়ে প্রচারণা ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, পোলট্রি খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। একসময় গ্রামে নিজস্ব আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন করা হতো। এখন এটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। এ খাত দেশের মানুষের আমিষের একটি বড় চাহিদা মেটায়। ফলে নিজ উদ্যোগে অনেকেই এ খাতে এসেছেন আর গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। তবে কিছু ভুলভ্রান্তিমূলক তথ্যের কারণে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এ জন্য আমরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেছি।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পোলট্রি খাত বড় ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পোলট্রি খাতকে আরও আধুনিক করার চেষ্টা করছি। এ খাতের বিকাশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পোলট্রি খাদ্য আমদানিতে শুল্কে রেয়াত দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছি।
এ সময় কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশীদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্তকর্তা ও প্রধান গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম, বিআরসির সাবেক সদস্য পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম এবং গবেষণা দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।