মিথুন আশরাফ – বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হয়েছে বুধবার। টেস্টের প্রথমদিনটি বাংলাদেশের হতে পারত। যদি ক্যাচ মিসের মিছিলে না নামতেন বাংলাদেশ ফিল্ডাররা। বিশেষ করে নুরুল হাসান সোহান ও এবাদত হোসেন মিলেই ৩টি ক্যাচ হাতছাড়া করেন। তাতে করে প্রথমদিন যেখানে আরও উইকেট নিতে পারত বাংলাদেশ, সেখানে ৬ উইকেটে দিন শেষ করে ভারত। করে ২৭৮ রান। এরপরও ক্যাচ মিসের মহড়াতেও ভারতকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ। স্পিনার তাইজুল ইসলাম একাই ৩ উইকেট শিকার করে নেন। মেহেদি হাসান মিরাজ নেন ২ উইকেট।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করে ভারত। শুরুতেই বিপদে পড়ে ভারত। ৪৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। শুভমান গিল (২০), লোকেশ রাহুল (২২) ও বিরাট কোহলি (১) আউট হয়ে যান। স্পিনার তাইজুল ইসলাম অসাধারণ বোলিং করেন। গিল ও কোহলিকে আউট করে দেন। রাহুলের উইকেটটি শিকার করেন পেসার খালেদ আহমেদ। ভারত চাপে পড়ে যায়।
সেই চাপ দুর করার চেষ্টা করেন চেতশ^র পুজারা ও ঋষভ পন্থ। প্রথম সেশন তারা কাটিয়ে দিতে পারেন। প্রথম সেশনে ৮৫ রান করে ভারত। তবে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। দ্বিতীয় সেশনে এসে আরও উইকেট পড়তে পারত। যদি সোহান একাই দুটি ক্যাচ মিস না করতেন। দ্বিতীয় সেশন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান করে ভারত। দলের যখন ১১২ রান হয়, তখন পন্থকে (৪৬) আউট করে দেন মিরাজ। এরপর পুজারা ও শ্রেয়াস আইয়ার মিলে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করে যান। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগে পুজারা ও আইয়ার, দুইজনই সাজঘরে ফিরতে পারতেন। কিন্তু ১২ রানে থাকা পুজারা ও ৩০ রানে থাকা আইয়ারের ক্যাচ ধরতে পারেননি উইকেটরক্ষক সোহান।
যেই ‘নতুন জীবন’ পান, বাংলাদেশের বারোটাই বাজিয়ে দেন পুজারা ও আইয়ার। দুইজন মিলে পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের রেকর্ড ১৪৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। দ্বিতীয় সেশনেই যেখানে মোট ৬টি উইকেটের পতন হতে পারত, সেখানে পুজারা ও আইয়ার মিলে ৫০ রানের উর্ধ্বে জুটি গড়ে ফেলেন।
দুইজন মিলে সুযোগ পেয়ে এগিয়ে যেতেই থাকেন। তৃতীয় সেশনে গিয়ে দলকে ২০০ রানের পর ২৫০ রানেও নিয়ে যান তারা। এরমধ্যে পুজারা বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা পাঁচ ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। আইয়ারও হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান। আইয়ার যখন ৬৭ রানে থাকেন, তখন আবারও ‘নতুন জীবন’ পান। এবার সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন এবাদত।
এভাবে একের পর এক মিসে দলের মানসিক অবস্থাও যেন দুর্বল হয়ে পড়ে। পুজারা একটা সময় সেঞ্চুরির কাছে চলে যান। ৯০ রান করে ফেলেন। এমন সময়ে তাইজুল এসে পুজারাকে বোল্ড করে দেন। যেখানে ৫০ রানের জুটিও হওয়ার কথা না, সেখানে সোহান, এবাদতের ক্যাচ মিসে জুটি ১৪৯ রান করে ফেলে। ভারতও ২৬১ রানে চলে যায়। এমন সময়ে পুজারাও আউট হন। প্রথমদিনের শেষ বলে গিয়ে ৯০ ওভারে গিয়ে অক্ষর প্যাটেলকে (১৪) এলবিডাবলিউ করে দেন মিরাজ। আইয়ার শেষপর্যন্ত ৮২ রানে অপরাজিতই থাকেন। ৭৭ রানে গিয়ে আইয়ার তো ভাগ্যের সহায়তা বেচে যান। এবাদতের অসাধারণ ডেলিভারিতে বলটি স্টাম্পেও লাগে। কিন্তু বেলস পড়েনি। তাতে করে আইয়ার বেঁচে যান। দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়েও নামবেন।
বাংলাদেশ বোলাররা অসাধারণ বোলিং করেন। কিন্তু একের পর এক ক্যাচ মিসে, দুর্ভাগ্য জড়িয়ে ধরে। এরপরও ভারতকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ, তা বলা চলে। দ্বিতীয় দিন এখন দ্রুত ৪ উইকেট তুলে নিতে পারলে, ৩০০ রানের নিচে ভারতকে অলআউট করে দিতে পারলে, ম্যাচটিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হয়ে থাকবে।