স্টাফ রিপোর্টার – রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামীকার। বিকেল ৪টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। আর এই মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়েই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, তা জানা যাবে। তা নিশ্চিত হয়ে যাবে।
ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি (আগামীকাল) বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনের (সিইসি) কার্যালয়ের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী, তার ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে।
যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করবে, তিনিই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন। কারণ, অন্য দলগুলো রাষ্ট্রপতি পদে কাউকে মনোনয়ন দেবে না। তাই জানা যাচ্ছে।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদ নিয়ে ভাবনা নেই বিএনপির। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তাই স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করবে, তিনিই হবেন রাষ্ট্রপতি। অন্য দলগুলো রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দিলেও কাজ হবে না। আর তাই বিএনপি এ পদ নিয়ে ভাবছেনা। গণমাধ্যমে বিএনপির নেতাদের মন্তব্য থেকে তাই জানা যাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেমন বলেছেন, সংসদে আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। সুতরাং তারা যাকে পছন্দ করবেন তিনিই রাষ্ট্রপতি হবেন। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আমরা কিছুই ভাবছি না। আমরা এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আন্দোলনে রয়েছি। আগে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা যাকে পছন্দ করবেন, যিনি তার হুকুম মানবেন, যিনি তার তল্পিবাহক হবেন—তাকেই তিনি রাষ্ট্রপতি বানাবেন। সুতরাং এটা নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা-ভাবনা, কোনো আগ্রহ, কোনো মাথাব্যথা নেই।
এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না জাতীয় পার্টি (জাপা) তা জানিয়ে দিয়েছে। ২৬ জন সংসদ সদস্য থাকলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা ভাবছে না বিরোধী দল জাপা। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। এ রকম কোনো প্রস্তুতিও নেই। তাই প্রার্থী নিয়েও কোনো ভাবনা নেই।
সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের কোনো নাগরিক জীবনে দুবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন। এটা পরপর বা যে কোনো সময়ে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর। এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও বিধান অনুযায়ী তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
গত ২৫ জানুয়ারি এ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনে নির্বাচনী কর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
এ নির্বাচনে ভোটার সংসদ সদস্যরা। সেই হিসেবে ভোটার ৩৪৩ জন সংসদ সদস্য। ভোটের জন্য জাতীয় সংসদের একটি বৈঠক ডাকা হয়। আর একক প্রার্থী হলে আইন অনুযায়ী তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সেক্ষেত্রে সংসদের বৈঠকের প্রয়োজন হয় না। সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর দেশে এখন পর্যন্ত একবারই রাষ্ট্রপতি পদে ভোটাভুটির প্রয়োজন পড়েছিল। ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফেরার পর থেকে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে ভোটের প্রয়োজন পড়েছিল।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনে মনোনয়নপত্র দাখিল সম্পর্কে বলা আছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিনে ও সময়ের মধ্যে কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে ওই পদের জন্য মনোনীত করে নির্বাচনী কর্তার কাছে একটি মনোনয়নপত্র দিতে পারবেন, যে মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসাবে তাঁর স্বাক্ষর থাকবে এবং সমর্থক হিসাবে অন্য একজন সংসদ-সদস্যের স্বাক্ষর থাকবে; সেইসঙ্গে যিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত হতে যাচ্ছেন, তাঁরও উক্ত মনোনয়নে সম্মতিসূচক স্বাক্ষরিত বিবৃতি থাকবে। তবে প্রস্তাবক বা সমর্থক হিসাবে কোন সংসদ-সদস্য একটির বেশি মনোনয়নপত্র সই করবেন না।
মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। আওয়ামী লীগ কাকে এই পদে মনোনয়ন দিচ্ছে তা নিয়ে সবার আগ্রহ থাকলেও এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীনরা কারো নাম প্রকাশ করেনি। গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠক করেছিল আওয়ামী লীগ। সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষমতা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়।