স্পোর্টস রিপোর্টার : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জিতেছে। জয়টি মিলেছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে। ক্যারিয়ারে প্রথমবার বোলিংয়ে এত বড় সাফল্য পেয়েছেন সৈকত। ৪ ওভার বোলিং করে ২০ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেছেন। বাংলাদেশের ডানহাতি কোন বোলার প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট শিকার করতে পারেন। এ সাফল্য কিভাবে আসল? সৈকত বলেছেন, কখনোই কল্পনা করেননি ৫ উইকেট পাবেন। তবে ডট বলের পরিকল্পনা থেকেই এ সাফল্য এসেছে।
সৈকত জানান, ‘আমি আগে কখনো কল্পনা করিনি ৫ উইকেট পেতে পারি। বোলিং করেছি ডট বলের পরিকল্পনায়। নিজের পরিকল্পনায় স্থির থেকেছি। শুধুমাত্র ভালো জায়গায় বোলিং করতে চেয়েছি। এ জন্য সফল হয়েছি।’
নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছেন সৈকত, ‘বোলিংয়ে আমার রান ১৯-ও হতে পারত আবার ২১ রানও হতে পারত। আমি চেষ্টা করেছি ভালোভাবে শেষ করার এবং সেটাই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। সাকিব ভাইকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। এই ফরম্যাটের জন্য কিংবদন্তি সে। তার যে ইকোনমি ও ৫ উইকেট আছে (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ রানে ৫ উইকেট), সেটা আমারও আছে, সেই জায়গা থেকে আমি বলবো আমি ভাগ্যবান।’
সৈকত আরও বলেন, ‘অধিনায়ক যখন বল দিয়েছিল, আমার মাথায় ঘুরছিল কীভাবে রানটা আটকে রাখতে পারি প্রথম থেকে। আগের দিন দেখেছি এই উইকেটে দুইশ রান হয়েছে। ওই জায়গা থেকে আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম ১৬০-১৭০ রানে যদি রাখতে পারি অবশ্যই সেটা আমাদের দলের জন্য ভালো। ওই পরিকল্পনাই ছিল। আর কিছু চেষ্টা করিনি। ৫ উইকেটের জন্য বোলিং করিনি। আমার পরিকল্পনা ছিল ডট বল করার। ভালো জায়গায় বল করেছি বলে ফল পেয়েছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৭ রানে হারায় সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিতে সিরিজে ১-১ সমতা আনে। জয়ের মজবুত ভীত আসলে সৈকতই তৈরী করে দেন। ৩১ রানে জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেট পড়ে। সৈকতই ৫ উইকেট নেন।
প্রথম ওভারের প্রথম বলেই জিম্বাবুয়েকে ধাক্কা দেন সৈকত। প্রথম বলেই রেগিস চাকাভাকে ও ওভারের শেষ বলে ওয়েসলি মাধেভেরেকে (৪) আউট করে দেন সৈকত। সৈকত এক ওভার করতে আসেন, আর একটি করে উইকেট নিতে থাকেন। নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকেও (১) আউট করে দেন। ২ ওভারেই ৩ উইকেট শিকার করে ফেলেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবার ২ উইকেটের বেশি শিকার করেন সৈকত। এরআগে ২০১৮ সালে দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়েছিলেন সৈকত।
সৈকত নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে শন উইলিয়ামসকেও (৮) কট এন্ড বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান। ২০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুয়ে। সৈকতও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেট শিকার করে নেন। এরআগে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি, কোন ফরমেটেই ৪ উইকেট নিতে পারেননি সৈকত। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। এবার বোলিংয়ে সব কিছুকেই পেছনে ফেলেন তিনি।
শুধু তাই নয়, ম্যাচটিতে নিজের চতুর্থ ও শেষ ওভার করতে এসেও আরেকটি উইকেট নেন সৈকত। এবার মিল্টন শোম্বাকে (৩) আউট করে দেন। ৫ উইকেট শিকার করে নেন সৈকত। টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট শিকার করা বাংলাদেশের ইলিয়াস সানি (২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/১৩), মুস্তাফিজুর রহমান (২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে কলকাতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/২২) ও সাকিব আল হাসানের (২০১৮ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫/২০) কাতারে নাম লেখান সৈকত। ইলিয়াস, মুস্তাফিজ ও সাকিব; তিনজনই বাঁমহাতি বোলার। মুস্তাফিজ ছাড়া বাকি দুইজনই স্পিনার। সৈকতও স্পিনার। তবে ডানহাতি। ডানহাতি বোলার হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশের জার্সিতে সৈকতও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫ উইকেট শিকার করার রেকর্ড গড়েছেন। ম্যাচ সেরাও হন সৈকত। বোলিং ওপেনও করেন তিনিই।
ম্যাচসেরা সৈকত জানান, ‘দারুণ লাগছিল (বোলিং ওপেন করা)। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল আমি ইনিংস শুরু করব। অধিনায়ক আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন আমাকে। গত ম্যাচের হার নিয়ে খুব বেশি কথা বলিনি। শুধু বলেছি-দল হিসেবে খেললে অবশ্যই জিতব।’ সেই জয় পেয়েছেও বাংলাদেশ। সৈকতের রেকর্ড গড়া নৈপুন্যেই জয় মিলেছে। ডট বলের পরিকল্পনা থেকে এই রেকর্ড গড়া সাফল্য মিলেছে।