রবিবার, ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গরু-ছাগলের চামড়ার ফেলে দেওয়া অংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে শিরিষ আঠা

রাজধানীর হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার ফেলে দেওয়া চামড়ার অংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের আঠা, যা শিরিষ আঠা নামে পরিচিত। এসব আঠা এখন বই বাঁধাই, সুতা, জুতা, ওষুধ, এমনকি কসমেটিকস শিল্পেও ব্যবহার হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট ছোট কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে এই আঠা, যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আগে যেখানে চামড়া দিয়ে মূলত জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, জ্যাকেট তৈরি হতো, এখন তার ফেলে দেওয়া অংশ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে শিরিষ আঠা। এটি একসময় বই বাঁধাই ও আসবাব তৈরিতে প্রচুর ব্যবহৃত হতো, এখন ব্যবহার আরও বিস্তৃত হয়েছে।

হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা গেছে, রাস্তার ধারে ট্রেতে করে শুকানো হচ্ছে এই আঠা তৈরির উপকরণ। দেখতে অনেকটা আমসত্ত্বের মতো হলেও এটি আসলে চামড়া সিদ্ধ করে তৈরি আঠা। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে কসাইখানা ও ট্যানারি থেকে সংগ্রহ করা হয় পরিত্যক্ত চামড়া। এরপর সেগুলো চুন পানিতে ভিজিয়ে নরম করা হয় এবং পরে উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় ধরে সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ চামড়া গলে তরলে পরিণত হয়, যা পরে ছেকে ট্রেতে শুকিয়ে তৈরি হয় আঠা।

এই আঠার চাহিদা রয়েছে ওষুধ শিল্পে—বিশেষ করে ক্যাপসুলের আবরণ তৈরিতে, কসমেটিকস ও চুলের চিকিৎসা সামগ্রীর মতো পণ্যে। উন্নত মানের আসবাব ও জুতা তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই আঠা। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। তবে উন্নত প্রযুক্তির অভাবে বাংলাদেশ থেকে এখনও বড় পরিসরে রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। তবু অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা থাকায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।

কারখানা মালিক আফজাল হোসেন জানান, আগে ট্যানারি থেকে ফ্রি চামড়া পাওয়া যেত, এখন কেজি দরে কিনতে হয়। প্রতি কেজির দাম পড়ে ৮ থেকে ৯ টাকা এবং পরিবহন খরচও বেড়েছে। এক ট্রাক কাঁচামাল আনতেই ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। তবে উৎপাদিত আঠার চাহিদা এত বেশি যে কারখানা থেকেই তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে নরসিংদীর মাধবদীর কাপড় কারখানায়।

একজন শ্রমিক মকবুল হোসেন জানান, এখানে কাজের পরিবেশ ভালো, ঝুঁকি কম এবং উপার্জনও সন্তোষজনক, ফলে পরিবার নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান জানান, এই আঠার ভালো বাজার রয়েছে। রফতানি বাড়াতে চাইলে উদ্যোক্তারা সরকারি সহায়তা পেতে পারেন।

চামড়ার ফেলে দেওয়া অংশ কাজে লাগিয়ে তৈরি এই শিরিষ আঠা এখন দেশের এক লাভজনক শিল্প হয়ে উঠেছে, যা কর্মসংস্থান তৈরি করছে হাজার হাজার মানুষের জন্য এবং দেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ