বৃষ্টি নেশা ভরা রাতে
মেঘেরা আসে যায়
ইচ্ছের দোটানায়,
শ্রাবণী পূর্ণিমার
পোয়াতি চাঁদের গায়।
যেদিকে তাকাই
চারদিকে এক অপরূপ মায়া
অপলক দৃষ্টিতে দেখি
জোছনার অপূর্ব মায়াবী ছায়া।
আলোর ঝর্ণাধারা
পৃথিবীর বুকে চুইয়ে পড়ছে,
শ্রাবণ ধারায় যৌবনাপ্রকৃতি যেন
জোছনার সাথে চুম্বন করছে।
বৃষ্টির নেশা ভরা
এমন শ্রাবণী পূর্ণিমা-রাতে
এখনো চাতক- চাতকীকে
খোঁজে মায়াবী চাঁদের সাথে।
তোমাকে মনে পড়ে
বহুদিন,বহু সপ্তাহ, বহু মাস
প্রায় দুই ,দুই যুগেরও পরে।
ঠিক সেই পুরোনো দিনের মতন,
দুজন দুজনারে ,চোখে চোখে ,আড়ে আড়ে
ভালোবেসে করতাম যেমন যতন।
সেইসব মখমল স্মৃতি ও
মায়া মাখা প্রীতি যখন আসে স্মরনের দ্বারে
সত্যি বলছি , তখন তোমাকে মনে পড়ে।
সুবর্ণ ভোরের আকাশে মোলায়েম আলোয়
আবীর মাখানো কোমল আবেশে যখন
মনমাতানো ভৈরবী রাগের সুর ভেসে যায় দূরে বহুদূরে ,
যখন ঘাসের বুকে
শিশির নিঃশব্দে নিবিড় আলিঙ্গনে সঙ্গম করে
সত্যি বলছি ,তখন
তোমাকে খুব মনে পড়ে।
দুঃস্বপ্নের কোন নিশুতি রাতে
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে,
অশ্বত্থের পাতার ফাঁকে ফাঁকে
যখন লক্ষ্মী পেঁচা
ব্যাকুল হয়ে ডাকে,
যখন নীল আকাশে অজস্র তারার মেলা বসে,
তবু এককোণে একা শুকতারার চোখ জলে ভাসে ,
সত্যি বলছি, তখন
তোমাকে খুব মনে পড়ে।
শ্রাবণের কোন পূর্ণিমা রাতে
পোয়াতি চাঁদ সোনার ডিমের মতো ভেসে ওঠে,
আর বিস্তীর্ণ আকাশের
বুক ভেদ করে
যখন আমার ঘরের জানালার ধারে
ঝাউয়ের শাখার পেছনে চুপিচুপি উঁকি মারে।
সত্যি বলছি
তখন তোমাকেখুব মনেপড়ে।
যখন এক সমুদ্র নীরবতা বুকে ঝুঁকে পড়ে তোমার চিরচেনা সেই মুখ
আমার হৃদয়ের
শূন্য সীমানায়,
আকাশের কোলে ঝুঁকে পড়া চাঁদের মতন।
আর শব্দেরা বন্দী হয়ে বিষাদের নীল খাতায়
বেদনার স্বরলিপি লিখে যায় সবার অগোচরে
সত্যি বলছি,
তখন তোমাকে খুব মনে পড়ে।
আরো পড়ুন-বৃত্তান্ত: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের কবিতা
গ্রহণ কাল
ক্ষুধার্ত শকুনেরা যাচ্ছে উড়ে
নীল বিস্তীর্ণ আকাশের বুক চিরে।
পৃথিবী জুড়ে নেমেছে হাহাকার
ক্লান্ত ওরা খুঁজতে গিয়ে আহার।
অস্থির জনজীবন বিপর্যস্ত আজ
চারপাশে করছে মহামারী রাজ।
মানবতা এখন হয়েছে ফেরারী
কানে শুনি শুধু বিদীর্ণ আহাজারি ।
চালের গুদামে,নিত্য দ্রব্য বাজারে
প্রকট আগুন লেগেছে মূল্য স্তরে ।
মুখ দেখে তো যায় না বোঝা হায়!
এই দুঃসময়ে কারো মনে শান্তি নাই।
হায়েনার রূপ নিয়েছে মানুষের মন
স্নেহ,মায়া, মমতা অনেক দামি এখন।
শান্তির খোঁজে যেখানেতেই যাই
গ্রহণের কালে,শান্তি কোথাও নাই।
বোধের চোরাবালি
তোমার চেতনার বালুচরে যেদিন
জন্মেছিল বোধের চোরাবালি।
দলে গিয়েছিলে সেদিন
আমার গোলাপী অনুভূতিগুলো ,
গোলাপী রঙ বদলে ওরা হয়ে উঠেছিল
ঝরে পরা কৃষ্ণচূড়ার মতো লাল ।
গিলে খেয়েছিল সেই চোরাবালি
জীবনের নকশী কাঁথায় জড়ানো
কত বর্ণিল মুহূর্তের স্মৃতি পিপীলিকা।
হীরে ,চুনি, পান্নার মত কত কথা ,
কত শত বিবর্ণ দীর্ঘশ্বাস
ডুবে দিয়েছিল বোবা কান্নার নদীতে।
মুছে দিয়েছিলে পৌরাণিক সম্পর্কের নাম
কাদা ছোঁড়াছুড়ির নোংরা রাজনীতিতে।
চৈত্রের মড়মড়ে ঝরা পাতার মতো
উড়ে গেল কত প্রতিশ্রুতি ,কত দিব্যি
হাতে হাত রেখে একসাথে
জীবনের সব বসন্ত হেঁটে যাওয়ায়।
আরো পড়ুন- সন্তোষ ঢালী’র কবিতা ‘আকাশের ঘুম নেই’
কাঠগোলাপের মায়া
রঙধনুমাখা এক বিকেলে
আমার পথের ধারে পরেছিল
এক গুচ্ছ শুভ্র কাঠগোলাপ ।
ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ,
হয়তো রেখে গেছে
চেনা বা অচেনা কোনো পথিক।
জানার সুযোগ হয়নি কখনো,
শুধু অন্তরালে ভেবেছিলাম
বসে আপন মনে নিরালায় উঠেছিলাম হেসে,
ইশারা ছিল কি কারো নিমন্ত্রণ লিখনপাতির?
চেনার বৃথা চেষ্টা ছিল বর্ষার উৎসব রাত্রির।
ধূলোমাখা পথের ধারে পরে থাকা,
কাঠগোলাপগুলো সযতনে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম
চডূইয়ের ঠোঁটে থাকা অমূল্য খড়কুটোর মতো ।
মনের গোপন খামে রেখে শুঁকেছিলাম
সেই কাঠগোলাপের ভালোবাসার মিষ্টি ঘ্রাণ ।
শুধু বুঝেছি ছায়া বিহীন মায়ার মতো
হয়তো কেউ আজো আছে
দূর থেকে শুধু হার্দিক অনুভবে ,
যেন স্পর্শের বাইরের অশরীরী কোনো কায়া ।
সেই কুড়িয়ে পাওয়া ঘ্রাণ অজান্তেই গেল হৃদয় ছুঁয়ে ,
তাই তার নাম রেখেছিলাম কাঠগোলাপের মায়া ।