ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ব্যাপকভাবে টহল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ৬৬৭টি টহল টিম মোতায়েন করা হয় এবং এই সময়ে মোট ১৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপরাধ প্রতিরোধ এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সড়ক ও আবাসিক এলাকায় ৬৬৭টি টহল টিম সক্রিয় ছিল। এর মধ্যে মোবাইল পেট্রোল, মোটরসাইকেল টহল এবং স্থির চেকপোস্ট ছিল। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের এই ব্যবস্থা ২৪ ঘণ্টাই কার্যকর ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে, তাই টহল জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে, ছিনতাই, মাদক পাচার, অবৈধ অস্ত্র বহন এবং অন্যান্য অপরাধ দমনে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, টহল ও বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন মামলা ছিল, কেউ কেউ সরাসরি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, আবার কেউ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে অনেক মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়েছে এবং মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।
টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি পুলিশের স্থাপন করা চেকপোস্টগুলোতে কড়া নজরদারি চালানো হয়েছে। মোট ৭১টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল, যেখানে গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হয়েছে। বিশেষ করে, রাতের বেলা বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট কার্যক্রম জোরদার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, চেকপোস্টের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও সন্দেহজনক ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সহজ হয়েছে। এছাড়া, কিছু গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি গাড়ির কাগজপত্রবিহীনভাবে চলাচল করছিল, যাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধ দমনে পুলিশের এই বিশেষ টহল ব্যবস্থা নিয়মিত চলবে। নগরবাসীকে নিরাপদ রাখতে ও অপরাধপ্রবণতা কমাতে এ ধরনের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
পুলিশ আরও জানিয়েছে, জনগণের সহযোগিতা পেলে এই কার্যক্রম আরও সফল হবে। যদি কেউ কোনো সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখতে পান, তাহলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় বা পুলিশের জরুরি নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজধানীতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পুলিশের এমন উদ্যোগ এর আগেও দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বাড়তে থাকায় পুলিশ এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিয়েছে। বিশেষ করে ছিনতাই, চুরি, প্রতারণা ও মাদকের বিস্তার রোধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
গত মাসেও পুলিশের বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট অভিযানে শতাধিক অপরাধী গ্রেফতার হয়। পুলিশের এসব অভিযানের ফলে নগরবাসী কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে পুলিশের টহল কার্যক্রম এবং বিশেষ অভিযানের ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, পুলিশের উপস্থিতির কারণে অপরাধপ্রবণতা কমছে এবং তারা নিরাপদ বোধ করছেন।
একজন অফিসগামী ব্যক্তি বলেন, “আগে রাতে চলাচল করতে ভয় লাগত, কিন্তু এখন রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি থাকায় কিছুটা নিরাপদ মনে হয়।”
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করছেন, পুলিশের কড়াকড়ির কারণে সাধারণ মানুষও কখনো কখনো হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিছু মোটরসাইকেল চালক অভিযোগ করেছেন, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও চেকপোস্টে তাদের বারবার থামিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। বিশেষ করে রাতের বেলা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হবে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, তারা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি থানা এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাবে। এছাড়া, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ড্রোন এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নগরীর নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।