প্রাথমিকের ৬,৫৩১ শিক্ষক নিয়োগে আর কোনো আইনি জটিলতা নেই

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬,৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আর কোনো বাধা রইল না। হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম এখন নির্বিঘ্নে চলতে পারবে। ফলে, দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের আশা আবারও জাগ্রত হয়েছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু ও পটভূমি

সরকারের উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দূর করতে ২০২২ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ঘোষিত ৩২,৫৭৭টি শূন্যপদের বিপরীতে লাখ লাখ আবেদন জমা পড়ে। কঠোর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রার্থীদের বাছাই প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের যথাযথ পাঠদান নিশ্চিত করতে এই নিয়োগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নানা কারণে কিছু নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদান প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায় এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতা দেখা দেয়।

আইনি জটিলতা ও নিয়োগ স্থগিতাদেশ

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠলে, আদালত বিষয়টি আমলে নেয় এবং কিছু এলাকায় নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু পরীক্ষায় গড়মিলের অভিযোগ এনে হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। ফলে, অনেক প্রার্থীর চূড়ান্ত নিয়োগ বিলম্বিত হয়।

প্রার্থীরা এই বিলম্বে হতাশ হয়ে পড়েন এবং দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবিতে আন্দোলনও করেন। অবশেষে, আদালতের দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।

নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, প্রাথমিকের ৬,৫৩১টি পদে নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুব শিগগিরই নিয়োগপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে তারা কর্মস্থলে যোগদান করতে পারবেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এই নিয়োগের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া

নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ায় প্রার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছেন। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়োগের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন এবং এখন তারা আশাবাদী যে, খুব শিগগিরই যোগদান করতে পারবেন।

একজন প্রার্থী বলেন, “বছরের পর বছর ধরে আমরা অনিশ্চয়তায় ছিলাম। এখন আদালতের রায় আমাদের জন্য আশার আলো নিয়ে এসেছে। আশা করছি, দ্রুত যোগদান করতে পারব।”

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) জানিয়েছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে। তারা পরীক্ষা ও নিয়োগে যে কোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি রাখছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হোক, যাতে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা দিতে পারেন।”

৬,৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন হওয়ায় দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা শিগগিরই তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।

সরকারের এই উদ্যোগ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষকের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ