মিথুন আশরাফ
বিশ্বসেরা ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১৬ রানে জিতল টাইগাররা। তাতে করে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নিল। ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। প্রথম কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে তিন ম্যাচের সিরিজে হারাতে পারল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেই হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ দল আগে ব্যাটিং করে ২ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৮ রান করে বাংলাদেশ। লিটন ৭৩ ও শান্ত অপরাজিত ৪৭ রান করেন। দ্বিতীয় উইকেটে দুইজনের ৮৪ রানের জুটিতে এই স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় উইকেটে ডেভিড মালান ও জস বাটলার সিরিজের সর্বোচ্চ ৯৫ রানের জুটি গড়লেও শেষের দিকে তাসকিন আহমেদের (২/২৬) দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৪২ রানের বেশি করতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৬ উইকেটে ২০ ওভারে ১৪২ রান করতে পারে ইংল্যান্ড। মালান ৫৩ ও বাটলার ৪০ রান করেন।
টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ফিল সল্টকে আউট করে দেন বামহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম। দলের ৫ রানে ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেট শিকার করা গেলেও এরপর ওপেনার ডেভিড মালান ও জস বাটলার মিলে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেন। দুইজন মিলে পাওয়ার প্লে’তে ৪৭ রান স্কোরে যোগ করার পর ৫০ রানও অনায়াসে করে এগিয়ে যেতে থাকেন। সহজেই ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। মালান এরমধ্যে ৪৩ বলে ৫০ রান করে ফেলেন। মালান ও বাটলার মিলে লিটন ও শান্ত জুটির পাল্টা জবাব দেন। তারা লিটন ও শান্তর জুটিকেও পেছনে ফেলে সিরিজের সেরা জুটি গড়েন। দ্বিতীয় উইকেটে ৯৫ রানের জুটি গড়তেই দলের ১০০ রান হতেই মালানকে (৫৩) আউট করে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১০০তম উইকেট শিকার করে নেন। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আবার রান আউট হয়ে যান বাটলার (৪০)।
দলের ১১৯ রান হতেই মঈন আলীকে (৯) যখন আউট করে দেন তাসকিন আহমেদ, তখন খেলা যেন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে দেয়। ১২৩ রান হতেই বেন ডাকেটকেও (১১) বোল্ড করে দিয়ে খেলা বাংলাদেশের হাতে নিয়ে আসেন তাসকিন। তাতে করে জয়ের আশা জেগে যায়। ১৮ বলে জিততে ৩৬ রান দরকার থাকে ইংল্যান্ডের। মুস্তাফিজ বল করতে এসে মাত্র ৫ রান দেন।
সাকিব বল করতে এসে যখন স্যাম কারেনকেও (৪) আউট করে দেন, তখন বাংলাদেশের জয় যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। শেষ ওভারে, ৬ বলে জিততে ২৭ রান দরকার থাকে। ১০ রান করতে পারে ইংল্যান্ড। ক্রিস ওকস ১৩ ও ক্রিস জর্ডান ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও রনি তালুকদার এদিন শুরু থেকেই মারমুখি হয়ে খেলতে থাকেন। ‘নতুন জীবন’ পান। তা পেয়ে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। দুইজন মিলে পাওয়ার প্লে’তে ৪৬ রান যোগ করেন। যখন দলের ৫৫ রান হয়, তখন আদিল রশিদের স্পিনের সামনে পড়ে রনি (২৪) কট এন্ড বোল্ড হয়ে যান।
রনি আউটের পর নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাট হাতে নামেন। লিটন ও শান্ত অসাধারণভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে ১০ ওভারে দলকে ৭৭ রানে নিয়ে যান। এই টি-টোয়েন্টিতেও শান্তই দলের হয়ে প্রথম ছক্কাটি হাকান। টানা ৫ ম্যাচ ব্যর্থ হওয়ার পর লিটন এবার নৈপুন্য দেখান। ৪১ বলে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। দলের রানও ১২.২ ওভারে ১০০ হয়ে যায়। দলের ১০০ রানের সময় লিটনের স্কোরে ৫০ রান জমা হয়।
দলের যখন ১০৫ রান হয়, তখন লিটন-শান্তর জুটিরও ৫০ রান হয়। লিটনের স্কোরে যখন আর ১ রান যোগ হয়, দলের ১০৮ রান থাকে, তখন লিটন ‘নতুন জীবন’ পান। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। এরপর বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে থাকেন লিটন। যখন দ্বিতীয় উইকেটে লিটন ও শান্তর জুটি ৮১ রানে যায়, তখন সিরিজের সেরা জুটি হয়ে যায়। এরআগে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ফিল সল্ট ও জস বাটলার মিলে প্রথম উইকেটে ৮০ রানের জুটি সেরা গড়েছিলেন।
দলের যখন ১৩৯ রান, তখন ৫৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩ রান করে ক্যারিয়ার সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলে আউট হন লিটন। শান্তর সঙ্গে ৮৪ রানের জুটি গড়ে আউট হন লিটন। শেষে শান্ত ও সাকিব আল হাসান মিলে দলকে ১৫৮ রানে নিয়ে যান। শান্ত এদিনও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। ৩৬ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৪৭ রান করেন। সাকিব ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
যেভাবে লিটন ও শান্ত মিলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল রান ১৮০ অনায়াসেই হবে। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে রান কম হয়। মাত্র ২৭ রান হয়। তাতেই রান স্কোরে শেষে গিয়ে কম জমা পরে। ১৩তম ওভারে ১০০ রান করার পর আর এগিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বোলারদের দক্ষ বোলিংয়ে, শেষ দিকে তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে আসলে জিতে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডকে সিরিজে হারানোর স্বাদ আগেই পূরণ হয়ে যায় বাংলাদেশের। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় হয়ে যায়। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিতলে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করা হতো। সেই সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারিয়ে ইতিহাসও গড়া হতো। ইতিহাস গড়েও বাংলাদেশ্
প্রথম ও দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে যথাক্রমে ৬ ও ৪ উইকেটে জিতে সিরিজ জয় হয়ে যায় বাংলাদেশের। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়। তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে জিতলে ব্যবধান হতো ৩-০। যা ইংল্যান্ডের জন্য লজ্জ্বারই হতো। তারা যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল। ইংল্যান্ডকে লজ্জ্বা দিল বাংলাদেশ্
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতায় বিশে^র সব ক্রিকেট দলের বিপক্ষে অন্তত যে কোন ফরমেটে সিরিজ জেতার ইতিহাসও গড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশ করার পালা ছিল। টেস্ট খেলুড়ে কোন দলকে এখনও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। জিতলেই সেই ইতিহাস হয়ে যেত। হলোও তাই।
এরআগে ১৪ বার তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তখন আয়ারল্যান্ডের টেস্ট মর্যাদা ছিল না। এরপর আর কোন তিন ম্যাচের সিরিজে কোন দলকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের সামনে সেই সুবর্ণ সুযোগ ধরা দেয়। সুযোগটি ভালভাবেই কাজে লাগায় বাংলাদেশ। প্রথমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নেমে বিশ^সেরা হোয়াইটওয়াশ করে দেয়।