কাবা শরিফের তালা-চাবির ইতিহাস

সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত মহান আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফ। তাতে বহুকাল ধরেই তালা-চাবির ব্যবহার হয়ে আসছে। কাবার গিলাফ পাল্টানোর সময় এটির দরজা খোলার দৃশ্যটিও অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু সবার কি জানা আছে কাবার চাবি বহনকারী ওই ব্যক্তি ও এই দায়িত্ব পালনে তার বংশীয় পরম্পরার কথা?

এই সৌভাগ্যবান মানুষটির নাম ড. সালেহ বিন জাইন আল-আবিদিন আল শাইবি। মক্কা বিজয়ের পর থেকে ড. সালেহ বিন আল শাইবি কাবাঘরের ১০৯তম অভিভাবক ছিলেন। তিনি হজরত উসমান ইবনে তালহা (রা.) এর বংশধর ছিলেন। আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ থেকে কাবাঘরের চাবি শায়বা গোত্রের কাছে থাকত। মক্কা বিজয়ের দিন সবকিছুই হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধীন হয়। চাবি দিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে বায়তুল্লাহর দরজা খুললেন। ভেতরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। বাইরে তখন অপেক্ষমান জনতা। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হওয়ার পর সবাই সীমাহীন কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। কাকে দেয়া হবে কাবার চাবি, কে পাবে এই মোবারক দায়িত্ব?

হজরত আব্বাস (রা.) এবং হজরত আলী (রা.) উপস্থিত ছিলেন সেখানে। দুজনই চাবি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছিলেন। কিন্তু নবী করিম (সা.) দরাজ গলায় ডাকলেন উসমান ইবনে তালহাকে। তার হাতেই দিলেন কাবার চাবি। বললেন, ‘এখন থেকে এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে, একেবারে কেয়ামত পর্যন্ত। তোমাদের হাত থেকে এ চাবি কেউ নিতে চাইলে সে হবে জালিম।’

উসমান ইবনে তালহা ৪২ হিজরিতে মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে চাবির রক্ষক হয় তার বংশধররা। সেই ধারা এখনো চলমান। তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন। তারাই কাবার দরজা খুলে দেন।

সাহাবি উসমান ইবনে তালহার ‘বনি শাইবা’ গোত্রের কাছে কাবার চাবি থাকা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বিতর্ক হয়নি। গেলো ২১ জুন শুক্রবার কাবাঘরের চাবি সংরক্ষক সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক ড. সালেহ বিন জাইন আল-আবিদিন আল-শাইবি সন্ধ্যায় মক্কায় মারা গেছেন। ২১ জুন শনিবার ফজরের পর গ্রান্ড মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ পর্যন্ত অসংখ্যবার কাবার তালা-চাবি পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর সর্বশেষ কাবাঘরের চাবি পরিবর্তন করা হয়। এখনো ওই তালা-চাবি ব্যবহার করা হচ্ছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালে সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ সিটি সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে কাবাঘরের পুরাতন তালাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০১৩ সালের শেষের দিকে ৩০ বছরের পুরনো মরচে ধরা তালা পরিবর্তন করে। তারা ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি একটি নতুন তালা বানিয়ে দেন। বর্তমানে ব্যবহৃত তালার চাবির দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার। এই তালার আগের তালাটি ওসমানিয়া বাদশাহ আবদুল হামিদ খানের নির্দেশে ১৩০৯ হিজরিতে বানানো হয়েছিল।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বর্তমানে ব্যবহৃত তালা-চাবি বাদে বাকি ৫৭টি তালা ও চাবি অত্যন্ত যত্নের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে ৫৪টি চাবি রয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে ঐতিহাসিক তোপকাপি জাদুঘরে, ২টি চাবি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিশ্বখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে এবং আরেকটি মিসরের কায়রোর ইসলামিক আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

ইসলামপূর্ব যুগেও কাবাঘরের যেকোনো ধরনের সেবাকে সৌভাগ্যের কারণ মনে করা হতো। এ কাজে যারা নির্বাচিত হতেন সমাজে তারা সম্মানিত ও মর্যাদাবান হিসেবে পরিচিত হোন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ