Search
Close this search box.

সিরিজ হারের লজ্জার পর স্বান্তনার জয় বাংলাদেশের

সিরিজ হারের লজ্জার পর স্বান্তনার জয় বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ : অভিষেক ওয়ানডেতেই বিধ্বংসী বোলিং করলেন এবাদত হোসেন। টানা দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখান। বিশেষ করে এ সিরিজে বাংলাদেশের আতঙ্ক হয়ে ওঠা সিকান্দার রাজাকে কোন রান করতে না দিয়েই ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন এবাদত। আর সেখানেই ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। শেষপর্যন্ত তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ১০৫ রানে জিতেও বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ হওয়া থেকে বেঁচে ১-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে তামিমবাহিনী। সিরিজ হারের লজ্জার পর স্বান্তনার জয় তুলে নেয়।

হারারে স্পোর্টস ক্লাবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেট ২০ ওভারে ২৫৬ রান করতে পারে বাংলাদেশ। শুরুতে এনামুল হক বিজয় ৭১ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৬ রান করে দলকে একটু টেনে নেন। শেষে আফিফ হোসেন ধ্রুব ৮১ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৮৫ রান করে দলকে আড়াইশ রানের উপরে নেন। না হলে এই রানও করা যেত না। জবাব দিতে নেমে ৩২.২ ওভারে ১৫১ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে তৃতীয় বলে ওয়েসলি মাধেভেরে ও চতুর্থ বলে সিকান্দার রাজাকে আউট করে দিয়ে বলতে গেলে ম্যাচ জেতান এবাদত। বাংলাদেশ যত রানই করুক, রাজা ব্যাটিংয়ে শেষপর্যন্ত টিকে থাকা মানে জিম্বাবুয়ের জয়। প্রথম দুই ওয়ানডেতে তাই হয়েছে। রাজাকে এবার একটি রানও করতে দেননি এবাদত। ম্যাচও বাংলাদেশ জিতে। এবাদত ২ উইকেট নেওয়ার সাথে মুস্তাফিজুর রহমান নেন ৪টি উইকেট। জিম্বাবুয়ের এনগারাভা অপরাজিত ৩৪ রান করেন। শেষ উইকেটে রিচার্ড এনগারাভা ও ভিক্টর নিওয়াউচি মিলে ৬৮ রানের জুটি গড়ে ইতিহাস রচনা করেন। হারা ম্যাচেও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসে ১০ম উইকেটে যে কোন দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি হয়। নিওয়াউচি ২৬ রান করেন।

অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নেমেই ঝলক দেখান পেসার এবাদত হোসেন। সিকান্দার রাজা দুটি ওয়ানডেতেই আউট করা যায়নি। তাতে করে ম্যাচও হারে বাংলাদেশ। ৯ বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ হারও হয়। এবার ওয়ানডের একাদশে প্রথমবার খেলার সুযোগ পেয়েই রাজাকে আউট করে দেন এবাদত। ইয়র্কারে রাজাকে বোল্ড করে দেন এবাদত। যেখানে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাকান রাজা, সেখানে এবাদত এক রানও করতে দেননি।

জিম্বাবুয়ের ইনিংসে ১৮ রান যোগ হতেই রাজার আউট হতেই চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। এই এক আউটেই যেন খেলা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই চতুর্থ বলে রাজাকে আউট করার আগের বলেই আবার ওয়েসলি মাধেভেরেকেও আউট করে দেন এবাদত। তাতেই জিম্বাবুয়ে এদিন শেষ হয়ে যায়। তার আগে হাসান মাহমুদ ও মেহেদি হাসান মিরাজের বোলিংয়ে আরও ২টি উইকেট পড়লে খাদের কিনারায় পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে।

দলের ৩১ রান হতে যখন ইনোসেন্ট কাইয়াকে (১০) আউট করে দেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম, ম্যাচে যে বাংলাদেশ জিততে যাচ্ছে, সেই ধারণা জন্মে যায়। দলের ৪৯ রানে যখন টনি মনইঙ্গাকে আউট করে দেন তাইজুল, জয় যেন অনেক কাছে চলে আসে। এরপর টপাটপ করে আরও তিনটি উইকেট ৮৩ রানের মধ্যে পড়ে যায়। মুস্তাফিজুর রহমানই তিনটি উইকেট নেন। শেষ একটি উইকেট পেতেই যেন বেগ পেতে হয় বাংলাদেশের।

ইতিহাস গড়া জুটি গড়েন রিচার্ড এনগারাভা ও ভিক্টর নিওয়াউচি। দুইজন মিলে ১০ম উইকেটে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসে ১০ম উইকেটে যে কোন দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি হয়। দলের ১৫১ রানে গিয়ে মুস্তাফিজই শেষ উইকেটটি নেন। এনগারাভা অপরাজিত ৩৪ রান করেন। নিওয়াউচি করেন ২৬ রান।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রতিটি ম্যাচেই ধুকেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ৩০০ রানের উপরে করা গেছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩০০ রানের কাছে করা গেছে। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে তো তাও করা যায়নি। যাবে কিভাবে? বিধ্বস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা আগে থেকেই তো মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে আছে। আবার ভুল বোঝাবোঝির স্রোতে যদি একের পর এক রান আউট হয়, তাহলে মজবুত স্কোর গড়া কী যায়?

দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয় মিলে এত সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ভুল বোঝাবোঝিতে রান আউট হয়ে গেলেন তামিম। দলের ৪১ রানে তামিম (১৯) আউটের পর মুহুর্তেই নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম সাজঘরে ফিরেন। ৪৭ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়েই খাদের কিনারায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। ৪১ থেকে ৪৭-এই ৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। এমন বিপদ থেকে দলকে রক্ষা করার কাজ করতে থাকেন বিজয় ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু সেঞ্চুরি যেন বাংলাদেশের অধরাই থেকে গেল। বিজয় ও রিয়াদ মিলে ৭৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। মনে করা হয়, অনেকদূর যাবেন। কিন্তু ৭৬ রান করতেই দলের ১২৪ রানে আউট হয়ে যান বিজয়।

বিজয় আউটের পর রিয়াদ ও আফিফ মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। ভালোই এগিয়ে যান। দলকে ১৭৩ রানে নিয়ে গিয়ে অবশ্য রিয়াদ আর টিকতে পারেননি। ৩৯ রান করে আউট হয়ে যান। এরপর একজন করে ব্যাটসম্যান আসেন, আর উইকেটে একটুক্ষন টিকে থাকে, আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন। কিন্তু আফিফ টিকে থাকেন। উইকেট আকড়ে থাকেন। চেষ্টা করতেই থাকেন। একটা সময় ২০০ রানও হয়ে যায়। ৫৮ বলে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন আফিফ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি করেন।

একদিকে আফিফ রান তুলতে থাকেন। আরেকদিকে রান তোলার চেষ্টা করতে থেকে আউট হতে থাকেন মেহেদি হাসান মিরাজ (১৪), তাইজুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান। তবে দমে যাননি আফিফ। তিনি শেষপর্যন্ত টিকে থেকে দলকে ২৬০ রানের কাছে নিয়ে যান। ব্যাটিংয়ে আফিফ শেষে হাল না ধরলে এত রান করা যেত না। তবে বোলিংয়ে আসল কাজের কাজটি রাজাকে আউট করে এবাদতই করেছেন। তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা রক্ষা পান। হোয়াইটওয়াশ থেকে দলও বাঁচে। তবে সিরিজ হারের লজ্জা আগেই মিলে। শুধু স্বান্তনার জয় মিলে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ