স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার প্রথম টি-টোয়েন্টি দিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হয়েছে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। সিরিজে শুভ সূচনা করে ফেলেছে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজার হাফসেঞ্চুরিতে প্রথম ম্যাচটি জিতে সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। বোলারদের ব্যর্থতায় ম্যাচটি হারে বাংলাদেশ।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে জিম্বাবুয়ে। প্রথমবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করতে নামেন নুরুল হাসান সোহান। টস হারেন। ওয়েসলি মাধেভেরে (৬৭) ও সিকান্দার রাজার (৬৫*) হাফসেঞ্চুরিতে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ২০৫ রান করে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর করে জিম্বাবুয়ে। মাধেভেরে ও সিকান্দার মিলে চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ অবিচ্ছিন্ন ৯১ রানের জুটি গড়ে বিশাল রান স্কোরে জমা করেন। মুস্তাফিজুর রহমান ২টি উইকেট শিকার করতে পারেন। পাহাড়সম রানের টার্গেট সামনে রেখে জবাব দিতে গিয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮৮ রান করতে পারে বাংলাদেশ। নুরুল হাসান সোহান সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪২ রান করতে পারেন। লুক জংয়ী ২ উইকেট শিকার করে নেন। নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৭ ও লিটন কুমার দাস ৩২ রান করেন।
বাংলাদেশের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার (৪) আউট হয়ে যান। এরপর লিটন কুমার দাস ও এনামুল হক বিজয় খুব ভালোই ব্যাটিং করছিলেন। পাওয়ার প্লেতে ৬০ রান হয়। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হতেই সপ্তম ওভারের শেষ বলে গিয়ে বাঁধে ঝামেলা। লিটন রান আউট হয়ে যান। শন উইলিয়ামসের বলে ফাইন লেগে শট নেন লিটন। কিন্তু সেখানে থাকা এনগারাভা ক্যাচ ধরেও তা মুঠোবন্ধী করতে পারেননি। পরে রান নিতে গিয়ে রান আউট হন লিটন (৩২)। বিজয়ের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়ে আউট হন লিটন। দলের ৬৩ রানে গিয়ে লিটন আউট হওয়ার পরই খেলা যেন জিম্বাবুয়ের হাতে চলে যায়। দলের ৮৫ রানে গিয়ে যখন এনামুল হক বিজয়ও (২৬) আউট হয়ে যান, খেলা জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১০ ওভারে গিয়ে ৮৬ রান করতে পারে বাংলাদেশ।
আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে আশা দেখা হয়। কিন্তু দলও ১০০ রানের উপরে করে ফেলে। কিন্তু যখন স্কোর ১০৬ রান হয়ে যায়, তখনই আফিফ (১০) আউট হয়ে যান। ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। ১৫ ওভারে গিয়ে ১৪০ রান করে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ও নুরুল হাসান সোহান মিলে দলকে আশা দেখাতে থাকেন। শান্ত অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন। কিন্তু ৩৭ রান করার পরই আউট হয়ে যান। দলের ১৪৬ রানে গিয়ে শান্ত আউট হতেই আশা যেন আবার শেষ হয়ে যেতে থাকে। শেষ ১৮ বলে বাংলাদেশের জিততে লাগে ৪৬ রান। ১৮তম ওভারে ১৪ রান হয়। শেষ ২ ওভারে লাগে ৩২ রান। ১ ওভারে জিততে যখন ২৮ রান লাগে, তখনই আসলে খেলা যে জিম্বাবুয়ে নিশ্চিত জিততে, তা নিশ্চিত হয়ে যায়। ১৯তম ওভারে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও (১৩) আউট হয়ে যান। দলের ১৭৮ রানে গিয়ে মোসাদ্দেক আউট হন। শেষে নুরুল হাসান সোহান অপরাজিত ৪২ রান করেন। বাংলাদেশ ১৮৮ রান করতে পারে।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসে শুরুতেই আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। দলের ১৫ রানের সময় রেগিস চাকাভাকে আউট করে দেন। তবে পাওয়ার প্লে’তে ৬ ওভারেই ৪৩ রান করে ফেলে জিম্বাবুয়ে। এই রান হতেই অধিনায়ক ক্রেইগ এরভিনকে (২১) বোল্ড করে দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে এরপর ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিন উইলিয়ামস মিলে দলের হাল ধরেন। দুইজন মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ১০ ওভারে ৭৪ রান করে জিম্বাবুয়ে। যখন ১০০ রান থেকে ১ রান দুরে থাকে জিম্বাবুয়ে তখন উইলিয়ামসকে (৩৩) আউট করে দেন মুস্তাফিজ। এরপর জিম্বাবুয়ে আর কোন উইকেট হারায়নি।
১৩তম ওভারে গিয়ে ১০০ রান স্কোরে জমা করে জিম্বাবুয়ে। মাধেভেরেকে আটকানো যায়নি। ৩৭ বলে গিয়ে হাফসেঞ্চুরি করেন মাধেভেরে। তাসকিন আহমেদের করা ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাকিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি করেন মাধেভেরে। জিম্বাবুয়ের ভরসা হয়ে ওঠেন। ১০ ওভারে ৭৪ রান করে জিম্বাবুয়ে, সেখান থেকে শেষ ১০ ওভারে ১৩১ রান করে জিম্বাবুয়ে। ১৫তম ওভারেও ১২৮ রানে থাকে জিম্বাবুয়ে। ১৭তম ওভারে গিয়ে ১৫০ রান স্কোরে জমা করে ফেলে জিম্বাবুয়ে। শেষ ৫ ওভারে ৭৭ রান করে।
মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা মিলে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৯১ রানের জুটি গড়েন। যা কিনা বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে সেরা জুটি হয়ে যায়। মাধেভেরে যদি স্বেচ্ছায় অবসর না নিতেন, তাহলে আরও বড় জুটি হতে পারত। এরমধ্যে ২৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন সিকান্দার রাজাও। এরআগেই মাধেভেরে ৬৭ রান করে সেচ্ছায় অবসরে যান। রান নিতে গিয়ে নন স্ট্রাইকারে ডাইভ দিয়ে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন মাধেভেরে। এরপর সিকান্দার ২৬ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৬৫ রান করে দলকে ২০৫ রানে নিয়ে যান। এরআগে গতবছর হারারে স্পোর্টস ক্লাবেই ১৯৩ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। সেই ম্যাচটিতে ৫ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশই। এবার আর জিততে পারেনি বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে জিতে সিরিজে এগিয়ে যায়।