মিথুন আশরাফ – ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই অর্ধেক স্টেডিয়াম ভরে যায়। বাংলাদেশ প্রথমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোন সিরিজ জিতবে, এই আশা নিয়ে ধীরে ধীরে দর্শকে ভরপুর হয়ে যায় স্টেডিয়াম। দর্শকদের মন ভরানো এখন ব্যাটারদের হাতে। ৪ উইকেট শিকার করা মেহেদি হাসান মিরাজের অসাধারণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ড ১১৭ রান করতে পারে। তাতে করে বাংলাদেশের জিততে, জিতে ইংল্যান্ডকে প্রথমবার কোন সিরিজে হারিয়ে ইতিহাস গড়তে ১১৮ রান লাগবে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করে বাংলাদেশ। ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। করে ১১৭ রান। বেন ডাকেট সবচেয়ে বেশি ২৮ রান করতে পারেন। ওপেনার ফিল সল্ট করেন ২৫ রান। মিরাজ একাই নেন ৪ উইকেট।
ম্যাচটিতে বাংলাদেশের ৮ বোলার বোলিং করেন। এরমধ্যে মিরাজ দ্যুতি ছড়ান। একই ৪ ওভার বোলিং করে ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেট নেন মিরাজ। এরআগে গতবছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিপক্ষে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন মিরাজ। মিরাজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ছিল সেটি। এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে যান মিরাজ।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জিতলেই ইতিহাস গড়া হবে সাকিববাহিনীর। বাংলাদেশ সব দলকেই কোন না কোন ফরমেটের সিরিজে হারায়। শুধু ইংল্যান্ডকেই কোন ফরমেটের সিরিজে হারাতে পারেনি। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জিতলেই সিরিজ জয়ের সঙ্গে ইতিহাসও গড়বে বাংলাদেশ। প্রথমবার ইংল্যান্ডকে কোন এক ফরমেটে সিরিজে হারানোর স্মৃতি নিজেদের করে নিবে। তাতে করে ক্রিকেট খেলুড়ে সব দলকেই কোন না কোন ফরমেটে সিরিজে হারানোর ইতিহাস গড়াও হয়ে যাবে। এজন্য ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ১১৮ রানের টার্গেটে সফল হতে হবে বাংলাদেশকে।
ইংল্যান্ডের ১৬ রান হতেই তাসকিন আহমেদের বলে আউট হয়ে যান ডেভিড মালান। তৃতীয় ওভারে তাসকিন নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে মঈন আলীকেও আউট করে দিতে পারতেন। কিন্তু প্রথম স্লিপে কঠিন ক্যাচটি ধরতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর দুইবার রান আউটের সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। না হলে ২২ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারাত ইংল্যান্ড।
ওপেনার ফিল সল্ট ও মঈন যেন কাঁপন ধরাতে থাকেন। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে, ষষ্ঠ ওভারে নাসুম আহমেদ নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন। মঈন স্লগ সুইপ করে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ম্যাচের প্রথম ছক্কা হাকান। তবে সাকিব আল হাসান নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই দেখান ঝলক। তৃতীয় বলেই সল্টকে (২৫) কট এন্ড বোল্ড করে দেন। দ্বিতীয় উইকেটে সল্ট ও মঈনের জুটিকে ৩৪ রানের বেশি করতে দেননি সাকিব।
হাসান মাহমুদও প্রথম ওভার করতে এসেই দ্যুতি ছড়ান। শেষ বলে জস বাটলারকে (৪) বোল্ড করে দেন। পাওয়ার প্লেতে ইংল্যান্ড ৫০ রান তুলতেও উইকেট টপাটপ পড়তে থাকে। ৫৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। মেহেদি হাসান মিরাজও একই কাজ করেন। প্রথম ওভার করতে এসে মঈনকে (১৫) আউট করে দেন। ৫৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় ইংল্যান্ড। চাপেও থাকে। আর তাতে করে ১০ ওভারে ৬৩ রানের বেশি করতে পারেনি ইংল্যান্ড।
পঞ্চম উইকেটে বেন ডাকেট ও স্যাম কারেন মিলে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যান। দুইজন মিলে ৩৪ রানের জুটি গড়েন। যেই দলের রান ৯১ হয়, মিরাজ বোলিং করতে এসে টপাটপ কারেন (১২) ও ক্রিস ওকসকে আউট করে দেন। দুটি আউটই হয় উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের স্ট্যাম্পিংয়ে। ১৭ ওভারে ১০০ রান করে ইংল্যান্ড। হারায় আরও একটি উইকেট। এবার মিরাজ নিজের শেষ ওভার করতে এসে ক্রিস জর্ডানকে (৩) আউট করে দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করে নেন। ইনিংসের শেষ ওভারে বেন ডাকেটকে (২৮) আউট করে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। শান্ত অসাধারণ ক্যাচ ধরেন। টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত রেহান আহমেদ (১১) রান আউট হন। শেষ বলে গিয়ে জোফরা আর্চারও রান আউট হয়ে গেলে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। ১১৭ রানের বেশি করতে পারেনি।
বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের শুরুটা হয় ২০০৫ সালে। জিম্বাবুয়েকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হারিয়ে শুরুটা করে বাংলাদেশ। এরপর ২০০৬ সালে কেনিয়াকে ৪ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে। একই বছর স্কটল্যান্ডকে ২ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডকে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবার ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে।
একই বছর ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবার হারিয়ে দেয়। ২০১৬ সালে আফগানিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কাকে ওয়ানডে সিরিজে হারায়। একইবছর অস্ট্রেলিয়াকে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। তাতে করে ইংল্যান্ড ছাড়া সব দলকেই কোন না কোন ফরমেটে সিরিজে হারানোর স্বাদ বাংলাদেশ পেয়েছে। এখন ইংল্যান্ডকে হারালেই ষোলোকলা পূর্ণ হয়ে যায়। ইংল্যান্ডকে এখন পর্যন্ত কোন ফরমেটেই বাংলাদেশ হারাতে পারেনি। এবার সেই সুযোগ ধরা দিয়েছে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৫৬ রান করেও হেরেছে ইংল্যান্ড। এবার তো টার্গেট ১১৮ রান। তা করতেই পারলেই ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ।