ঢাকার সাভারের প্রতিষ্ঠান এসেন্সর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টস চলতি সপ্তাহে প্রায় তিন লাখ ডলারের চামড়ার ব্যাগ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান জানিয়ে দেয়, আপাতত পণ্য জাহাজীকরণ না করতে।
প্রতিষ্ঠানটির এমডি কে এম মুশফিকুর রহমান জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্ক নীতির কারণে তাদের ক্রেতা মূল্যছাড় চাচ্ছে এবং সপ্তাহের শেষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। প্রতি মাসে গড়ে ১০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে এসেন্সর, যার ৯০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে যায়।
এসেন্সরের মতো আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখার বার্তা পেয়েছে। কেউ কেউ দাম কমানোর অনুরোধও করছে।
তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতে আশঙ্কা বাড়ছে
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও এখনও ক্রয়াদেশ বাতিল বা মূল্যছাড় চাওয়ার ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম, তবে চলতি সপ্তাহে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেন—সব দেশের জন্য গড়পড়তা ১০ শতাংশ শুল্ক এবং কিছু নির্দিষ্ট দেশের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। বাংলাদেশের ওপর বসেছে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক, যেখানে ভারতের ওপর ২৬%, পাকিস্তানের ওপর ২৯%, এবং ভিয়েতনামের ওপর ৪৬% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনের ক্ষেত্রে সর্বমোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫৪%।
এই হার নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতির ভিত্তিতে একটি সূত্র প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে অনুযায়ী ৭৪% প্রস্তাবিত হলেও তার অর্ধেক—৩৭%—শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।
২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, বিপরীতে আমদানি করেছিল ২২১ কোটি ডলারের। এ ঘাটতি থেকেই বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ।
পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে
বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ফলে নতুন শুল্ক নীতির প্রভাবে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
উইকিটেক্স-বিডি নামের একটি বায়িং হাউস ইতিমধ্যে তিন লাখ ও দেড় লাখ ডলারের দুটি ক্রয়াদেশ স্থগিত হওয়ার খবর দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও এ কে এম সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, মার্কিন ক্রেতারা বলছে তারা চূড়ান্ত ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি দাম আদায় করতে পারছে না, তাই তাদের থেকে মূল্যছাড় চাওয়া হচ্ছে।
বিজিবিএ সূত্রে জানা গেছে, একটি বায়িং হাউস মাসে ১২ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করত—সেই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এখন মূল্যছাড় চাইছে এবং জুন-জুলাইয়ের ক্রয়াদেশ বাতিল করছে।
প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ গত অর্থবছরে ৪০ কোটি ডলারেরও বেশি পোশাক রপ্তানি করেছিল, যার প্রায় ৫ কোটি ডলারের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানটির এমডি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর জানান, মার্কিন সাপ্তাহিক ছুটির কারণে প্রতিক্রিয়া দেরিতে মিলছে, তবে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে শিগগিরই।
বিজিএমইএর জরুরি বৈঠক
গত রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে রপ্তানিকারকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন—এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে রপ্তানি প্রবাহে বড় ধাক্কা লাগবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক জানান, ওয়ালমার্ট ও গ্যাপের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের ৩৭% বাড়তি শুল্ক বহনের নির্দেশ দিয়েছে, পাশাপাশি ক্রয়াদেশ স্থগিত করার বার্তাও দিয়েছে।