বহুল আলোচিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার খালাসের আদেশ বহাল রেখেছে আদালত। এই রায়ের ফলে বিএনপি নেত্রীকে মামলার দায় থেকে পুরোপুরি মুক্ত ঘোষণা করা হলো।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই মামলার শুনানির পর বিচারপতি রায় দেন, যেখানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে আদালতের দেওয়া খালাসের রায় বহাল থাকলো এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আর কোনো আইনি বাধা থাকলো না এই মামলায়।
মামলার সংক্ষিপ্ত পটভূমি
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ২০১০ সালে দায়ের করা হয়। অভিযোগ ছিল, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা অনিয়মের মাধ্যমে চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ ও ব্যয় করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শেষে ২০১১ সালে মামলাটি আদালতে উপস্থাপন করে এবং পরে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলায় বলা হয়, ট্রাস্টের নামে বিভিন্ন অনুদান সংগ্রহ করা হলেও তা যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়নি এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়নি।
২০১৮ সালে নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। এরপর তার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন এবং মামলার রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানান।
খালাসের রায় ও আদালতের পর্যবেক্ষণ
বিএনপি নেত্রীর পক্ষ থেকে আইনজীবীরা যুক্তি দেখান, এই মামলায় কোনো শক্ত প্রমাণ নেই এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি দায়ের করা হয়েছিল।
বিচারপতি মামলার শুনানিতে বলেন,
“যেহেতু মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই নিম্ন আদালতের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রাখা হলো।”
এই রায়ের ফলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত এ মামলায় আর কোনো অভিযোগ থাকলো না এবং তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত হলেন।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
রায়ের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
“এই মামলাটি শুরু থেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালতের এই রায়ে প্রমাণ হলো, তিনি নির্দোষ।”
বিএনপি নেতারা বলছেন, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একটি ভালো দৃষ্টান্ত এবং তারা আশা করেন যে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে না।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন,
“রাজনৈতিক মামলাগুলোতে যখন আইনগত যুক্তির চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বেশি থাকে, তখন সেগুলোতে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এই মামলার রায় সেটাই দেখালো যে, আদালত স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারে।”
তবে কেউ কেউ মনে করছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আরও কার্যকর যুক্তি উপস্থাপন করা দরকার ছিল, যাতে বিচার প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হতে পারে।
খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতি
রায়ের ফলে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা বাড়লো কি না, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তিনি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেয়ে তার চিকিৎসাই প্রধান অগ্রাধিকার।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায়ের ফলে বিএনপির আন্দোলন আরও জোরদার হতে পারে এবং তারা আগামী নির্বাচনে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশ নিতে পারে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার খালাসের রায় বহাল থাকার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে একটি বড় আইনি বাধা দূর হলো।
এতে বিএনপি স্বস্তি প্রকাশ করলেও, রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই রায়ের রাজনৈতিক প্রভাব কেমন হয় এবং বিএনপি তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেয়।