Search
Close this search box.

মিরাজের কাছে হারল ভারত

আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে মিরাজ

মিথুন আশরাফ – নিশ্চিত হারা ম্যাচ। সেখান থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ১ উইকেটে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৮৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৩৬ রানেই নেই ৯ উইকেট। ১২৮ থেকে ১৩৬ রানে, ৮ রানের মধ্যে নেই ৫ উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে দিলেন মিরাজ। মিরাজের কাছেই হারল ভারত। নিজে একা করলেন ৩৯ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৮ রান। ম্যাচ জয়ী শটটিও মিরাজই খেললেন। শেষ উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই একমাত্র জয়। প্রথম ওয়ানডেতে জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। লিটন কুমার দাসও অধিনায়কত্বে প্রথম জয়টি পেয়ে গেলেন।

নয় মাস পর আবার ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে নামলেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নেমেই দ্যুতি ছড়ান। ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করে নেন। যা ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকার হয় সাকিবের। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের এমন বোলিংয়ে ভারতও মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে বিপাকে পড়ে যায়। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৪ উইকেট শিকারী হয়ে যান সাকিব।

সাকিব ১০ ওভার বোলিং করে ২ মেডেনসহ ৩৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করে নেন। ভারতও ৪১.২ ওভারে ১৮৬ রান করতেই অলআউট হয়ে যায়। লোকেশ রাহুল যদি ৭৩ রানের ইনিংস না খেলতেন, তাহলে ১৫০ রানও হয়ত করতে পারত না ভারত। জবাব দিতে নেমে ২৬ রানেই ২ উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসান দারুণ খেলছিলেন। ৪৮ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু এমন সময়ে দলের ৭৪ রানে লিটন (৪১) আউট হয়ে যান। দলের ৯৫ রানে গিয়ে ২৯ রান করে যখন সাকিবও আউট হন, তখন যেন ম্যাচের নিয়ন্ত্রন হারাতে থাকে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খুব ভালো খেলতে থাকেন। কিন্তু দলের ১২৮ রান হতেই শারদুল ঠাকুরের বলে রিয়াদ (১৪) আউট হয়ে যান। পরক্ষনেই মোহাম্মেদ সিরাজের গতির কাছে হার মেনে বোল্ড হয়ে যান মুশফিকও (১৮)। খেলা ভারতের নিয়ন্ত্রণে যেন পুরোপুরিই চলে যায়। যখন দলের ১৩৪ রানে আফিফ হোসেন ধ্রুবও (৬) আউট হয়ে যান, তখন বাংলাদেশ ম্যাচ হারের মধ্যেই পড়ে যায়। ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায় বাংলাদেশের। দেখতে দেখতে ১৩৬ রানের মধ্যে ৯ উইকেটের পতনও ঘটে যায়। তখনও জিততে ৫১ রান লাগে। হাতে থাকে ১ উইকেট। শেষে মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান মিলে যা করার করেন। মিরাজতো ভারতের বারোটাই বাজিয়ে দিতে থাকেন। ১৩৬ রানে ৯ উইকেট পড়ার পর মিরাজ-মুস্তাফিজ জুটির শুরু হয়। সেখান থেকে এই জুটি ম্যাচ শেষ করেন। মিরাজ এতটাই দায়িত্ব নিয়ে খেলেন আর মুস্তাফিজ উইকেট আকড়ে খেলেন। সুযোগ বুঝে বাউন্ডারিও হাকাতে থাকেন। দেখতে দেখতে জয়ের বন্দরেও পৌছে যায় বাংলাদেশ। ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৬ ওভারে, ২৪ বল বাকি থাকতে ১৮৭ রান করে জিতে বাংলাদেশ। মুস্তাফিজ ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। ইতিহাস রচনা করা জয়ই হয়। ভারত ক্রিকেটারদের হতবাক করে দিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন মিরাজ।

ম্যাচটিতে শুধু সাকিবই নন, পেসার এবাদত হোসেনও (৪/৪৭) ঝলক দেখান। গতির ঝড় তুলেন। সাকিব ও এবাদত মিলেই আসলে ভারতের ইনিংসের বারোটা বাজিয়ে দেন। আর ১টি উইকেট যদি নিতে পারতেন সাকিব, তাহলে মুস্তাফিজুর রহমানকে (৬/৪৩) পেছনে ফেলে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচে সেরা বোলার হতে পারতেন সাকিব। তা হননি। তবে গত বছর মার্চের পর আবার ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে নেমে সাকিব বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কি জিনিস! ভারতের বিপক্ষে এরআগে ২৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার ছিল মাশরাফি বিন মতুজার। সাকিব এখন সেরা হয়ে গেলেন। চতুর্থবারের মতো ৫ উইকেট শিকার করেন সাকিব।

বাংলাদেশের মাটিতে ২০১৫ সালের পর আবার ওয়ানডে খেলতে নামে ভারত ক্রিকেট দল। ২০১৫ সালে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার প্রথম ওয়ানডেতে বোলিং করতে এসেই প্রথম ওভারেই ২ উইকেট শিকার করেন সাকিব। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে এক ওভারে সাজঘরে ফেরেন। তাতেই ম্যাচে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো হয়ে যায়। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দর, শারদুল ঠাকুর ও দিপাক চাহারকেও আউট করে দেন সাকিব। তাতেই ৫ উইকেট শিকার হয়ে যায়। ভারতের বিপক্ষে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট শিকারের সঙ্গে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেটও শিকার করার কৃতিত্ব গড়েন সাকিব।
সাকিবের এমন বোলিংয়ের পর আশা জাগে জেতার। কম রানে যে অলআউট হয়ে যায় ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন (৪১) ছাড়া উপরের সাড়ির ব্যাটসম্যানরা কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। শেষে মিরাজ ও মুস্তাফিজ হাল না ধরলে এই ম্যাচ বাংলাদেশের জেতার কথা নয়। মিরাজতো ইতিহাস সেরা ইনিংসই যেন খেলে ফেললেন। তাতে ভারতও হাবুডুবু খেয়ে গেল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ