মঙ্গলবার, ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হাসনাত ও সারজিসের মধ্যে মতবিরোধ, সেনানিবাসের বৈঠক নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ

হাসনাত ও সারজিসের মধ্যে মতবিরোধ, সেনানিবাসের বৈঠক নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানিয়েছেন, গত ১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাদের বৈঠকের সময় কী ঘটেছিল। তিনি দলের আরেক সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর কিছু বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন এবং বৈঠকের তথ্য ফেসবুকে প্রকাশের বিষয়টিকে সমীচীন মনে করেননি।

আজ রবিবার দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে সারজিস আলম এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।

তিনি জানান, ১১ মার্চ সেনানিবাসে তাদের ডেকে নেওয়া হয়নি, বরং তারা নিজেরাই যোগাযোগ করে সেখানে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে এনসিপির আরও একজন নেতা যাওয়ার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত কারণে তিনি যেতে পারেননি। তবে তার নাম প্রকাশ করেননি সারজিস।

সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্য শোনার পর তারা নিজ উদ্যোগেই সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈঠকে যান। তিনি বলেন, “সেদিন সেনা ভবনের একটি কক্ষে আমরা তিনজনই উপস্থিত ছিলাম—সেনাপ্রধান, হাসনাত এবং আমি।”

হাসনাতের দেওয়া কিছু বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে সারজিস বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি একই বিষয়ের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে পারেন। হাসনাত তার দৃষ্টিকোণ থেকে সেনাপ্রধানের বক্তব্য বুঝেছেন ও ব্যাখ্যা করেছেন, তবে আমি কিছু বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছি।”

তিনি বলেন, “আমি সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে সরাসরি ‘প্রস্তাব’ হিসেবে দেখিনি, বরং ‘অভিমত প্রকাশ’ হিসেবে দেখেছি। ‘প্রস্তাব’ ও ‘অভিমত প্রকাশ’—এ দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”

এছাড়া, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের বিষয়ে যে “চাপ প্রয়োগের” কথা বলা হয়েছে, তা তিনি মনে করেননি। বরং সেনাপ্রধান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, যদি রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী প্রভাব পড়বে, তা বিশ্লেষণ করা হয়।

সারজিস জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। তারা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিলে বা না নিলে দেশের রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও আলোচনা করেন।

হাসনাত তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছিলেন যে সেনাপ্রধান রাজনৈতিকভাবে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের জন্য চাপ দিয়েছেন। এ বিষয়ে সারজিস বলেন, “হাসনাতের পোস্টে কথাগুলো যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি মনে করি বাস্তবে আলোচনা এতটা চরম পর্যায়ে ছিল না।”

হাসনাত তার পোস্টে উল্লেখ করেছিলেন যে এক পর্যায়ে তিনি সেনাপ্রধানকে প্রশ্ন করেন, “যে দল এখনো ক্ষমা চায়নি, অপরাধ স্বীকার করেনি, সেই দলকে কীভাবে ক্ষমা করা যায়?” এর উত্তরে সেনাপ্রধান কিছুটা রাগান্বিত সুরে বলেন, “তোমরা কিছু জানো না। তোমাদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার অভাব আছে। আমরা অন্তত ৪০ বছর ধরে এই সেবায় আছি। তোমার বয়সের চেয়েও বেশি।”

সারজিস এই কথোপকথন ঘটেছিল বলে স্বীকার করেন, তবে তিনি মনে করেন এটি রাগান্বিত সুরে বলা হয়নি। বরং একজন সিনিয়র ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই এটি বলেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংযোগের বিষয়টি গোপনীয় থাকা উচিত। তিনি মনে করেন, এনসিপির উচিত ছিল দলের ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, তারপর প্রয়োজন হলে রাজপথে নামা। কিন্তু ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসব তথ্য প্রকাশ করাটা যথাযথ হয়নি এবং ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে ফেলতে পারে।

সবশেষে তিনি বলেন, “আমার বক্তব্যের কারণে অনেকে আমাকে সমালোচনা করতে পারেন। তবে আমরা কখনো স্রোতে গা ভাসানো মানুষ ছিলাম না। আমরা হাসিনা শাসনের বন্দুকের সামনেও দাঁড়িয়েছি। আজও কেউ হাসনাতের দিকে বন্দুক তাক করলে, আমি তার সামনে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। তবে সহযোদ্ধার কোনো বক্তব্য সংশোধনের প্রয়োজন মনে করলে, সেটিও আমি করব।”

তিনি নিশ্চিত করেছেন যে এনসিপি ‘আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ