Search
Close this search box.

সিরিজ হারের পর বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিল ভারত

সিরিজ হারের পর বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিল ভারত

ইশানের বিশ্বরেকর্ড, কোহলির সেঞ্চুরি

 

মিথুন আশরাফ – ভারতকে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে হারাতে পারলেই ইতিহাস গড়ত বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ভারতকে কোন সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করত। বাংলাওয়াশের শিকার হতো ভারত। কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডেতে উড়ে গেল বাংলাদেশ। একের পর এক ক্যাচ মিসের সুযোগ নিয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি হাকান ইশান কিশান। বিরাট কোহলিও সেঞ্চুরি হাকান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৯০ রানের রেকর্ড জুটিও গড়েন ইশান ও কোহলি। সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে রেকর্ড ৪০৯ রানও করে ভারত। ২২৭ রানের বড় ব্যবধানেও জিতে ভারত। তাতে করে ২০১৫ সালের মতো এবারও ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ হাতছাড়া হলো। এবারও বাংলাদেশকে ইতিহাস গড়তে দিল না ভারত। তবে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বাংলাদেশই।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে খেলতে নামার আগেই ভারতকে প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যথাক্রমে ১ উইকেট ও ৫ রানে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে নেয়। তৃতীয় ওয়ানডেতে যদি বাংলাদেশ জিতত, তাহলেই ইতিহাস গড়া হয়ে যেত। এরআগে কখনোই ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে সুযোগ এসেছিল। সেবার দুই দলের মধ্যকার বাংলাদেশের মাটিতে সবশেষ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হয়। সেই সিরিজে বাংলাদেশ প্রথম দুই ওয়ানডে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে। প্রথমবার ভারতকে সিরিজে হারানোর সঙ্গে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও মিলে। কিন্তু বাংলাদেশ পারেনি। এবারও হলো না। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা যেভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন, মনে হয়েছিল হয়ে যাবে। কিন্তু ভারত ব্যাটসম্যানরা এমনভাবে ঘুরে দাড়ালেন, বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিলেন।

আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ভারত রানের পাহাড় গড়ে। ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৪০৯ রান করে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ইনজুরিতে খেলতে না পারায় ইশান একাদশে সুযোগ পান। সুযোগ পেয়েই ইশান কিষান একাই ক্যারিয়ার সেরা ২১০ রান করেন। মাত্র ১২৬ বলে ডাবল সেঞ্চুরি হাকিয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও হন ইশান। এর আগে ১৩৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। ইউনিভার্স বসের চেয়ে ১২ বল কম খেলে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন ইশান। বিরাট কোহলিও (১১৩) সেঞ্চুরি হাকান। বল হাতে সাকিব আল হাসান, এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ ২টি করে উইকেট শিকার করে নেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে দলীয় সর্বোচ্চ রানটি এখন ভারতেরই। এরআগে ২০০৫ সালে নটিংহ্যামে বাংলাদেশের বিপক্ষে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৯১ রান করেছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের মাটিতে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০১১ সালে ভারতই দলীয় সর্বোচ্চ ৩৭০ রান করেছিল। এবার নিজেদের রেকর্ডের সঙ্গে সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় ভারত।

পাহাড়সমান রানের টার্গেটের জবাব দিতে নেমে ৩৪ ওভারে ১৮২ রান করতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪৭ রানেই এনামুল হক বিজয় (৮) ও লিটন কুমার দাস (২৯) সাজঘরে ফিরেন। এরপর সাকিব ও মুশফিকুর রহিম মিলে দলকে ৭৩ রানে নিয়ে যান। এমন সময়ে মুশফিক (৭) বোল্ড হয়ে যান। সাকিব (৪৩), ইয়াসির আলী (২৫) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২০) যা একটু চেষ্টা করেন। শেষে তাসকিন আহমেদ (১৭*) ও মুস্তাফিজুর রহমান (১৩) একটু ঝলক দেখান। তবে ১৮২ রানেই দম ফুরায়। শারদুল ঠাকুর ৩ উইকেট শিকার করে নেন।

শুরুতে উইকেট হারালেও এরপর ক্যাচ মিসের সুযোগ পেয়ে ইশান ও কোহলি মিলে ধ্বংসযজ্ঞ চালান। দলের ৩৫ রানে কোহলি ১ রানে ছিলেন। শর্ট মিড উইকেটে কোহলির সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। আবার যখন কোহলি ২২ রানে থাকেন, তখনও মিডঅফে কোহলির ক্যাচ ধরতে পারেননি লিটন। কোহলির মতো ব্যাটসম্যান যদি এমন সুযোগ পান, তাহলে কী আর ধ্বংস ছাড়া কিছু হতে পারে? কোহলি শেষপর্যন্ত ৮৫ বলে ১০০ রান করার পর ৯১ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১৩ রান করে আউট হন। ক্যারিয়ারের ৪৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাকান কোহলি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ৪টি সেঞ্চুরিও হাকান।

কোহলি আউটের আগেই আসলে বাংলাদেশ বোলারদের বিধ্বস্ত করে দেন ইশান। ৪৯ বলে ৫০ রান করার পর ৮৫ বলে ১০০ রান করেন। এরপর ১০৩ বলে ১৫০ রান করার পর ১২৬ বলে ২০০ রানও করে ফেলেন। ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাকান ইশান। ভারত ক্রিকেটারদের মধ্যে শচিন টেন্ডুলকার (১টি ডাবল সেঞ্চুরি, ২০০*), বীরেন্দর শেবাগ (১টি ডাবল সেঞ্চুরি, ২১৯), রোহিত শর্মার (৩টি ডাবল সেঞ্চুরি, ২০৯, ২৬৪, ২০৮*) পর ইশান চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি হাকান। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম কোন ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরি হাকান। এরআগে জিম্বাবুয়ের চার্লস কভেন্ট্রি (১৯৪*) ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছিলেন। বাংলাদেশের মাটিতে ২০১১ সালে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৮৫ রানের সেরা ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ^কাপজয়ী ক্রিকেটার শেন ওয়াটসন। ইশান সেই রেকর্ডও ভেঙ্গে দেন। বাংলাদেশের মাটিতে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম কোন ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরি করে। এবার ইশান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান।

অথচ ইশানও নতুন জীবন পান। ৮৪ রানে নতুন জীবন পেয়ে কি ব্যাটিংটাই না করেন ইশান। ২০তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে তুলে মেরেছিলেন ইশান। মিড উইকেট থেকে দৌড়ে ওয়াইড লং অনের কাছাকাছি গিয়ে এক হাতে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু বল তার ডান হাত থেকে ছুটে পড়ে বাম হাতের বাহুতে। সেখান থেকে ফের ডান হাতে ধরার আগে মাটিতে পড়ে যায় বল। শুরুতেই অনিশ্চিত ছিলেন সাকিব। সফট সিগনাল নট আউট দিয়ে টিভি আম্পায়ারের কাছে পাঠান হয় সিদ্ধান্ত। টিভি রিপ্লে দেখে আসে নট আউটের সিদ্ধান্ত। তখন ১৫০ রানও করতে পারেনি ভারত। এমন সুযোগ কী আর হাতছাড়া করা যায়। মারমুখি হয়ে ব্যাটিং করতে থেকে শেষে ইশান ১৩১ বলে ২৪ চার ও ১০ ছক্কায় ২১০ রান করে আউট হন।

ইশান আউটের আগে ভারতের রেকর্ড জুটি হয়ে যায়। ভারতের হয়ে দারুণ একটি কীর্তি গড়েন ইশান কিষান ও বিরাট কোহলি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের জুটির রেকর্ড এখন তাদের। বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডেতে ভারতের আগের সেরা জুটিতেও ছিল কোহলির নাম। অজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে ২০১৪ সালে তৃতীয় উইকেটে ফতুল্লায় ২১৩ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। এবার দ্বিতীয় উইকেটে কোহলির সঙ্গে ইশানের জুটি ভেঙে দিয়েছে সেই রেকর্ড। দুইজন মিলে শেষপর্যন্ত ২৯০ রানের জুটি গড়েন। রানের দিক দিয়ে ভারতের তৃতীয় সেরা জুটিও হয় এটি।

একটা সময় মনে হয়েছিল ৪৫০-৫০০ রানও হয়ে যেতে পারে। ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের পর কোহলি সেঞ্চুরি হাকিয়ে আউট হলে রানের গতি কমে। ১০৪ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারায় ভারত। তবে রান আকাশচুম্বি হয়ে যায়। ক্যাচ মিসের খেসারত দেয় বাংলাদেশ।

পাহাড়সম ৪১০ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে ১৬ ওভার আগেই খতম। এরআগে কখনো কোন দলের বিপক্ষে ৪০০ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি ৩৫০ রানও করতে পারেনি। ২০১৯ সালের বিশ^কাপে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩৩৩ রান করে, সেটিই সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর হয়ে থাকে। আর ৩২২ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার ধারেকাছেও যেতে পারল না। শেষ ম্যাচে এসে এমন ডুবে গেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। তবে সিরিজ জয় আগেই হওয়াতে রক্ষা মিলেছে। ভারত শুধু বড় ব্যবধানে জিতে সিরিজে ব্যবধান ১-২ করতে পেরেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ