মিথুন আশরাফ – প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও মেহেদি হাসান মিরাজ ব্যাটিং দ্যুতি ছড়ান। এবার তো ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিই হাকিয়ে ফেলেন। ৮৩ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রান করেন। বল হাতেও নেন ২ উইকেট। তাতে করে ভারতকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫ রানে হারায় বাংলাদেশ। ভারতকে প্রথম ওয়ানডেতে হারানোর পর সিরিজেও হারালেন মিরাজ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে সবশেষ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজেও জিতেছিল বাংলাদেশ। এবারও জিতল।
মিরাজের ব্যাটিং ঝলকে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৭১ রান করে। শুধু মিরাজই নন, ম্যাচটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। ৯৬ বলে ৭ চারে ৭৭ রানের ইনিংস উপহার দেন। মিরাজ ও রিয়াদ মিলে সপ্তম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটিও গড়েন। যা কিনা ভারতের বিপক্ষে যে কোন উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি। বল হাতে ওয়াশিংটন সুন্দর ৩ উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৬৬ রান করে ভারত। বল হাতে এবাদত ৩টি, মিরাজ ও সাকিব আল হাসান ২টি করে উইকেট নেন।
আট নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েন মিরাজ। বিশ^ ক্রিকেটে দুইজন ব্যাটসম্যানই আট নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন। এরমধ্যে একজন হলেন, আয়ারল্যান্ডের সিমি সিং। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গতবছর জুলাইয়ে ৯১ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেছিলেন। মিরাজ দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন কৃতিত্ব গড়লেন। তবে একদিন দিয়ে মিরাজই এগিয়ে থাকছেন। তিনি যে সিমি সিংয়ের চেয়েও বল কম খেলে সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ব্যাটিং ধ্বস নামে। এরপর মিরাজ হাল ধরেন। বুধবার ৬৯ রানেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় (১১), লিটন কুমার দাস (৭), নাজমুল হোসেন শান্ত (২১), সাকিব আল হাসান (৮), মুশফিকুর রহিম (১২) ও আফিফ হোসেন ধ্রুব (০) আউট হয়ে যান। এরপর রিয়াদের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে যোগ দেন মিরাজ। শুরু হয় রান স্কোরে যোগ করা।
ধীরে ধীরে দলকে শতরানে নিয়ে যান দুইজন। ১৫০ রানও করে ফেলে বাংলাদেশ। ২০০ রানও হয়ে যায়। চাপ ভারতের ঘাড়ে দিতে থাকে বাংলাদেশ। কোন চেষ্টা করেও কাজ হয় না। রিয়াদ ও মিরাজ মিলে অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন। দুইজনই হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। ৫৫ বলে মিরাজ ৫০ রান করে ফেলেন। ৭৪ বলে রিয়াদও ৫০ রান করে ফেলেন। যখন রিয়াদ ৭৭ রান করেন, দলের ২১৭ রান হয়, তখন আউট হয়ে যান রিয়াদ। তখন খেলার ৪ ওভার বাকি থাকে। এই সময় থেকে নাসুম আহমেদ ব্যাট হাতে নেমেই দুটি বাউন্ডারি হাকান। মিরাজও একের পর এক বাউন্ডারি হাকাতে থাকেন। যখন ৮১ রানের বেশি হয়ে যায়, তখন মিরাজ ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে ব্যাটিং করে ফেলেন। এরআগে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৮১ রান করেছিলেন মিরাজ। যা ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে ব্যাটিং ছিল। শেষে ৫ ওভারেই ৬৮ রান তুলে বাংলাদেশ। রিয়াদ আউটের পর মিরাজ ও নাসুম মিলে শেষ ২৩ বলেই ৫৪ রান স্কোরে যোগ করেন। এরমধ্যে নাসুম ১১ বলে ১৮ রান করেন। আর মিরাজ ১২ বল খেলে ৩৬ রান নেন।
শেষে গিয়ে যখন ইনিংস শেষ হওয়ার ১ বল বাকি থাকে, তখন সেঞ্চুরি হতে মিরাজেরও ১ রান বাকি থাকে। ১ রান নিয়ে সেঞ্চুরি করে ফেলেন মিরাজ। দলেরও ২৭১ রান হয়ে যায়। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের প্রথম কোন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি হাকান। অষ্টম উইকেটে ব্যাটিং করতে নেমে এরআগে মিরাজই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮১ রান করেছিলেন। এবার নিজের রেকর্ডই নিজেই ভেঙ্গে ফেলেন। ভারতকেও ডোবান।
বাংলাদেশের মতই ভারতের ব্যাটিং দুর্দশা হয়। ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারায় ভারত। বিরাট কোহলি (৫), শিখর ধাওয়ান (৮), ওয়াশিংটন সুন্দর (১১) ও লোকেশ রাহুল (১৪) আউট হন। তখন মনে করা হয়েছিল, ভারতের দ্রুতই বারোটা বেজে যাবে। কিন্তু এরপর শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল মিলে অনেকদুর চলে যান। স্কোর মজবুত করতে থাকেন। ১০৭ রানের জুটিও গড়েন শ্রেয়াস ও অক্ষর। শ্রেয়াস ৮২ রানও করে ফেলেন। আতঙ্ক ছড়ান। এমন মুহুর্তে শ্রেয়াসকে না আটকালে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন মিরাজই। শ্রেয়াসকে আউট করে দেন। এরপরই ৫ উইকেট হারানো ভারতের যেন হারের সম্ভাবনা ভালোভাবেই তৈরী হয়ে যায়। হাফসেঞ্চুরি করার পরই যখন অক্ষরও (৫৬) আউট হয়ে যান, তখন খেলা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ইনজুরিতে পড়েও ব্যাট হাতে নামেন রোহিত শর্মা। দলকে জয়ের একেবারে কাছেও নিয়ে যান। ১৯তম ওভারে আবার দুইবার ক্যাচ আউট হওয়া থেকেও বাঁচেন। অপরাজিত ৫১ রানও করেন। শেষ ওভারে ভারতের জিততে যখন ২০ রান দরকার, তখন দুই ছক্কা ও এক চারে ১৪ রান নিয়ে ফেলেন রোহিত। শেষপর্যন্ত শেষ বলে গিয়ে আর কোন রান নিতে পারেননি। বাংলাদেশ ৫ রানে জিতে যায়। মুস্তাফিজ যে ১৮তম ওভারে কোন রান দেননি, তা বিশেষ কাজে লাগে। মিরাজ যে দলের বিপদ দুর করে সেঞ্চুরি করে মজবুত ভীত এনে দেন, তাতেই জিতে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ও হয়ে যায়।