মিথুন আশরাফ – প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ৩৮ রান করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাতেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন। মিরাজের এই কাব্যিক ইনিংসেই যে ভারতকে প্রথম ওয়ানডেতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তো মিরাজ ঐতিহাসিক ইনিংসই খেলেছেন। সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন। ৮৩ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রান করেন। তাতে করে ভারতকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এবারও ম্যাচ সেরা হন মিরাজ। প্রথম ওয়ানডেতে ১ উইকেটে জেতার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫ রানে জিতে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের পর আবার ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়। সিরিজ জেতার পর মিরাজ জানান, কখনোই ভাবেননি যে সেঞ্চুরি হবে।
আট নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েন মিরাজ। বিশ^ ক্রিকেটে দুইজন ব্যাটসম্যানই আট নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন। এরমধ্যে একজন হলেন, আয়ারল্যান্ডের সিমি সিং। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গতবছর জুলাইয়ে ৯১ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেছিলেন। মিরাজ দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন কৃতিত্ব গড়লেন। তবে একদিন দিয়ে মিরাজই এগিয়ে থাকছেন। তিনি যে সিমি সিংয়ের চেয়েও বল কম খেলে সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৯ রানেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মিলে দলকে জয়ের ভীত গড়ে দেন। মিরাজ ও রিয়াদ মিলে সপ্তম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটিও গড়েন। যা কিনা ভারতের বিপক্ষে যে কোন উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি। রিয়াদ ৭৭ রান করে দলের ২১৭ রানে গিয়ে আউট হন। মিরাজের যখন ৮১ রানের বেশি হয়ে যায়, তখন মিরাজ ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে ব্যাটিং করে ফেলেন। এরআগে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৮১ রান করেছিলেন মিরাজ। যা ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে ব্যাটিং ছিল। শেষে ৫ ওভারেই ৬৮ রান তুলে বাংলাদেশ। রিয়াদ আউটের পর মিরাজ ও নাসুম মিলে শেষ ২৩ বলেই ৫৪ রান স্কোরে যোগ করেন। এরমধ্যে নাসুম ১১ বলে ১৮ রান করেন। আর মিরাজ ১২ বল খেলে ৩৬ রান নেন।
শেষে গিয়ে যখন ইনিংস শেষ হওয়ার ১ বল বাকি থাকে, তখন সেঞ্চুরি হতে মিরাজেরও ১ রান বাকি থাকে। ১ রান নিয়ে সেঞ্চুরি করে ফেলেন মিরাজ। দলেরও ২৭১ রান হয়ে যায়। অষ্টম উইকেটে ব্যাটিং করতে নেমে এরআগে মিরাজই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮১ রান করেছিলেন। এবার নিজের রেকর্ডই নিজেই ভেঙ্গে ফেলেন। ভারতকেও ডোবান।
ম্যাচ শেষে তৃপ্ত মিরাজ জানান, ‘না, এটা কখনোই ভাবিনি যে সেঞ্চুরি হবে। তবে দলের জন্য খেলেছি, ফ্লো ছিল, আল্লাহর অনুগ্রহ ছিল অশেষ, হয়ে গেছে।’
মিরাজ বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং আমাকে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে ফোকাস করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিভাবে খেলতে হয় সে সম্পর্কে কোচ আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন।’
মিরাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন ভারত কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও। সিরিজ হারের পর তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদেরও সুযোগ ছিল। কোনো সন্দেহ নেই কয়েকবার আমাদের সামনে সুযোগ এসেছিল। তবে আমি কৃতিত্ব দিব বাংলাদেশ দলকে। বিশেষ করে মেহেদি হাসান এ সিরিজে দুর্দান্ত খেলেছে।’
গত ৪ ডিসেম্বর ও আজকের ম্যাচের চালচিত্র প্রসঙ্গ টেনে রাহুল দ্রাবিড় বলে ওঠেন, ‘যদিও পরিবেশ ও পরিস্তিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরতিমুখি। তারপরও মেহেদী হাসান মিরাজ অসাধারণ ব্যাটিং করেছে । মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে মিরাজের জুটিটাও দারুণ কাজে দিয়েছে।’
মিরাজের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে ভারতীয় হেড কোচ বলেন, ‘শেষ ১০ ওভারে তারা (বাংলাদেশ) ১০০ রান তুলেছে। আর তাতেই আমাদের সর্বনাশ হয়েছে। আমি অবশ্যই বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দেব। তারা ভাল খেলেছে এবং সত্যিকার ফলই পেয়েছে।’