গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস এলাকায় এক নারী শ্রমিকের আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (৩ মার্চ) সকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং একটি কারখানার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
নারী শ্রমিকের আত্মহত্যার ঘটনা
মৃত শ্রমিকের নাম আফসানা আক্তার লাবনী (৩০), যিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার পাঁচরুখী এলাকার বাসিন্দা। তিনি গাজীপুরের ভোগরা এলাকায় অবস্থিত প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। রবিবার (২ মার্চ) তিনি কারখানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পুলিশ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শুরুতে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহকে দায়ী করা হয়। তবে, সোমবার সকালে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা দাবি করেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ছুটি না দেওয়ায় ওই নারী এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
বিক্ষোভ ও অবরোধ
সোমবার সকাল ৮টার দিকে শত শত শ্রমিক মহাসড়কে নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা কারখানার ভেতরে থাকা একটি গাড়ি বাইরে এনে মহাসড়কের ওপর অগ্নিসংযোগ করেন। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিল্প পুলিশের বক্তব্য
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, “গতকাল এক নারী শ্রমিক ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে জানা যায়, তিনি পারিবারিক সমস্যার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সোমবার সকালে শ্রমিকরা হঠাৎ করে এসে দাবি করেন, কারখানার ছুটি না দেওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এরপর তারা বিক্ষোভ শুরু করে এবং আশপাশের আরও কয়েকটি কারখানায় ছুটি নেওয়ার দাবি জানান।”
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে এবং শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
বিক্ষোভের প্রভাব ও কারখানা ছুটি ঘোষণা
শ্রমিকদের বিক্ষোভের জেরে গাজীপুরের অন্তত ৬ থেকে ৭টি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি ও উত্তেজনার কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে সাময়িকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের প্রচেষ্টা
ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
একজন নারী শ্রমিকের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে প্রশাসন। শ্রমিকদের দাবি, ছুটি সংক্রান্ত নীতিতে আরও মানবিকতা থাকা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যায়। একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে শ্রমিকদের কল্যাণে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।